অনিবার্ণ সূর্যের প্রখর ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু; সেনাপ্রধানের সারল্য-ঐশ্বর্যমন্ডিত উপস্থাপন
প্রকাশিতঃ 8:10 am | August 15, 2020
এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো :
চলতি বছরের বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি)। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে সেনাবাহিনীর শীতকালীন প্রশিক্ষণ মহড়া। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সভাপতির বক্তব্য রাখছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। ‘বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ সমার্থক’ নিজের বক্তব্যের শুরুতেই উচ্চারণ সেনাপ্রধানের কন্ঠে।
গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য জনগণের সাথে একাত্ম হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো দেশকে শত্রুমুক্ত করতে।’
২০১৯ সালের মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর)। ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং, কাদিরাবাদ সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠান।
প্রধান অতিথি হিসেবে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই সেনাপ্রধান বলেন, ‘মহান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সুচিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম।
যার বলিষ্ঠ আহ্বানে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য জনগনের সাথে একাত্ম হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে। যার ফলে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পুথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা পায়।’
ধন্য সেই পুরুষ, স্বাধীন বাংলার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিজের প্রতিটি বক্তব্যেই এভাবেই উপস্থাপন করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তাঁর ভাষ্যে- ‘বঙ্গবন্ধু কেবল একজন মহান নেতাই নন, একটি প্রতিষ্ঠান।’ বাঙালি জাতির মুক্তির নিয়ন্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্নাত দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বাঙালি জাতির চির আরাধ্য এ পুরুষ সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন উপস্থাপন করতে গিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন সর্বতোভাবে একজন প্রকৃত বাঙালি। আমাদের মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু কেবল স্বপ্নদ্রষ্টাই নন, স্বপ্ন বাস্তবায়নেও তাঁর দক্ষতা দৃষ্টান্তমূলক।
তাই আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, কেবল কথা নয় বরং মহান এই নেতার দিকনির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করা সম্ভব।’
শনিবার (১৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ও বাঙালীর জন্য গভীর মর্মস্পর্শী শোকের দিন। জাতীয় শোক দিবসে কলঙ্কমুক্ত বাঙালী জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করছে।
অনিবার্ণ সূর্যের প্রখর ব্যক্তিত্ব, অবিনশ্বর আদর্শ ও প্রেরণার বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়গ্রোথিত আবেগ-শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীও। বিভিন্ন কবির অসংখ্য কবিতার পঙক্তিতে মহান জাতির জনক যেমন উঠে এসেছেন তেমনি নিজের প্রতিটি বক্তব্যেই বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উপস্থাপন করেছেন দেশপ্রেমিক সেনাপ্রধানও।
সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঙালির আবেগ-উদ্দীপনা ও সংগ্রামী চেতনার দ্যোতনায় অসাধারণ কবিত্বময় রূপেই বরাবরই উপস্থাপন করেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা নামক মহতী কাব্যের সৃষ্টা এ কবিকে নিয়ে তাঁর নিজের ভাব, ভাষা, উপমা ও উচ্চারণ গণামানুষের উন্মুখ অন্তরকে স্পর্শ করে। নিখাদ স্টাইলের মৌলিকত্ব, চিরকালীন ও সর্বজনীন স্বীকৃতি লাভ করেছে মহান জাতির পিতাকে নিয়ে তাঁর প্রতিটি বক্তব্য।
বহমান অকপট সারল্য ও সৌন্দর্যে জেনারেল আজিজ আহমেদ তুলে ধরেন অতি বাস্তবতা, ইতিহাসনিষ্ঠতা, ঐশ্বর্যমন্ডিত বলিষ্ঠ, বজ্রকন্ঠের বাগবৈদগ্ধ, সম্মোহিত করার জাদুকরি আকর্ষণ, মন্ত্রমুগদ্ধতা আর প্রাচুর্যে শ্রেষ্ঠময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘বাঙালি জাতির চরম দু:সময়ে এক আলোকবর্তিকা হয়ে লক্ষ কোটি মানুষের স্বপ্নের দ্বার উন্মুক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। নিষ্পেষিত এই জনপদের মুক্তির সংগ্রামে তিনি ছিলেন আমাদের প্রেরণা এবং আস্থার প্রতীক।
‘বঙ্গবন্ধু তার সংগ্রাম, জীবন ও নেতৃত্বের গুণাবলির মাধ্যমে পরিণত হয়েছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে’ এমন মন্তব্যও বিভিন্ন বক্তব্যে সুনিপুণ দক্ষতায় তুলে এনেছেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
