ভগ্ন স্বাস্থ্যখাতকে টেনে তোলছেন, চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগোচ্ছেন স্বাস্থ্যের ডিজি খুরশীদ

প্রকাশিতঃ 8:12 am | August 24, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

ডা.আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। সম্ভবত তিনিই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রথম মহাপরিচালক (ডিজি) যার কোন ‘হানিমুন পিরিয়ড’ নেই।

আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যের ডিজির দু:খ প্রকাশ; গণমাধ্যমের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবেরই বহি:প্রকাশ

নিজ অধিদপ্তরের অতীতের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকান্ড থেকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জের কারণেই আয়েশি মুডে থাকার কোন সুযোগও নেই তাঁর।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের দিকেও বেশি নজর দিতে হচ্ছে তাকে। এরই সঙ্গে যোগ হয়েছে বন্যার্তদের সুচিকিৎসা।

ভগ্ন স্বাস্থ্য খাতকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েই ক্রমশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন ডা.আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে তিনি কতটা সফল হবেন, তা ভবিষ্যৎই নির্ধারণ করবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে ডা.খুরশীদের যোগ্যতা ও দক্ষতায় ইতোমধ্যেই তাঁরা আশার আলোও দেখছেন।

এক রকম কঠিন ঝড়ের মধ্যে তাকে দায়িত্ব নিতে হলেও সবাইকে নিয়ে ‘টিম ওয়ার্ক’ এর মাধ্যমেই তিনি নিজের কাজ গুছিয়ে নিচ্ছেন।

কেবল ‘ফাইল ওয়ার্ক’র এর মাধ্যমেই নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে করোনা রোগের চিকিৎসায় সারা দেশে সরকারি হাসপাতালে কেমন চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে সেটিও নিজেই মনিটরিং করছেন ডা.আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (২৩ আগস্ট) তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি হাসপাতালটি পরিদর্শনের পাশাপাশি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।

পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপে বলেন, ‘রামেক হাসপাতাল করোনা রোগের চিকিৎসায় ভালো কাজ করছে।

ঢাকার অনেক হাসপাতালের চেয়ে এখানকার ব্যবস্থাপনা ভালো। অন্যান্য রোগের চিকিৎসা এবং অপারেশন আগের চেয়ে একটু কমলেও বেশ ভালো হচ্ছে।’

সূত্র মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে যোগদানের দ্বিতীয় দিনেই গণগামাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ডা.আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম করোনা মহামারি সামাল দেওয়া ও বন্যার্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকেই নিজের প্রথম কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

এই মহামারি সামাল দিতে আগের পরিকল্পনা ও চিকিৎসা পদ্ধতি পরিবর্তনেরও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। একই সঙ্গে সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে সেগুলো মোকাবেলাতেও নিবিষ্টমনে কাজ করারও অঙ্গীকার করেন নতুন ডিজি।

এর আগে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দুর্নীতির জন্য শুধু সরকারকে দায়ী না করে সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে সৎ থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

বলেছিলেন, ‘আমরা যদি ব্যক্তিগতভাবে সৎ না হই, তাহলে কোনোভাবেই দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব নয়। আমরা যদি শুধু সরকারের দিকে আঙুল তুলি, সেটা হবে সবচেয়ে বড় বোকামি। আমরা সবাই এই দুর্নীতির অংশ।’

জনস্বাস্থ্যবিদরাও মনে করেন, নতুন ডিজিকে গতিশীল এবং আগের ডিজির ত্রুটিগুলো মাথায় রেখে পরিচ্ছন্নভাবে কাজ করে যেতে হবে।

একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা চলছে এর দিকে নজর দিয়ে কাজও চালিয়ে যেতে হবে সমানতালেই।

একজন জনস্বাস্থ্যবিদ কালের আলোকে বলেন, ডা.আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম একজন সার্জারির অধ্যাপক। এর আগে তিনি কখনই অধিদপ্তরের সঙ্গে যুক্তে ছিলেন না।

এজন্য তাঁর জন্য এ দায়িত্ব পালন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। প্রতিটি পদক্ষেপেই তাকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে।

সূত্র মতে,  ডা.আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগের আগে এ পদে প্রতিযোগী হিসেবে তাঁর নাম আলোচনায় ছিল না। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও আলোচিত ছিল বেশ কয়েকজনের নাম।

এরই মধ্যে নিয়োগের কয়েক ঘন্টা আগে একটি গণমাধ্যম অন্য একজনের নাম প্রকাশ করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন লবিইংই কাজে আসেনি।

সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে সৎ ও দক্ষ হিসেবে পরিচিতি খুরশীদ আলমকেই শেষ পর্যন্ত ডিজি হিসেবে নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর পছন্দেই ডিজির চেয়ারে বসেছেন ডা.খুরশীদ। করোনা মহামারি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী তার ওপরই আস্থা রেখেছেন।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে একজন সৎ ও দক্ষ চিকিৎসক খুঁজছিল সরকার।

গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সরকারের হাইকমান্ড আলোচনায় থাকা চিকিৎসকদের সবার বায়োডাটা যাচাই-বাছাই করে।

এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই শেষ পর্যন্ত খুরশীদ আলমকেই এ পদটিতে বেছে নেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে করোনা মহামারি সামাল দেওয়ার গুরু দায়িত্ব বর্তেছে তাঁর কাঁধে।

সূত্র মতে, আগের ডিজি ডা.আবুল কালাম আজাদের নানা অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণে সমালোচনার তুঙ্গে ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনাকালীন সময়ে তথ্য লুকানো, অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতারও বিস্তর অভিযোগ ছিল অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে।

ডা. খুরশীদ আলম ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক। তিনি এ বি এম খুরশীদ আলম নামেও পরিচিত।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করার পর দশম বিসিএসের মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. খুরশীদ আলম নিজের প্রতিটি পদক্ষেপে বরাবরই গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়েছেন। গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তাঁর আশাবাদী উচ্চারণও প্রশংসিত হয়েছে।

রবিবার (২৩ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে রামেক হাসপাতাল পরিদর্শন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালেও তিনি বলেছেন, ‘মিডিয়াকে দূরে রেখে কোনও কাজ সম্পন্ন করা যাবে না।’

এ সময় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঁচ বছর ধরে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকার ঘটনায় দুঃখও প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এবিএম খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, ‘এখানে পাঁচ বছর ধরে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয় না-এই অভিযোগ শুনলাম। এজন্য যদি আমি দায়ী হয়ে থাকি তাহলে আপনাদের (সাংবাদিকদের) কাছে আমি দুঃখিত এবং ক্ষমা চাই।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি বলেন, ‘দেশের মিডিয়া অনেক শক্তিশালী মাধ্যম। সাংবাদিকরা সরকারের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের কথা তুলে না ধরলে জনগণ জানবে না। আমরা যতই তুলে ধরি না কেন, তা জনগণ বিশ্বাস করবে না।

আমি হাসপাতালের পরিচালককে অনুরোধ করবো, আপনি মিডিয়ার সঙ্গে থাকেন। তাদের কাজ করতে সহযোগিতা করেন। আপনাকে অনুরোধ করে গেলাম, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’

কালের আলো/আরআই/এমএএএমকে