বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের ‘সুখস্মৃতি’, জ্বলজ্বল মনের হীরক দ্যুতিতে

প্রকাশিতঃ 3:40 pm | August 16, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

বাংলাদেশ ছাপিয়ে বিশ্বের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বকে বাংলাভাষা চিনিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর বাঙালি ও বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। একটি পিছিয়ে পড়া জাতিকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করেছেন, এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতা।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুকে হারানোর শোক অনুভব করেছিলেন বিশ্বনেতারা

প্রতি বছর জাতীয় শোক দিবসে শোককে শক্তিতে রূপান্তরতি করার অঙ্গীকার করা হয়। বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ও আস্থা ছিল আকাশচুম্বী। বাঙালি ও বাংলার মুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।

সাহসী, কর্মতৎপরত ও আচার-আচরণেও অত্যন্ত সুহৃদ ছিলেন বাঙালির মুক্তির নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আরও পড়ুন: শোকের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত ব্যারিস্টার তাপস

মা-বাবার আদরের খোকা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে অনেক সুখস্মৃতি রয়েছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মধুর সেই স্মৃতি তাদের মনের হীরক দ্যুতিতে জ্বলজ্বল করছে।

সরকারি দল আওয়ামী লীগের এমনই কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি’র স্মৃতিচারণ তুলে ধরা হচ্ছে কালের আলো’র পাঠকদের জন্য।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু পকেট থেকে ৩০০ টাকা বের করে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে!

শ ম রেজাউল করিম এমপি
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন শ ম রেজাউলি করিম। পিরোজপুর-১ আসন (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) থেকে নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য প্রথমে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের সুখস্মৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রচারণার জন্য বঙ্গবন্ধু মাটিভাঙ্গা কলেজ মাঠে এসেছিলেন নির্বাচনী জনসভায়। টুঙ্গিপাড়া থেকে মাটিভাঙ্গা একেবারেই কাছাকাছি।

তিনি একটি স্পিডবোটে এসেছিলেন, সেখানে তাকে সম্ভাষণ জানানো হয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। তৎকালীন সময় আওয়ামী লীগের নেতা নূর মোহাম্মদ ফরাজি, মৌলভী লুৎফর রহমান, নিখিল হালদার, নরেন হালদারসহ অনেকেই বঙ্গবন্ধুরকে সেখানে স্বাগত জানান।’

আরও পড়ুন: অনিবার্ণ সূর্যের প্রখর ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু; সেনাপ্রধানের সারল্য-ঐশ্বর্যমন্ডিত উপস্থাপন

শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘সেই সময় সর্বকনিষ্ঠদের ভেতর থেকে তাকে (বঙ্গবন্ধু) ফুল দিয়ে স্বাগত জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। কাগজের ফুলের মালা তৈরি করা হয় গেঁথে গেঁথে। সেই মালাটি আমাকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আলতোভাবে আমাকে ছুঁয়ে দোয়া করেছিলেন, ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। সমগ্র জীবনে বঙ্গবন্ধুর সেই স্পর্শ আমার সেই কৈশোরের-শৈশবের অনুভূতি সারাজীবন বয়ে চলব।’

আরও পড়ুনঃ শোকের উচ্চারণে স্বাধীন ভূখন্ডের চিত্রকর, রাজনীতিক-জনপ্রতিনিধিদের মর্মস্পর্শী মূল্যায়ন

ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি ছাত্র জীবন থকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ইডেন কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দুই বার ও সভাপতি হিসেবেও দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন।

দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও। তৃতীয় বারের মতোন পালন করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব।

তিনবার সংক্ষরিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হয়েছেন। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের মধুর স্মৃতিপট তুলে ধরে এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫’র ১২ ই আগস্ট আমি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে গেলাম কামাল ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য।