সেনাপ্রধানের দৃষ্টিতে-‘বঙ্গবন্ধু মানেই সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর অসম সাহসিকতা, যাদুকরী নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা এবং সর্বোপরি দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা উদ্ধুদ্ধ করেছিল এ দেশের শত কোটি মানুষকে, যার ফলশ্রুতিতেই আমাদের আজন্ম লালিত স্বপ্ন ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ’ বাস্তবায়িত হয়।
অবিসংবাদিত এই নেতার কারণেই বহু সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে’ যোগ করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
বঙ্গবন্ধুর দৈহিক বিনাশ ঘটলেও তাঁর আদর্শের মৃত্যু হতে পারে না। মানুষ মরে যায়, আদর্শ মরে না। বঙ্গবন্ধু নিজেও একাধিক বক্তৃতায় এ কথা বলেছিলেন।
পিতা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের উদ্যোগে প্রকাশিত বিশেষ ক্রোড়পত্রে নিজের বাণীতে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সনে রণাঙ্গনেই অভ্যুদয় হয়েছিল আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যগণ এ দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছিলেন। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন যে, সততা, দেশপ্রেম, সাহসিকতা, ত্যাগ এবং পরিপূর্ণ বিশ্বাস হলো যোগ্য নেতৃত্বের মূল ভিত্তি। বঙ্গবন্ধুর যাদুকরী ভাষণ, পর্বত প্রমাণ ব্যক্তিত্ব এবং অতুলনীয় প্রজ্ঞা, তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরিত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছিল।’
স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কঠিন সংগ্রামের মধ্যেও দেশের জন্য একটি আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলার ওপর জোর দেন বলে মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের সশস্ত্র বাহিনী কোন মূল্যবোধকে ধারণ করে গড়ে উঠবে সে ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশনাসমূহ সঠিকভাবে অনুধাবন করা এবং সে অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীকে গড়ে তোলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে আমি সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের পাসিং আউট প্যারেড এ প্রদত্ত ভাষণকে যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
জাতির পিতার নির্দেশনায় প্রণীত হয় প্রতিরক্ষা নীতি ১৯৭৪ এবং পরবর্তীতে এই নীতির ওপর ভিত্তি করেই ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ ও ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি ২০১৮’ প্রণীত হয়েছে, নিজের সেই বাণীতে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান।
জেনারেল আজিজ আহমেদ আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আজ একটি শক্তিশালী ও সক্ষম বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও জনগণের আস্থা অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় প্রয়োজনে যেকোন দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা অর্জন করেছে।
প্রশিক্ষণ, আধুনিক সরঞ্জাম এবং দৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তিতে বলীয়ান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আজ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। জাতির জনকের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অনুকরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মেনেই সেনাবাহিনীর অভিযান পরিকল্পনায় জনগণকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে যা আমাদের সমরনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।’
সেনা সদরে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম ‘ইতিহাস আমার অহংকার’
২০১৯ সালের বুধবার (১৪ আগস্ট) সেনা সদর দপ্তরের আর্মি গলফ ক্লাবের গলফ গার্ডেনের দক্ষিণ পূর্ব পাশের দেয়ালে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সন্বলিত টেরাকোটার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
দৃষ্টিনন্দন এ শিল্পকর্মে ভাস্কর্য শিল্পী মৃণাল হক ৫২ থেকে ৭১’ ফুটিয়ে তুলেছেন বিশেষ দক্ষতায়। তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় নিপুণভাবে চিত্রায়িত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সন্বলিত টেরাকোটা ‘ইতিহাস আমার অহংকার’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সন্বলিত টেরাকোটায় বাংলাদেশর অভ্যুদয় ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা, ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণ, স্বাধীনতা যুদ্ধের খন্ড চিত্র এবং সকল কার্যক্রমের ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
কালের আলো/আরআই/এমএএএমকে