ভবিষ্যত পরিকল্পনায় উজ্জ্বল নবীন সেনারা, পথনির্দেশকের ভূমিকায় জ্ঞানোদ্দীপক উপস্থাপন সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 8:24 pm | June 18, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
মেধার সঙ্গে নিরলস শ্রম, কঠোর অভিনিবেশ আর অসামান্য পেশাদারিত্বের মাধ্যমে নিজেদের গড়ে তুলেছেন। নিজেদের স্বপ্ন, অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা স্থির করেই সামিল হয়েছেন তীব্র আকাঙ্খিত সেই মাহেন্দ্রক্ষণে। ক্যাডেট কমিশন লাভ করেছেন ২৫৫ জন উজ্জ্বল কৃতি সেনা অফিসার।
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) ৭৮ তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্স এবং ৫৩তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশন প্রাপ্তির অনাড়ম্বর এ অনুষ্ঠানে অদম্য পরিণত মেধাবী নবীন কর্মকর্তাদের পথনির্দেশকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
নিজের স্বীয় কর্ম ও কীর্তির ধারাবাহিকতায় সহজ, সাবলীল ও স্বাভাবিকভাবেই পেশাদারিত্বের গভীর নির্যাসে প্রযত্ন ও দূরদৃষ্টির পরিচয়বহ, নির্মোহ বস্তুনিষ্ঠ, দিক নির্দেশনামূলক এবং সুমিত ভাষায় জ্ঞানোদ্দীপক এক দীর্ঘ বক্তব্যই উপস্থাপন করলেন সেনাপ্রধান।
অন্তরমথিত ভালোবাসায় সেই বক্তব্যে রয়েছে কালের বিবর্তনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় শক্তিশালী ও সক্ষম সেনাবাহিনী, দেশপ্রেম ও সাহসিকতার সঙ্গে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, একুশে শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি, নিজ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্য পরিপাটিভাবে উঠে এসেছে।
তেমনি প্রকৃত সৈনিক হিসেবে কীভাবে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে, কীভাবে গভীর দেশপ্রেম, সাহসিকতা, শৃঙ্খলা, সত্যনিষ্ঠা ও পেশাগত জ্ঞানের সঠিক সমন্বয় ঘটাতে হবে, কোন কিছুই যেন বাদ পড়েনি দেশপ্রেমিক এই বাহিনীতে সততা, নিষ্ঠা ও মূল্যবোধের অনন্য এক শিক্ষাচিন্তকের প্রাঞ্জল বক্তব্যে।
যুক্তিবোধ, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতার নিরবচ্ছিন্ন চর্চার আলোকেই সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি শক্তিশালী ও সক্ষম বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত প্রায়।’
‘সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্ত প্রতীক হিসেবেই সর্বদাই দেশপ্রেম ও সাহসিকতার সাথে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে কেউ হুমকির মুখে ফেলে তাহলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত এবং সক্ষম।’
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিস্থ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) ৭৮তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্স এবং ৫৩তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলছিলেন এসব কথা।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ৭৮তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্স এবং ৫৩ বিএমএ স্পেশাল কোর্সের ২৫৫ জন অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ২৩১ জন পুরুষ ও ২৪ জন মহিলা অফিসার রয়েছেন, যারা সেনাবাহিনীর চলমান ‘অপারেশন কোভিড শিল্ড’-এ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবেন।
এদিন সকালে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস.এম.শফিউদ্দিন আহমেদ, বিএমএ’র কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মতিউর রহমান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
সেনাপ্রধান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতি ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ঘটনা মিলিটারি একাডেমির উদ্বোধন
‘স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কঠিন সংগ্রামের মধ্যেও দেশের জন্য একটি আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলার উপর জোর দেন’ বলছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনী কোন মূল্যবোধকে ধারণ করে গড়ে উঠবে সে ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর সেই দিক নির্দেশনাসমূহ সঠিকভাবে অনুধাবন করা এবং সেই অনুযায়ী সেনাবাহিনীকে গড়ে তোলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
১৯৭৪ সালে, কুমিল্লা সেনানিবাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির শুভ উদ্বোধন করেন; যা ছিল এক ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ঘটনা।’
কৃতি ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমান, বিদায়ী ক্যাডেটদের পেশাগতভাবে দক্ষ, নৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন ও দেশপ্রেমের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্ননিয়োগ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, যা তোমরা কিছুক্ষণ আগেই শুনেছ।
