যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগও ব্যর্থ হয়
প্রকাশিতঃ 3:25 pm | July 26, 2018

::সাইদুর রহমান রিমন::
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদক বিরোধী আপোসহীন ভূমিকা যুগ যুগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মাদকের সর্বনাশা গ্রাস থেকে প্রজন্ম তথা জাতিকে রক্ষায় তিনি জাতীয় সংসদে শুধু বিষয়টি আলোচনা করেই ক্ষ্যান্ত থাকেননি, বরং জাতীয় পর্যায়ে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনাও নিশ্চিত করেছেন। সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনিক সকল ইউনিটকে মাদক বিরোধী তৎপরতায় নিয়োজিত থাকাটা রাষ্ট্রীয় অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্বে পরিনত করে ঐতিহাসিক জাতীয় কর্তব্য পালন করেছেন।
কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক বিশাল উদ্যোগটিও ব্যর্থ হতে চলেছে- দেখে মনটা ভীষণ খারাপ হচ্ছে।
গুটিকয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি, কতিপয় লোভী পুলিশ সদস্য আর অর্ধ শতাধিক ডাকসাইটে সন্ত্রাসী রীতিমত প্রধানমন্ত্রীর কঠোর কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাদক ব্যবসা বহালই রাখছে। কারা এই প্রভাবশালী? তারা মূলত মাদক ব্যবসায়ি হয়েও সমাজসেবীতে পরিনত হয়েছেন। তারাই থানা পুলিশের যাবতীয় খরচ খরচা মেটান, রাজনীতির মিছিল সমাবেশে লোকজনের যোগান দেন, নিজ এলাকায় দান খয়রাত করে দানবীরে পরিনত হয়ে উঠা মানুষ। তাদেরকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ নেই বললেই চলে।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকার একজন মাসুদ মিয়া নিজ এলাকায় বড় মাপের সমাজসেবক, দানবীর, রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হলেও তার নেপথ্য চরিত্র কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। এই মাসুদ মিয়া প্রকৃতপক্ষে গুলশানের মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক। ওয়্যার হাউজগুলো থেকে অবৈধপন্থায় লাখ লাখ টাকার মদ উত্তোলন করে তা রাজধানী ছাড়াও দেশের জেলায় জেলায় সরবরাহ দিয়ে থাকেন। মাদক বাজার সম্প্রসারণের অবৈধ বাণিজ্যটি পরিচালনা করে মাত্র ৫/৭ বছরেই মাসুদ মিয়া হাজার কোটি টাকার মালিক বনেছেন। সেই টাকার অতি ছিটেফোটা অংশ ছড়িয়ে তিনি হরিরামপুর থানা আওয়ামীলীগ নেতাদের কিনে ফেলেছেন, নিজের নামটিও যুক্ত করেছেন থানা আওয়ামীলীগের কমিটিতে। এখন নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তিনি। এলাকার মানুষজন তাকে দানবীর হিসেবেই চেনেন, কিন্তু তিনি যে দেশের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়িদের একজন- এর ঘূর্ণাক্ষরও জানেন না কেউ। মাসুদ মিয়ার দম্ভোক্তি ঃ ”মাদক বিরোধী বিশেষ যে অভিযান চলছে এর যাবতীয় খরচ চালাই আমি, গুলশান, বনানী, কাফরুল থানা পুলিশের গাড়ির তেলের যোগান পর্যন্ত দেই-আমাকে ধরবে কে?” এ কারণে মাদক মামলার ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়েও যথেচ্ছা ঘুরে বেড়ান তিনি, থাকেন বহাল তবিয়তে।
প্রশাসনের খরচ খরচা চালানো এমন কয়েকশ’ মাদক ব্যবসায়ি কাম সমাজসেবী যে কোনো মূল্যে মাদক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। প্রভাবশালীদের মধ্যে একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতাও মাদক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখছে। রামপুরার সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা এরইমধ্যে ডিবি’র ডিলার হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তিনি ডিবি পুলিশের আটক করা ফেন্সিডিল পাইকারিভাবে কিনে তা খুচরা ব্যবসায়িদের মধ্যে বিতরণ করে থাকে। মাদকের এমন ডিলারশিপের বাণিজ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে থানা পুলিশ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থানা পুলিশের বিশ্বস্ত সোর্সরাই এখন নির্বিঘ্নে মাদক বাজার পরিচালনা করে চলছে। তারা অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে ফেন্সিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে নিরাপদে বেচাকেনা চালাচ্ছেন।
থানা থেকে সংগৃহিত মাদক বিক্রির ক্ষেত্রে তারা বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তাও পেয়ে থাকে। কোনো কোনো থানায় ৫/৭ জন দারোগাও পৃথক পৃথক ডিলার নিয়োগ করে মাদকের বাণিজ্য অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান চলাকালেও পুলিশ কর্মকর্তারা মাদক স্পটগুলোর মালিকানা বদলে দিচ্ছেন। নিলামে ডাক তোলার মত করেই কেনাবেচা হয়ে যাচ্ছে মাদকের স্পটগুলো।
রুপনগরের কুখ্যাত মাদক আখড়ার সম্রাট নজরুল ইসলাম নজু ক্রসফায়ারে মারা গেলেও তার আখড়া বন্ধ হয়নি মোটেও। আখড়াটি অতিসম্প্রতি রুপনগর থানার পুলিশ দৈনিক ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে কারেন্ট দুলালের হাতে তুলে দিয়েছে। সেখানে মাদক স্পটের নেপথ্য পৃষ্ঠপোষক হাজী রজ্জবকে হটিয়ে সে দায়িত্ব নিয়েছে এক যুবলীগ নেতা। পুলিশ আর যুবলীগের সেল্টারে কারেন্ট দুলাল ও তার সহযোগিরা এখন মাদক বাণিজ্য ছাড়াও চলন্তিকা বস্তিতে হররোজ রমরমা জুয়ার আসর বসাচ্ছে। পুলিশের মাসোহারা যোগান নিশ্চিত করে কারেন্ট দুলালরা যা খুশি তা করার অবাধ লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে মাদক বিরোধী জোর ভূমিকা রেখে হেলাল উদ্দিনের যেসব কর্মকর্তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে তাদের বিরুদ্ধেই চলে প্রশাসনিক নানা হয়রানি। তার মতো কর্মকর্তার বিরতিহীন অভিযানকে মুহূর্তেই থামিয়ে দিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভেতরে বাইরে চলে নানামুখি ষড়যন্ত্র।
এসব কারণেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মাদক বিরোধী অভিযানের মতো জাতীয় কর্মসূচি অতি সহজেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, হবেও।
লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলাদেশ প্রতিদিন
কালের আলো/ওএইচ