দেখি, বঙ্গবন্ধু বের হয়ে যাচ্ছেন। আমাকে দেখে উনি হাত দেখালেন, হাত দেখিয়ে উনি চলে গেলেন। বাড়িতে ঢুকলাম, ঢোকার পরে আমি জানতে পেলাম কামাল ভাই বাসায় নেই। গেট থেকে বের হতেই দেখলাম বঙ্গবন্ধুর গাড়িটি আবার ফেরত আসলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর প্রধান সিকিউরিটি অফিসার নেমে আমাকে ডাকলেন। বললেন, গাড়ি ব্যাক করে লিডার শুধু তোমার জন্য এখানে আসছে। মানে… হতভম্ব হয়ে গেলাম।

আমার মত একজন কর্মীর কাছে বঙ্গবন্ধু গাড়ি ফেরত নিয়ে আসলেন! তখন তো আমি জানতাম না, বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার সেদিনই শেষ দেখা হবে……’ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।

মো. নূরুল ইসলাম সুজন এমপি
তিনবার পঞ্চগড়-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো.নূরুল ইসলাম সুজন। পেশায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলারও একজন আইনজীবী ছিলেন। পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের দুই বারের সভাপতিও তিনি।

ছাত্রাবস্থা থেকে নূরুল ইসলাম সুজন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ডাকসুর বিজ্ঞান মিলনায়তন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ঢাবি’র সিনেট সদস্য ছিলেন। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহআইন বিষয়ক সম্পাদক ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের মধুর স্মৃতি প্রবাহ তুলে ধরে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি। যেহেতু বড় ভাই নির্বাচন করবে, বঙ্গবন্ধু নির্বাচনের পূর্বে ৭০ সালে পঞ্চগড় আসলেন। বর্তমানে আমাদের যে করতোয়া নদী এবেং ব্রিজ, এই ব্রিজের ঠিক উত্তর-পশ্চিম দিকে এক বিরাট মাঠ ছিল।

ওই মাঠে বঙ্গবন্ধুর সেই জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। জনসভার পরে আমরা দেখলাম যে বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন আমাদের ক্যান্ডিডেটের উনার বাড়িতে গেলেন এবং খাওয়াদাওয়াও সারলেন।

আমি অনেক কষ্ট করে সিরাজুল ইসলামের ভাই হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। বঙ্গবন্ধুর কাছে আমার বড় ভাই নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন যে আমার ছোটভাই। বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞাসা করলেন কোন ক্লাসে পড়ি এবং প্রশ্ন করেছিলেন কি নেতা হবা?’

মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী এমপি
নোয়াখালীর ‘মাটি ও মানুষের নেতা’ বলে খ্যাত এমপি মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী। নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তিনি।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের সুখস্মৃতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পড়ালেখা করতাম ১৯৭৩ সালে ধানমন্ডি বয়েজ হাই স্কুলে। থাকতাম আব্দুল মালেক উকিল এর বাসায়। আমার বাবা আর উনি দু’জনেই খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। আমাকে মালিক চাচা খুব আদর করতেন।’

এমপি মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী আরও বলেন, ‘উনি (আব্দুল মালেক উকিল) একদিন উনার সাথে আমাকে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে নিয়ে গেলেন। ৩২ নম্বরে আমি ঢুকার পথে দেখলাম বঙ্গবন্ধু একটি সোফায় বসে আছেন, হাতে পাইপ ছিল একটা।’

‘উনি আমাকে দেখেই মালিক চাচাকে জিজ্ঞাসা করলেন এটা কে? চাচা বললো ইদ্রিস আলীর ছেলে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ইদ্রিস আলীর ছেলে! এদিকে আসো, এদিকে আসো’ যোগ করেন এ সংসদ সদস্য।

স্মৃতি হাতড়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি গেলাম বঙ্গবন্ধুর’ কাছে। উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে উনার পায়ের কাছে বসালেন। তারপর আমাকে বললেন কোথায় পড়ো, কিসে পড়ো? আমি সেই স্মৃতি কোনোদিনই ভুলতে পারিনা’ আবেগতাড়িত কন্ঠে বলছিলেন মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী।

কালের আলো/এএএম/এমএইচএ