তোমাদের মনে রাখতে হবে যে, বঙ্গবন্ধু কেবল স্বপ্নদ্রষ্টাই নন, স্বপ্ন বাস্তবায়নেও তাঁর দক্ষতা দৃষ্টান্তমূলক। তাই আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, কেবল কথা নয় বরং মহান এই নেতার দিক নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করা সম্ভব।’
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত সেনাবাহিনী
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশপ্রেম, প্রশিক্ষণ, আধুনিক সরঞ্জাম এবং দৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তিতে বলীয়ান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মেনেই সেনাবাহিনীর অভিযান পরিকল্পনায় জনগণকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে যা আমাদের সমরনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে রণাঙ্গনেই অভ্যূদয় হয়েছিল আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর। জাতির পিতার নির্দেশনায় প্রণীত হয় ‘প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪’ এবং পরবর্তীতে এই নীতির উপর ভিত্তি করেই ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ ও জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি ২০১৮ প্রণীত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমাদের সেনাবাহিনী আজ একটি শক্তিশালী ও সক্ষম বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত প্রায়।’
গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য সেনাবাহিনীর
সেনাপ্রধান বলেন, মানবতার সেবায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধ্বস ইত্যাদিক প্রাকৃতিক কিংবা অন্য যেকোন মানবস্ষ্টৃ দুর্যোগে দেশবাসীর আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদাই আবির্ভূত হয়েছে একান্ত আপনজন হিসেবে।
আমাদের প্রিয় সেনাবাহিনীর এই পরিচয় দেশের গন্ডি পেরিয়ে আজ বিশ্বব্যাপী সর্বজনবিদিত। অপারেশন কোভিড শিল্ডে সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বহু পরিবার উপকৃত হয়েছে এবং দেশবাসী কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে।’
ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমির স্বাধীনতাকে অক্ষুন্ন রাখার প্রত্যয়ে একটি দক্ষ, আদর্শ ও আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আধুনিক বিশ্বের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয়ের সুষ্ঠু প্রশিক্ষণের জন্য একাডেমিতে সকল প্রকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, উন্নত ও যুগোপযোগী এই শিক্ষা ব্যবস্থা ভবিষ্যতে তোমাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।’
ক্যাডেটকদের উদ্দেশ্যে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘদিনের কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তোমরা যে সামরিক ও একাডেমিক জ্ঞান অর্জন করেছ তা ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে প্রয়োগ করবে। দেশ সেবার মহানব্রত নিয়েই তোমরা স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছ।
কাজেই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে যথাযথ দায়িত্ব পালন করাই হবে তোমাদের মূল লক্ষ্য।’
সেনাবাহিনী একটি সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা
সেনাপ্রধান ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘তোমরা যে সুমহান পেশায় নিয়োজিত হতে চলেছ তা মানব সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন পেশা। শত বছরের ঐতিহ্য এই পেশার অন্যতম চালিকা শক্তি। মনে রাখবে সেনাবাহিনী কেবল একটি পেশাই নয় বরং একটি সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা।
ইংরেজিতে আমরা যাকে বলি ‘আর্মি ইজ এ ওয়ে অফ লাইফ’। এই জীবন ব্যবস্থার সব কিছুই বাইরের জীবন থেকে কিছুটা স্বতন্ত্র। একজন অফিসার হিসেবে যত দ্রুত তুমি এই জীবন ব্যবস্থাকে আত্নস্থ করতে পারবে, তত দ্রুত তুমি একজন সফল অফিসার হিসেবে আত্নপ্রকাশ করতে পারবে।’
নিজেকে প্রমাণ করতে হবে প্রকৃত সৈনিক হিসেবে
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মূলমন্ত্র ‘সমরে আমরা শান্তিতে আমরা সর্বত্র আমার দেশের তরে’।
অর্থাৎ, সর্বাবস্থায় তোমাকে দেশ ও মানুষের প্রয়োজনে প্রস্তুত থাকতে হবে। তোমরা কিছুক্ষণ আগেই সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণ করেছ যে, তোমরা জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে যেখানেই যাবার আদেশ করা হবে সেখানেই যাবে।’
‘সেনাবাহিনীর মূলমন্ত্র’ এবং আজকে তোমরা যে ‘শপথ’ গ্রহণ করলে কর্মক্ষেত্রে এই দু’টি বিষয় সর্বদাই তোমাদের পাথেয় হিসেবে থাকবে। এই দু’টি বিষয়কে অন্তরে ধারণ করা ও কার্যক্ষেত্রে এর প্রতিফলনের মাধ্যমেই একজন প্রকৃত সৈনিক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে, বলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন সেনাপ্রধান। ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তোমরা সবাই জান যে, সারা বিশ্ব আজ কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত। মানব সভ্যতা আজ সত্যিকারের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
