বঙ্গমাতা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ‘অনন্য উদাহরণ’ : স্পিকার

প্রকাশিতঃ 9:47 pm | August 08, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী এটি তাঁর একটি পরিচয়, একমাত্র পরিচয় নয়। তিনি ছিলেন বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী।

বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন, ছায়ার মত পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনত সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা নাম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ‘অনন্য উদাহরণ’ মনে করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী।

অসামান্য দৃঢ়তা, প্রবল আত্মপ্রত্যয়, দৃঢ় মনোবল, সাহস এবং অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী হওয়ার কারণেই বঙ্গমাতায় নিজের মুগ্ধতার কথাও প্রকাশ করেন মহান জাতীয় সংসদের এ অভিভাবক।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকীকে ঘিরে শনিবার (০৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় কালের আলো’র সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে নিজের এমন সব অভিমত ব্যক্ত করেন ড.শিরীন।

বাঙালি নারীর জাগরণের ‘বাতিঘর’ বঙ্গমাতার মহান মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম অবদান, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিবৃত্তি, মাতৃরূপী স্বিগ্ধ অভিব্যক্তিই কালের আলো’র সঙ্গে আলাপচারিতায় সুনিপুণ দক্ষতায় তুলে আনেন স্পিকার।

স্মরণের আলোয় চির জাগরিত এ মহিয়সী নারীকে একাধারে একজন স্ত্রী, একজন মমতাময়ী মা, দক্ষ সংগঠক এবং দূরদর্শী রাজনীতিবিদ হিসেবেও উল্লেখ করেন স্পিকার।

যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে বঙ্গমাতার বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য্য ও সাহসের গল্পও তিনি বলে যান অকপটে।

কালের আলো’র সঙ্গে স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি’র আলাপচারিতার চৌম্বক অংশ পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ‘অনন্য উদাহরণ’
স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গমাতা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ‘অনন্য উদাহরণ’। জাতির পিতার জীবনের স্বপ্ন ছিল স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নেপথ্যে থেকে নীরবে কাজ করে গেছেন বঙ্গমাতা।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গমাতা পরামর্শ, সাহস, অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা দিয়ে গেছেন।

একজন নারী হিসেবে দৃঢ়চেতা মনোবলের অধিকারী অসাধারণ, বিরল ব্যক্তিত্ব ছিলেন বঙ্গমাতা।

বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে জেলে, তাঁর অনুপস্থিতিতে কেবল পরিবারকেই ধরে রাখেননি, এই মহিয়সী নারী ছাত্রলীগকে যাবতীয় দিক নির্দেশনা ও স্বাধীনতা সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। সবক্ষেত্রেই তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতার প্রমাণ মেলে।’

‘প্যারোলে মুক্তি নয়, এই বাংলার মানুষই তোমাকে মুক্ত করবে’
স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গমাতা প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন। সহযোগিতা করেছেন এবং এই দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে অনেক সংকটময়, প্রতিকূল সময় পার করেছেন।

কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার অনেক সময় এসেছে এবং সেই সময়গুলোতে অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সাথে ও দৃঢ়তার সাথে চিন্তাপ্রসূত দিকনির্দেশনা সংবলিত সিদ্ধান্ত বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দিয়েছেন। যার মধ্য দিয়ে তাঁর গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই প্রকাশ পায়।

‘প্যারোলে মুক্তি নয়, সম্পূর্ণ মুক্ত হয়েই যেকোন আলোচনায় যাবেন বঙ্গবন্ধু- এই চিন্তাটিও বেগম মুজিবের কাছ থেকেই এসেছে, বলতে থাকেন স্পিকার।

এ প্রেক্ষাপটে বঙ্গমাতাকে উদ্ধৃত করে স্পিকার বলেন, ‘প্যারোলে মুক্তি নয়, এই বাংলার মানুষই তোমাকে মুক্ত করবে’। বাস্তবেও তাই হয়েছে, এটিই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত।’

৭ মার্চের ভাষণের আগে বঙ্গমাতা কী বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে –
মহান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণের ক্ষেএে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসার ভূমিকার কথা স্মরণ করেন স্পিকার।

তিনি বলেন, ‘সেদিন বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন-‘অনেক লোক অনেক কথা বলতে পারে। তাদের কারও কোনো কথা শোনার প্রয়োজন নাই। তুমি দীঘ দিন আন্দোলন করেছো, বাঙালির অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছো, তোমার মনে যা আসে তুমি তাই বলবে।’

বঙ্গবন্ধুর জীবনে বঙ্গমাতা প্রতিটি পরতে পরতে বঙ্গমাতা নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিলেন। তাই মরণেও সঙ্গী হয়েছেন। জাতির পিতা তাঁর অসমাপ্ত আত্নজীবনী ও কারাগারের রোজনামচায় রেণুর ভালোবাসা ও সহযোগিতার কথা বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে কালের আলো’র কাছে একটি উদাহরণ তুলে ধরেন স্পিকার।

বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে লেখা বঙ্গমাতার একটি চিঠি ছিল এমন- ‘আপনি শুধু আমার স্বামী হওয়ার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্যও জন্ম নিয়েছেন, দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ, আপনি নিশ্চিন্ত মনে সেই কাজে যান, আমার জন্য চিন্তা করবেন না।’

এই যে একজন নারী বঙ্গমাতা যিনি কখনও নিজের জীবনের চাওয়া-পাওয়ার কথা বলেননি। কেবলই তার নিজের স্বামীকে নিয়ে ভেবেছেন।

চিন্তা করেছেন দেশ, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম ও ৭ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়টি।

দেশকে এগিয়ে নিতে তিনি প্রতিটি পদক্ষেপে বঙ্গবন্ধুকে উৎসাহিত করেছেন।

বঙ্গবন্ধু নিজেও লিখেছেন- ‘রেণু আমাকে খাতগুলো দিয়ে লেখার অনুরোধ করলেন।’

বঙ্গমাতা জেল গেটে সাদা খাতা দিয়ে আসতেন
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্নজীবীনী, কারাগারের রোজনামচা এই বইগুলোর পেছনে বঙ্গমাতার বিশেষ অবদান রয়েছে – মন্তব্য স্পিকার ড.শিরীন শারমিনের।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে তখন বঙ্গমাতা তাকে জেল গেটে সাদা খাতা দিয়ে আসতেন। আত্নজীবনী লেখার জন্য বঙ্গবন্ধুকে উৎসাহ দিতেন। ওই খাতাগুলোই পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই আকারে প্রকাশ করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব চিন্তা ও কথা সেই সময়ে এভাবে সংগৃহীত হয়।

এগুলো আজ ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। বঙ্গবন্ধু নিজেও লিখেছেন- ‘রেণু আমাকে খাতগুলো দিয়ে লেখার অনুরোধ করলেন’, যোগ করেন স্পিকার।

কালের আলো/আরআই/এমএএএমকে