প্রধানমন্ত্রীর ‘ভূয়া ছবি’ ব্যবহার; বাংলাদেশ নিয়ে ফের ষড়যন্ত্রে সুবীর ভৌমিক!

প্রকাশিতঃ 6:33 pm | July 31, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে আজগুবি ও বানোয়াট গল্প তৈরি করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এবার নতুন করে অপতৎপরতা শুরু করেছেন বিবিসির সাবেক ভারতীয় সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক।

এক্ষেত্রে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে রীতিমতো জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। এবার তাদের প্রোপাগান্ডার সরাসরি লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে করোনা ও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ১৫ মিনিট কথা বলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীরে পাকিস্তানের আগ্রহের জেরে জেরবার হয়েছেন ‘গুজব ভাইরাস’ হিসেবে পরিচিত সুবীর।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অফিসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাস্যেজ্জ্বল হ্যান্ডশেকের এমন একটি ছবি ফটোশপে কারসাজির মাধ্যমে নিজেদের অখ্যাত ও আনাড়ি দ্য ওয়েস্টার্ন লিংকে প্রকাশ করেছেন।

অথচ গত কয়েক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনও পাকিস্তান সফর করেননি। এমনকি ইমরান খান পাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও কোন সফরে যাননি প্রধানমন্ত্রী।

কিন্তু জোড়াতালি দিয়ে নিজেরাই এমন ছবি তৈরির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উজ্জ্বল ভাবমূর্তি বিনষ্টের অপচেষ্টা করেছেন।

মূলত মোদি সরকারকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে উসকানি দিতেই ‘গোয়েবলস ষ্টোরি’ প্রচার করছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধী চক্রের হরিহর আত্নার সুবীর ভৌমিক।

বারবার বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল ও দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই যুক্তরাজ্যে পলাতক ও দন্ডিত বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ‘গোপন সমঝোতা’ করেছেন এই কুখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক।

সূত্র মতে, সুবীর একটি নির্দিষ্ট টার্গেট নিয়েই কখনও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা আবার কখনও নারী কেলেঙ্কারীসহ নৈতিক স্খলনের দায়ে সব সেনানিবাসে পিএনজি অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর সঙ্গেও ‘গাঁটছড়া’ বেঁধেছেন।

বিপদগামী সুবীর যেনতেন ওপায়ে হলেও প্রধানমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুন্ন করার পাশাপাাশি তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়কেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে টার্গেট করে ‘ভূয়া ছবি’ ব্যবহার করে জোর গুজব ছড়াচ্ছেন।

এই ছবি দুইটি থেকেই ফটোশপের মাধ্যমে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে একত্র করা হয়েছে।

দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পাকি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মধ্যকার হ্যান্ডশেকের ছবির ঠিক পেছনেই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ছবি শোভা পাচ্ছে।

আসলে বিভ্রান্তি ছড়ানো এ ছবিটি ‘বদ’ মস্তিষ্কের সুবীর গংরা নিজেরাই তৈরি করেছেন।

প্রকৃত অর্থে ইমরানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিটি আদৌ ঠিক নয়। এখানে ব্যবহৃত প্রধানমন্ত্রীর ছবিটি ২০১৭ সালের জি ৭ শীর্ষ সম্মেলনের। সেদিন প্রধানমন্ত্রী জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সাথে বৈঠক থেকে বেরিয়ে ছবিটি তুলেছিলেন।

সেই ছবিটিই মূলত কপি করে ফটোশপের মাধ্যমে সুকৌশলে ইমরান খানের সঙ্গে বসানো হয়েছে।

আর ইমরান খানের ছবিটি ২০১৮ সালের। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শুরুর সময় ওই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইমরানের হ্যান্ডশেকের এ ছবিটি তোলা হয়েছিল।

দু’টি প্রকৃত ছবিই কালের আলোর হাতে রয়েছে। সেসব ছবি ও ওই সময়কার ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করেই মতলাববাজ সুবীর চক্রের ভয়াবহ জালিয়াতির এমন তথ্য মিলেছে।

সূত্র মতে, সুবীরের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক বেশ পুরনো। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি কিছু ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিএনপির প্রচার সহজ করতে সহায়তা করেছিলেন। মূল টার্গেট ছিল বিএনপি’র জয় নিশ্চিত করা।