আমাদের দেশেও এই মহামারী আঘাত হেনেছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা করোনা সঙ্কটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। ফলশ্রুতিতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী করোনা যুদ্ধে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে সারা দেশে বিভিন্ন জনমুখী ও বাস্তবধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
অদৃশ্য এই শত্রুকে মোকাবেলায় সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। দায়িত্ব পালনকালে আমাদের অনেক সদস্যও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘এমন কঠিন বাস্তবতায় আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে ‘সুপার সাইক্লোন আম্ফান’। যার ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের জীবনে নেমে আসে অবর্ননীয় দূর্দশা। বরাবরের মতো এবারও তাদের সাহায্যে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
পবিত্র রজমান মাসের রোজা ও ঈদের দিনেও নিজের পরিবার পরিজনকে ফেলে দেশ মাতৃকার সেবায় সেনাবাহিনী আত্ননিবেদন করেছে। সেনা সদস্যগণ তাদের নিজেদের পরিবারে করোনা আক্রান্ত বা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত আপজনকে ফেলে সেনাবাহিনীর মূলমন্ত্রকে বুকে ধারণ করে নিজ শপথ রক্ষার নিমিত্তে আত্ননিবেদন করে চলেছে। তোমাদেরকেও এই মহৎ উদাহরণ অনুসরণ করতে হবে।’
শৃঙ্খলা সেনাবাহিনীর প্রাণ
‘শৃঙ্খলা’ সেনাবাহিনীর প্রাণ এবং ‘আনুগত্য’ সেনাবাহিনীর চালিকাশক্তি, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই নিজের বক্তব্যে বলছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মনে রাখবে তোমাকে তোমার উপরস্থ, অধীনস্থ ও সহকর্মীদের সকলের প্রতিই অনুগত থাকতে হবে।
দেশের সংবিধান ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য একজন সেনা অফিসারের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের অংশ। পেশাগত জীবনে দায়িত্ব পালনে গুরুত্বারোপের ক্ষেত্রে তোমরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বাগ্রে বিবেচনা করবে। তারপর বিবেচনা করবে তোমার অধীনস্থদের সম্মান, কল্যাণ ও প্রশান্তি এবং সবশেষে থাকবে তোমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য।
এই বিশ্বাস যখন তুমি তোমার অভ্যাসে রূপান্তর করতে পারবে তখনই কেবল তুমি একজেন স্বার্থক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হবে। সেনাবাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে দেশ সেবার যে বিরল সুযোগ তোমরা পেয়েছে তার জন্য সদা সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
মনে রাখবে, সেনাবাহিনীকে যথাযথ কাজের মাধ্যমে আমাদের সরকার ও দেশের আপামর জনগণের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। তবেই তোমরা সফলকাম হবে।’
হতে হবে বিনয়ী ও সংবেদনশীল
প্রশিক্ষণ সমাপনকারী ক্যাডেবৃন্দের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, ‘তোমরা আজ তোমাদের কাঙ্খিত কমিশন অর্জন করতে চলেছ। কমিশন প্রাপ্তির এ শুভক্ষণে আমি তোমাদের কিছু কথা বলছি যা তোমরা সারাজীবন স্মরণ রাখবে।
জীবনে চলার পথে যত উচ্চ পদে তুমি আসীন হবে, তোমাকে তত বেশি বিনয়ী ও সংবেদনশীল হতে হবে। অন্যের কথা, বিশেষত: তোমার অধীনস্থ সৈনিকদের সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং তাদের ও তাদের পরিবারের সার্বিক কল্যাণ তোমাকে নিশ্চিত করতে হবে।
এর পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যে, বিনয় ও দুর্বলতা এক জিনিস নয়। জীবনে চলার পথ সবসময় মসৃণ নাও হতে পারে। জীবনের ক্রান্তিকালেও অন্যায়, অবিচার, লোভ বা হিংসার বশবর্তী না হয়ে দেশমাতৃকার সেবার ব্রত স্মরণ করে তোমাকে নৈতিক দৃঢ়তা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।’
সমন্বয় ঘটাতে হবে দেশপ্রেম ও সাহসিকতার
সেনাপ্রধান বলেন, ‘অফিসার হিসেবে নিজের মধ্যে দেশপ্রেম, সাহসিকতা, শৃঙ্খলা, সত্যনিষ্ঠা ও পেশাগত জ্ঞানের সঠিক সমন্বয় ঘটাতে হবে। তাহলেই কেবল একজন অফিসার প্রকৃতপক্ষেই আদর্শ নেতৃত্ব প্রদান করতে পারবে।
তবে এই গুণাবলীসমূহের সমন্বয় কোন সহজ কাজ নয়। এজন্য তোমাদের প্রত্যেককে নিজেদের দূর্বলতা ও সক্ষমতা সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতায় কেবল বহি:শত্রুর আক্রমণ থেকেই নয় বরং মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হয়।
তোমরা যদি নিজেদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোল তাহলেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অতীতের মতো ভবিষ্যতেও দেশের সকল সঙ্কটে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তোমাদের পিতামাতা ও পরিবারের সদস্যদের প্রতিও তোমাদেরকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা সেনাবাহিনীর সদস্যগণ এই দেশেরই বৃহত্তর সমাজের অংশ। তাই আমাদের সার্বিক কর্মকান্ডে সর্বদাই আদর্শ, মানবিকতা ও সহমর্মিতার প্রতিফলন থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন- পেশাদারিত্বের সঙ্গেই করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার সেনাপ্রধানের
কালের আলো/এমএএএমকে/ওএইচ