আইজিপির সঙ্গে ওসিদের ‘ওয়ান টু ওয়ান’; পুলিশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব এক উদ্যোগ (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 8:34 pm | July 09, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
রবীন্দ্রনাথের ‘শেষ লেখা’ কাব্যগ্রন্থের ‘রূপ নারানের কূলে’ কবিতার বিখ্যাত উক্তি ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম’। হয়তো এ উক্তিই নিজের হৃদয়তন্ত্রিতে গেঁথেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)।
আরও পড়ুন: ‘অঙ্গীকার’ আইজিপির নির্দেশনা বাস্তবায়ন; ঐকান্তিক মিলনের শপথে ডিএমপি কমিশনার
থানাকে সেবার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপ দিতে এবং ‘জনতার পুলিশ’ হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়া গর্বিত বাহিনীটিকে আমুল বদলে দিতেই তিনি এবার নতুন কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
পুুলিশের ভাবমূর্তি সুপ্রতিষ্ঠায় থানার অফিসার ইনচার্জদেরই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।
নিজের কঠিন মিশন বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো তিনি দেশের ৬৬০ টি থানার অফিসার ইনচার্জদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আইজিপি ওসি ‘ওয়ান টু ওয়ান’ আলাপ দেশের পুলিশের ইতিহাসে অচিন্তনীয় ও অভূতপূর্ব এক উদ্যোগ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
সৃজনে-মননে প্রতিক্ষণ নব আয়োজনের দীপ্তিতে ভাস্বর পুলিশের আইজি ড.বেনজীর প্রকৃত অর্থেই যেন বিশ্বকবির ‘রূপ নারানের কূল’ কবিতাটিকেই সামনে এনেছেন। ইতিবাচকতার অভিমুখে উৎসাহিত করেছেন ‘থানার প্রাণ’ অফিসার ইনচার্জদের।
আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘৬৬০ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হলো বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিচ্ছবি। আপনাদের ওপরই বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি নির্ভর করে।
আপনাদেরকে এমনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে যাতে জনগণ আপনাদের উপর আস্থা রাখতে পারে। আপনাদের প্রত্যেককে একজন ‘সোশ্যাল লিডার’ হিসেবে সম্মান করে।’
শুধু কী তাই? সাধারণ মানুষকে নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে পুলিশকে বেরিয়ে আসারও তাগিদ দিয়েছেন পুলিশ প্রধান। বলেছেন, ‘শারীরিক শক্তি ব্যবহার না করে আইনি সক্ষমতা ও মানবিক মূল্যবোধের মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১ থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘন্টা দেশের ৬৬০ থানার সকল অফিসার ইনচার্জের সঙ্গে এ ভিডিও কনফারেন্সে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যে যে কোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়টি তুলে ধরেন।
পুলিশে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বরাবরই উচ্চকন্ঠ বাস্তব ও প্রায়োগিক অভিজ্ঞতায় মহীরুহসম ব্যক্তিত্বময় আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ।
নিজের শিরদাঁড়া সোজা করেই থানার অফিসার ইনচার্জদের কঠোর বার্তার পাশাপাশি একটি সুসংবাদও দিয়েছেন।
বলেছেন, ‘আপনারা নিজে অবৈধ উপায়ে কোন অর্থ উপার্জন করবেন না। অন্য কাউকে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের সুযোগও করে দিবেন না।
কোনো ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাও আপনাদের কাছে ঘুষ বা মাসোয়ারা চাইলে তা আমাকে নির্ভয়ে জানান। আমি ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে দেখবো।’
দেশের পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের তৃণমূলের কারিগরদের হৃদয়ে জল-কল্লোলিত এক প্রাণাবেগ সৃষ্টি করেছেন পুলিশ প্রধান ড.বেনজীর আহমেদ।
ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরার এ স্বার্থক রূপকার থানার অফিসার ইনচার্জদের চেতনার মর্মমূলে সততার সঙ্গেই স্বাধীন ও নিরপেক্ষতায় সত্যান্বেষণের নিত্য লড়াইয়ের সংকল্পই যেন মস্তিষ্কে গেঁথে দিয়েছেন।
এজন্যই পুলিশ প্রধান উচ্চারণ করেছেন ‘বর্তমানে সরকারি বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সুন্দরভাবে জীবন চালানো যায়।
