আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলে সেনাপ্রধান, ‘তুঙ্গে’ সেনা সদস্যদের মনোবল (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 4:45 pm | June 11, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চলমান করোনা যুদ্ধে নিজেদের প্রথাগত দায়িত্বের বাইরে এসে ক্লান্ত ও দু:খের ভারে নত মানুষের পাশে মানবতার উজ্জ্বল পরশ মাখিয়ে নির্ভকীচিত্তে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রত্যয়দীপ্ত হয়ে অন্ধকারের বিপরীতে দিয়েছেন নবতর চেতনায় আলোর ডাক।

আরও পড়ুন: মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা, পুলিশ-র‌্যাব-আনসারের প্রশংসা সেনাপ্রধানের (ভিডিও)

সুপার সাইক্লোন আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলে ঘরদোর মেরামত থেকে শুরু করে বাঁধ নির্মাণে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সহমর্মিতা ও হৃদ্যতার আলো বিলিয়েছেন। মলিন চেহারায় ফুটিয়ে তুলেছেন অনাবিল আনন্দের আবহ।

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবেই যুদ্ধের ময়দানে নিজ বাহিনীর সদস্যদের ‘রণকৌশল’ সাজিয়ে দিয়েই নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি জেনারেল আজিজ আহমেদ। করোনায় মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করেই তিনি রাজধানী ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার (১১ জুন) কপ্টারে ছুটে এসেছেন সাতক্ষীরায়।

সেখানকার উপকূল ঘুরে যাত্রা করেছেন খুলনার কয়রায়। যেখানে এসব এলাকার কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দিন-রাত একাকার করেই নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অকুতোভয় সেনা সদস্যরা।

সামনে থেকে নিজ বাহিনীর বীরত্বপূর্ণ সদস্যদের অনুপ্রেরণা জোগানোর পাশাপাশি ক্ষুরধার মস্তিষ্কে এক সুতোয় গেঁথেছেন সবাইকে। জীবন ঝুঁকিকে ধূলোয় মাড়িয়ে নিজ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি কঠোরতার পাশাপাশি স্নেহাশীষ মনোভাব, তাদের সার্বক্ষণিক মনোবল ধরে রাখতে বাড়তি রসদও জোগাবে সেনাপ্রধানের ঝটিকা উপকূল সফর।

নিজের বক্তব্যেও বাঁধ নির্মাণকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের মাধ্যমে কীভাবে সুন্দর সৌজন্যমূলক আচরণ করতে হবে, আত্নবিশ্বাসের সঙ্গে স্নায়ুর চাপ, ধৈর্য্য ও প্রতিকূল পরিস্থিতি মানিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে শক্ত মানসিকতা অটুট রাখতে হবে তাঁর কৌশলগত সমৃদ্ধময় নির্দেশনাও দিয়ে গেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

সাতক্ষীরা সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্যে এদিন বেলা ১১টায় স্পষ্ট ভাষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন, ‘এখানে ক্ষতিগ্রস্তদের (আম্পানে) মানবিক সহয়তা দিতে আমরা এসেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে আসিনি।

কাউকে বকা-জকা দিবো, এমনটি করা যাবে না। সবার সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে আমরা মানবিক কাজেই এখানে এসেছি।’

করোনা পরিস্থিতিতে আগে নিজের বাহিনীর সদস্যদের সুস্থতার ওপরই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন সেনাপ্রধান। বলেছেন, ‘একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা কাজ করছি। করোনার কারণে প্রটেকশন নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যদি করোনা না থাকত তাহলে সেনা সদস্যরা গেঞ্জি-হাফপ্যান্ট পরে কাজে নেমে পড়তো।

তবে করোনার কারণে সেটি হচ্ছে না। দুর্যোগে কিভাবে কাজ করতে হয় সেনা সদস্যরা সেটি জানেন। করোনা ম্যানেজমেন্ট কীভাবে করতে হবে সেগুলো সেনা সদস্যদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

ক্রান্তিকালে যে সকল সেনা জনগণের পাশে রয়েছে জনগণ তাদের মনে রাখবে।’

কপ্টারে ঢাকা থেকে সকাল ১০ টায় সাতক্ষীরায় পৌঁছার পরই নিজ বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন ও বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সেনাপ্রধান।

প্রথমেই সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো.হুমায়ুন কবির তাকে ব্রিফ করেন।

এ বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সরকার ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ইমার্জেন্সি রিপিয়ারের কাজ হাতে নিয়েছে। স্থায়ীভাবে সমাধানে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাও মন্ত্রণালয় নিয়েছে। জাতীয় যে কোন কাজ সেনাবাহিনীকে সরকার দিলে আমরা গর্ব বোধ করি।

আমাদের ওপর সরকার ও জনগণের আস্থা রয়েছে। কীভাবে কাজ করবো, কী কী সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কীভাবে দ্রুত শেষ করা যাবে এসব নিয়ে আমাদের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, যোগ করেন জেনারেল আজিজ।

বাঁধ রক্ষায় নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী নিবিষ্ট মনেই কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, ‘বাঁধ রক্ষায় এই মুহূর্তে লগ দরকার, বাঁশসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি দরকার হবে। সবকিছু পর্যাপ্ত পাওয়া নাও যেতে পারে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি।’

সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করতে সব সময় প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যে কাজটি করব সেটি চেষ্টা করব ভালোভাবে করার। জনগণের সেনাবাহিনীর উপর আস্থা রয়েছে। আমাদের প্রয়োজন স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা।

সেটি যদি আমরা পাই তাহলে কাজটি আমরা ভালোভাবে করতে পারবো। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেও সেটি নিয়ে ভাবতে হবে।’

দুর্যোগে বরাবরই ত্রাতার ভূমিকায় দেশের মানুষ পেয়েছে সেনাবাহিনীকে। অতীতের সেই ধারাবাহিকতায় করোনা মহামারি থেকে শুরু করে আম্পান মহাঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড উপকূলে প্রাণ ফেরাতে নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সেনা সদস্যরা।

এ বিষয়ে নিজেদের সার্বিক অবস্থান তুলে ধরে সেনাপ্রধান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৪৬০টি ঘর আমরা সংস্কার করে দিয়েছি। ১০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহযোগিতা দিয়েছি। খাবারের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকেও অনেককিছু করা হচ্ছে।’

সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এমন সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ১৬টি পানি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট রয়েছে। এর মধ্যে উপকূলে পানি সংকট নিরসনের জন্য তিনটি ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। আরও লাগলে সেটি আমাদের কাছে চাইতে হবে।’

কালের আলো/এসআর/এমএএএমকে