সাদামাটা, অনন্য শেখ হাসিনা; এক যুগ পর জন্মদিনে নিজ দেশে

প্রকাশিতঃ 12:15 pm | September 28, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

সরকার প্রধান হিসেবে প্রতিবছর জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কারণে জন্মদিনের সময় বিদেশে থাকতে হয়েছে। তিন মেয়াদের প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগের বছরের জন্মদিনও তার যুক্তরাষ্ট্রে কাটে।

আরও পড়ুন: শুভ জন্মদিন, বিশ্বময় বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা

তবে এ বছর করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে জাতিসংঘের ৭৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। ফলশ্রুতিতে এবার দেশে থেকেই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও একই কারণে ঘটা করে তার জন্মদিন পালিত হচ্ছে না।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় তিনি কোনও আনুষ্ঠানিকতা না করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দলীয়ভাবে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত পরিসরে উদযাপিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যার ৭৪ তম শুভ জন্মদিন।

দেশের মানুষের প্রতি পিতা মুজিবের মতোই গভীর মমত্ববোধ ও অফুরান ভালোবাসার কারণেই আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তার অধিকারী হয়েছেন। গড়েছেন হ্যাট্টিক প্রধানমন্ত্রীর ইতিহাসও।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা, মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় বেঁচে গেছেন বারবার

নিজের প্রশ্নাতীত নেতৃত্বের কারিশমায় চারবার নিজ দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছেন। নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ ও মানুষের উন্নয়নের কাজে নিজেকে পুরোপুরি নিবেদিত রেখেছেন। আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলনের খসড়া ঘোষণাপত্রে তাকে দলের ‘প্রধান সম্পদ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিলো।

প্রায় চার দশকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ক্ষমতার পাদপ্রদীপে থেকেও একেবারেই সাদামাটা, অনন্য সাধারণ শেখ হাসিনা। গণহত্যার শিকার মিয়ানমারের ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বসভায় নিজ দেশকে পরিচিত করেছেন এক মানবতাবাদী দেশ হিসেবে।

এ কারণেই ব্রিটিশ গণমাধ্যম তাকে আরো আগেই বলেছে ‘মানবতার মা’। দারিদ্র্য দূরীকরণ নিজ দেশকে করেছেন বিশ্ব মডেল। শান্তিতে নোবেলজয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হোসে ম্যানুয়েল সান্তোস তাকে দিয়েছিলেন ‘বিশ্বমানবতার বিবেক’ অভিধা।

ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে লিখেছিলো এমন- ‘শেখ হাসিনার হৃদয় বঙ্গোপসাগরের চেয়েও বিশাল, যেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে কার্পণ্য নেই।’

মাধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাওয়া, সন্ত্রাস নির্মূল, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন অর্থনৈতিক মুক্তিসহ সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার সাফল্য বিশ্বময়।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ৫ ঘণ্টা ঘুমান আর বাকি সময় দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করেন প্রধানমন্ত্রী। সারাক্ষণ একটিই চিন্তা দেশ ও মানুষের উন্নয়ন। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু করেন।

কখনোই দামি ব্র্যান্ডের কাপড় পরেন না। প্রসাধনও ব্যবহার করেন একেবারেই সাধারণ। পাটের জুতা ও ব্যাগ ব্যবহার করেন। জামদানির মতো দামি শাড়ি পরলেও সেটার দাম ছয় হাজারের মধ্যে। যা স্পর্শ করেন তাই তাঁর হাতের ছোঁয়ায় সোনা হয়ে যায়।

নিজ দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দীপু মনি’র একটি জনপ্রিয় উক্তি রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার আর শেখ হাসিনা উন্নয়নের কবি।’ সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মূল্যায়ন এমন- ‘শেখ হাসিনা স্বপ্নবাদী, অনুসরণীয় একজন নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক।

তিনি দেশকে দীর্ঘমেয়াদী ভিশন ও লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করেছেন। এই জাতি ও মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। দেশ তাঁর নেতৃত্বে মধ্যমেয়াদী ভিশন-২০২১ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ও দীর্ঘমেয়াদী ২০৪১ দিকেও এগিয়ে যাবে।’

বারবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। কমপক্ষে ২১ বার তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র হামলা হয়েছে।

শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্য রয়েছে বাংলাদেশের। গত ১০ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশকে সম্প্রীতির মডেল হিসেবে দাঁড় করানোর পাশাপাশি শান্তি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনও সুদৃঢ় হয়েছে।

গত বছরের শেষের দিকে আশুলিয়ায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ শান্তি সম্মেলনে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও এই কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকেই।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময় দেশের সকল ধর্মের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। সরকার দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে।’

শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে দারিদ্র্যতার শৃঙ্খল ভেঙেছে। স্বচ্ছলতার পথে হাঁটছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।

দুর্নীতি স্পর্শ করেনি, বিদেশে কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। নেই উল্লেখ করার মতো সম্পদও। বিশ্বে এমন সৎ ৫ সরকার প্রধানের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান তৃতীয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভিশনারি কর্মসূচি ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে মনোযোগ দিয়েছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন। বাবা বঙ্গবন্ধুর মতোই সাধারণের অতি আপন তিনি।

দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা প্রধানমন্ত্রী প্রায় সময়েই বলেন, ‘একটা মানুষ কষ্টে থাকবে না, একটা মানুষ না খেয়ে থাকবে না, একটা মানুষ গৃহহীন থাকবে না।’

পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবরে রাতভর জেগে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। সমাজে তৃতীয় লিঙ্গের যে মানুষদের অচ্ছুত হিসেবে দেখা হয় তাদেরকেও অনায়েসেই বুকে টেনে নেন তিনি। কোন অহং বা আমিত্ব নেই তাঁর মাঝে। বিরল সব গুণাবলী শিখেছেন বাবা’র কাছ থেকেই।

নিভৃতেই হাজার হাজার অসহায় কর্মীর ও তাদের সন্তানের পড়াশুনার খরচ তিনি চালিয়ে যান। তিনিই দেশের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি সাধারণ রোগীর মতোই ১০ টাকায় টিকিট কেটে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

অতীতেও পাঁচ টাকা মূল্যের নির্ধারিত টিকিট কেটে গাজীপুরের কাশিমপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেও নজির স্থাপন করেছিলেন। সেই সময়েও তিনি অন্যদের মতো কাউন্টারে দাঁড়িয়ে নাম নিবন্ধন করে টিকিট কাটেন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

‘কর্মে বীর, চিন্তায় ধীর ও স্বদেশপ্রেমে অধীর’ প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। তিনি বলেন, ‘দেশকে মাদক ও জঙ্গিবাদমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সেই কাজ বাস্তবায়ন করছে পুলিশ।’

‘নিজের সুদৃঢ় মনোবল, সাহসী নেতৃত্ব, তাৎক্ষণিতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সবকিছুর উর্ধ্বে উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও নিজেকে করে তুলেছেন তুমুল জনপ্রিয়।

তিনি দেশের শক্তি ও সম্পদ দু’টোই’ বলছিলেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

কালের আলো/এএএমকে