একই সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংস্থা ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উলফা)’র সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন সুবীর।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার মূলোৎপাটন করেন এবং স্পষ্টভাবেই বারবার ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশের মাটি কোন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সন্ত্রাসীদের জন্য ব্যবহৃত হতে দেওয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেবল কথার কথা বলেননি। তিনি কাজে কর্মেও নিজের অঙ্গীকার রক্ষা করেছেন। উলফা প্রধান অনুপ চেটিয়াসহ সন্ত্রাসী চক্রকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশের মাটি থেকে এ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে উচ্ছেদ করেছেন।

ফটোশপ করা ছবি ও প্রকাশিত পত্রিকার স্ক্রিণশট

আরও জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের সংবাদ মাধ্যম মিজ্জিমা তে সুবীর ভৌমিক ভয়ঙ্কর ও মনগড়া মিথ্যাচার করেন। ওই সময় তিনি লিখেন- ‘বিপথগামী এসএসএফ’র ৬/৭ জন সদস্য দ্বারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র।’

দেশের সবচেয়ে প্রশিক্ষিত ও গর্বের বাহিনীকে নিয়ে মিথ্যার বেসাতি করায় ওই সময় কড়া বিবৃতি প্রকাশ করে সরকার। মূলত সরকার ও প্রশিক্ষিত বাহিনীর মধ্যে দূরত্ব তৈরির পায়তারা করতেই সুবীর নিজেই এই গল্পের ‘স্ক্রিপ্ট’ প্রস্তুত করেছিলেন।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জুনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং তারেক রহমানের উপদেষ্টা ও দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভারতের মন গলাতে গোপনে সেদেশ সফর করেন।

সফরে তারা ক্ষমতাশীল বিজেপিসহ কিছু রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিশ্লেষকের সঙ্গে দেখা করেন বলে তখন বিবিসিসহ ভারতীয় গণমাধ্যম খবর প্রচার করে।

বিএনপি আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির দ্য হিন্দুকে দেয়া এক মন্তব্য এ বলেন, বিএনপি আমলগুলোতে ভারত ও বাংলাদেশের খারাপ সম্পর্ককে ভুল নীতি হিসেবে আখ্যা দেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলো চীন-রাশিয়া ভ্রমণ করছেন রাজনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য।

কিন্তু প্রশ্নটা উঠে যখন সফরটা গোপনে হয়। যুক্তরাজ্যে পলাতক ও দন্ডিত তারেকের নির্দেশে গুটিকয়েক ব্যক্তির সঙ্গে আঁতাত করতেই সেখানে গিয়েছিলেন তারা। আর এর নেপথ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন এই কুখ্যাত মিডিয়া সন্ত্রাস সুবীরই।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, সুবীর কয়েক দফা দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়েও মিথ্যা প্রচার-প্রোপাগান্ডা ছড়াতে শুরু করেন। মোটা অঙ্কের রফায় তারেক-ড.কামাল চক্রের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সুশৃঙ্খল ও আনুগত্যের প্রতীক সেনাবাহিনীর ‘চেইন অব কমান্ড’ ভাঙতে গুজব ছড়াতে থাকেন।

এক্ষেত্রে তারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগান। তারেকের ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবেই সিনহার সমঝোতায় সেনাবাহিনী নিয়ে আজগুবি মিথ্যাচার করেন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দী।

জামায়াত-বিএনপি’র পলাতক দুই কথিত সাংবাদিক এ মিশন বাস্তবায়নে দায়িত্ব কাঁধে নিলেও সেনাবাহিনীর হাই কমান্ডের সময়োপযোগী পদক্ষেপে ওদের অসৎ উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

চরিত্রহীন একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার মুখোশ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে উন্মোচিত হওয়ায় এখন মাথায় হাত পড়েছে চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের।

ফলে নতুন উদ্যমে নিজেদের ‘পুরনো সুহৃদ’ মিডিয়া সন্ত্রাস সুবীর ভৌমিককে দিয়ে নতুন করে জল ঘোলা করতেই ছক কষেছেন তারেকরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পাকি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ছবি ফটোশপের কারসাজির মাধ্যমে নিজেদের ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ অনলাইনে প্রকাশ করে ভারতীয় সরকারকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে ‘ব্যাকডোর’ গেইমে মজেছেন সুবীররাই।

কিন্তু ছলচাতুরী ‘ধরা’ পড়ায় ধুরন্ধর সুবীর আবারও নতুন ফন্দিফিকির আঁটছেন বলেই মনে করছেন অনেকেই।

কালের আলো/এআই/এসআর