একজন সরকারি কর্মচারীর ব্যয় হতে হবে তার বৈধ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে বিলাসী জীবন-যাপনের স্থান পুলিশের চাকরি নয়। দুর্নীতিবাজরা পুলিশে থাকতে পারবে না। বড়লোক হতে চাইলে তারা পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করুক।’
ড.বেনজীর সর্বক্ষণ জাগরিত আছেন পুলিশ সদস্যদের চৈতনের সরণীতে, পুলিশকে উত্তরণের প্রতীতি ও প্রত্যয়ে। ফলশ্রুতিতে করোনা যুদ্ধে পুলিশের অনন্য ভূমিকার কথাও থানার অফিসার ইনচার্জদের স্মরণ করিয়ে দেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।
বলেন, ‘গত তিন মাসে পুলিশ জনগণের সাথে থেকে জনগণের কল্যাণ ও সুরক্ষার জন্য যা করেছে তা সত্যিই অভূতপূর্ব। জনগণ পুলিশকে এর প্রতিদানও দিয়েছে। পুলিশ মানুষের অগাধ বিশ্বাস, সম্মান ও আস্থা অর্জন করেছে।
মানুষ পুলিশকে তাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দিয়েছে। যে মর্যাদা, যে সম্মান মানুষ পুলিশকে দিয়েছে তা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনাকালে বিশ্বজুড়ে মানবিকতার অনন্য এক উদাহরণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ পুলিশ। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের যে স্থানে পুলিশ পৌঁছেছে সেখানেই স্থায়ী আসনেরও চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন এ পুলিশ প্রধান।
তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ গত তিন মাসে যেখানে গিয়েছে সেখান থেকে আর পেছনে ফিরে যাবে না। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে জনগণের পুলিশ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’
পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রাযুক্তিক শ্রেষ্ঠত্ব, দক্ষতা, নিষ্ঠা, সততা আর কমিটমেন্টের প্রাগ্রসরতার অধিকারী একজন মানুষ ড.বেনজীর আহমেদ।
স্বভাবশান্ত ও মিতভাষী এ মানুষটি মনে করেন ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী দেশকে সারা বিশ্বের একটি বিস্ময়ে পরিণত করেছেন।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন, অসাম্প্রদায়িক আধুনিক চেতনায় দেশকে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছা ও অনুপ্রেরনায় বাংলাদেশকে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত করতে আমরা সবাই কাজ করছি, এমনটি জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ পুলিশ হবে দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত। দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের কোনো সদস্য মাদক গ্রহণ করবে না, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হবে না। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। পুলিশকে হতে হবে মাদকমুক্ত। আমরা বাংলাদেশকে ‘মাদকমুক্ত’ করতে চাই।
৩২ বছরের বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনের এ পর্যায়ে পুলিশের সর্বোচ্চ পদে নেতৃত্বে এসে নিজ বাহিনীকে ঈর্ষণীয় শীর্ষ-মেরুতেই ক্রমশ নিয়ে যাচ্ছেন ড.বেনজীর আহমেদ। তবে কোন রকমের হাঁকডাক করে নয়।
মাপা অঙ্ক, ভিতরে প্রবল ইচ্ছাশক্তিকে লালন করে নিজের সম্মোহনী শক্তির মিশেলে বারবারই অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন ৩০ তম এ পুলিশ প্রধান।
আইজিপি বলেন, ‘পুলিশকে আমরা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে চাই। বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশি সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা জনগণের পুলিশ হয়ে জনগণের সাথে থাকতে চাই।’
তিনি বলেন, পুলিশ অফিসার ও ফোর্সের জন্য বর্তমানে প্রচলিত কল্যাণ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে তাদের চিকিৎসা, সন্তানদের লেখাপড়া, আবাসন এবং অবসর পরবর্তী সময়েও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সৎ ও স্বচ্ছ উপায়েও যেনো পুলিশের প্রত্যেক সদস্য জীবন যাপন করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সদস্যদের জন্য কল্যাণ পরিকল্পনা তৈরী করা হচ্ছে।’
কালের আলো/আরআই/এমএএএমকে