সামারায় সাম্বা-জাদু নাকি আরেকটি অঘটন?

প্রকাশিতঃ 7:34 pm | July 02, 2018

খেলা ডেস্ক, কালের আলো:

রাশিয়া বিশ্বকাপকে ইতিহাস কোথায় ঠাঁই দেবে, সেটা এখনও ভাবার বিষয় রয়েছে। ফেবারিটরা যেভাবে একের পর এক বিদায় নিয়েছে, তাতে এটাকে অঘটনের না বলে পাগলাটে বলাই ভালো। তবুও ফুটবলপ্রেমীদের ভরসা, অন্তত ফেবারিট দুটি দেশ তো রয়েছে। ফ্রান্স ইতোমধ্যেই উঠে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। ব্রাজিলের সামনে এখনও বাধা মেক্সিকো। আজ রাত ৮টায় মেকিস্কোর বিপক্ষে সামারা এরেনায় খেলতে নামছে ব্রাজিল। ব্রাজিলের সাম্বা ফুটবলের ছন্দ দেখতেই এখন অধীর আগ্রগে অপেক্ষা করছে পুরো ফুটবল বিশ্ব।

আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ম্যাচের দিন চিত্রটা বেশি দেখা গিয়েছিল। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় খেলা বলে সন্ধ্যার আগেই মানুষের ঘরে ফেরার তাড়া। টিভির সামনে বসে পড়ে খেলা শুরুর অধীর আগ্রহ। বড় বড় জায়গাগুলোতে জায়ান্ট স্ক্রিণে খেলা দেখার আয়োজন এবং হাজার হাজার মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আর্জেন্টিনা-স্পেনের বিদায়ের পর বড়দের আশা টিকিয়ে রেখেছে কেবল ব্রাজিল। মেক্সিকোর বিপক্ষে ব্রাজিলের এই ম্যাচ দেখতেও মানুষ ঘরে ফিরছে তাড়াতাড়ি। জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে বাড়ছে ভিড়। সাম্বা জাদু দেখার অপেক্ষায় সবাই।

গত আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, স্পেন। যেভাবে ‘বড়’ এবং ‘ছোট’ দলের মধ্যে ফারাক কমছে, তাতে রাশিয়া বিশ্বকাপকে অঘটনের বিশ্বকাপ হিসেবে চিহ্নিত করছে ফুটবল মহল। এখানেই থাকছে শঙ্কা। কিছুক্ষণের মধ্যেই যে সামারা এরেনায় মেক্সিকোর বিরুদ্ধে নামছে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল! অঘটনের কাপ-যুদ্ধ এই ম্যাচকেও প্রভাবিত করবে না তো? শঙ্কাটা থেকেই যাচ্ছে।

ব্রাজিল ক্রমশ ফিরেছে ছন্দে। সুইত্জারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ড্র দিয়ে শুরু হয়েছিল অভিযান। দ্বিতীয় ম্যাচে কোস্টারিকার বিরুদ্ধে জয় এসেছিল অন্তিম লগ্নে। সার্বিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ব্রাজিলকে অবশেষে দেখা গেছে স্বমহিমায়। ফুটবলাররা ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরেছেন বলেই আশা বাড়ছে সমর্থকদের।

ব্রাজিলের সুবিধা হল, কোনো একজনের ওপর নির্ভরশীল নয় দলটি। আর্জেন্টিনা বা পর্তুগাল পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ওপর। ব্রাজিল কিন্তু নেইমারকে ততটা চাপে রাখছে না। স্ট্রাইকার হিসেবে খেলা গ্যাব্রিয়েল হেসুস গোলহীন থাকলেও আসছে জয়। বলা হচ্ছে, কৌতিনহোই ব্রাজিলের মূল তারকা। স্বয়ং কৌতিনহো আবার টিমগেমের পতাকা উড়িয়েছেন। বলেছেন, সবাই দায়িত্ব পালন করছে বলেই ব্রাজিল দল হিসেবে এখন অনেক পরিণত।

চার বছর আগের ব্রাজিল কিন্তু পুরোপুরি নির্ভর করেছিল নেইমারের ওপর। এবার তিনি চোট সারিয়ে ফিরেছেন। ছন্দে পুরোপুরি ফেরেননি; কিন্তু, সতীর্থরা তা বুঝতে দিচ্ছেন না। ফলে, পুরো দলকে টানতে হচ্ছে না ব্রাজিলের দশ নম্বর জার্সিধারীকে। ব্রাজিলের সমস্যা হল রক্ষণ। মার্সেলো ও ফ্যাগনার, দু’জনেই আক্রমণে উঠতে ভালোবাসেন। ফলে, রক্ষণে ফাঁকা জায়গা পড়ে থাকছে। সার্বিয়ার বিরুদ্ধে মার্সেলো আবার চোটও পেয়েছিলেন। মেক্সিকোর আক্রমণ বেশ শক্তিশালী। কার্লোস ভেলা, হার্ভিং লোজানো, হ্যাভিয়ের ‘চিচারিতো’ হার্নান্দেজরা রক্ষণের ফাঁকা জায়গা কাজে লাগানোর ক্ষমতা রাখেন।

প্রথম ম্যাচে জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল মেক্সিকো। সেই ম্যাচে কাউন্টার অ্যাটাকে জোর দিয়েছিলেন কোচ হুয়ান কার্লোস অসরি। ব্রাজিলের বিরুদ্ধেও তিনি সম্ভবত পাল্টা আক্রমণ নির্ভর ফুটবলই খেলতে চাইবেন। তবে গ্রুপের শেষ ম্যাচে সুইডেন ৩ গোলে হারিয়েছিল মেক্সিকোকে। দক্ষিণ কোরিয়া শেষ ম্যাচে জার্মানিকে হারানোয় নকআউটের টিকিট মেলে মেক্সিকোর। অসরি সেই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। তবে তিন গোল হজম প্রশ্ন তুলে দিয়েছে মেক্সিকো রক্ষণ নিয়েও।

মেক্সিকোর বড় ভরসা হলেন গোলরক্ষক গুইলেরমো ওচোয়া। চার বছর আগে ব্রাজিলকে গ্রুপের ম্যাচে তিনি একাই জিততে দেননি। এবারও ওচোয়া মেক্সিকো রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী। নেইমার, তৌতিনহো, উইলিয়ানদের তাই খেলতে হবে বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল। ক্যাসেমিরোর ওপর আবার মাঝমাঠেই বিপক্ষ আক্রমণকে রুখে দেওয়ার দায়িত্ব থাকছে।

সামারায় সাম্বা-জাদু কি মন্ত্রমুগ্ধ করবে মেক্সিকোকে়? নাকি, আরও এক অঘটনের সাক্ষী হবে রাশিয়া বিশ্বকাপ? অপেক্ষা আর কিছুক্ষণের।