জনবল সঙ্কট চরমে, সঙ্কট নিরসনেও সমাধানের পথ!
প্রকাশিতঃ 10:36 am | October 03, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
কুমিল্লার চান্দিনায় তাঁর জন্মভিটা। এক সময় কুমিল্লায় চাকরিও করেছেন। প্রায় এক বছর ছিলেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও সার্জারি বিভাগের প্রধান।
আরও পড়ুনঃ স্বাস্থ্যসেবার হাল দেখতে প্রথমবারের মতো তৃণমূলে স্বাস্থ্যের ডিজি
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবার হালহকিকত নিজের চোখে দেখতে যখন বেরিয়ে পড়েছেন সম্ভবত প্রথমেই তাঁর মনে হয়েছে নিজ জেলা ও পুরনো কর্মস্থলের কথা!
রাজধানী ঢাকা থেকে সড়কপথেই ছুটেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা.আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। সঙ্গে নিয়েছেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা.শেখ মো.হাসান ইমাম, পরিচালক ও লাইন ডাইরেক্টর ডা. সামিউল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরকে।
আরও পড়ুন: সংস্কার হবে জরাজীর্ণ ভবন, অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত দাগনভূঞা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
দেশের স্বাস্থ্য খাতের এ শীর্ষ কর্মকর্তা শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিস, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এরপর সেখানকার সদর দক্ষিণের উনাইসারে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সও পরিদর্শন করেন।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ মতবিনিময়ে জনবল ও চিকিৎসক সঙ্কটের বিষয়টি মোটা দাগে উঠে আসে।
একই সঙ্গে ২৮ বছর পর করোনা চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালটিতে আইসিইউ স্থাপনের প্রশংসা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি।
বিশেষ করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ইপিআই কর্মসূচির ব্যবস্থাপনা ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিজস্ব অনুদানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের কৌশলেও নিজের মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেন।
সূত্র মতে, এখানকার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সঙ্কট চরম আকার নিয়েছে। এ দু’শ্রেণিতে জনবল সঙ্কটের সংখ্যা প্রায় ৭ শতাধিক। এ সমস্যা সমাধানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন মহাপরিচালক।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন ডিজি এ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন, এমন বিস্ময়কর তথ্যই উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পরিচালক ডা.মুজিবুর রহমান।
তিনি জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পুরোমাত্রায় কাজ চালিয়ে নিতে ৫০জন চিকিৎসকের প্রয়োজন। কিন্তু এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগেও লোকবল সঙ্কট রয়েছে। এ সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানও দিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
স্থানীয় আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে ৩৯ বিসিএসে উত্তীর্ণদের মধ্যে আগ্রহীদের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে গোটা জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের নানামুখী সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে জেনেক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষায় সফলতার পর সেই পথ অনুসরণ করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে এখানেও মিলেছে সফলতা। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে জেনেক্সপার্ট মেশিনে কোভিড-১৯ নির্ণয়ে সফল পরীক্ষায় সাড়া পড়েছে।
করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জটিলতা নিরসনে ফেনীতেও চালু হয়েছে জেনেক্সপার্ট মেশিন। ফেনী সফরকালে শহরের মহিপালে বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে এ মেশিনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। পিসিআর মেশিনে ৮ ঘন্টার পরিবর্তে এ মেশিনের মাধ্যমে ৪৫ মিনিটেই করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন মিলবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় যক্ষা এক্সপার্ট ডা: বিশাখা ঘোষ জানান, জেনেক্সপার্ট মেশিনে যক্ষার পাশাপাশি করোনা পরীক্ষাও করা হচ্ছে। এ ল্যাবটি পরিচালনার জন্য তিনজন টেকনেশিয়ান নিয়োজিত রয়েছেন।
ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা: মীর মোবারক হোসেন দিগন্ত জানান, জেনেক্সপার্ট মেশিনে করোনা পরীক্ষার মাধ্যমে ফেনীবাসী সুফল পাচ্ছে। এতে করে ব্যাপকহারে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওই সময় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালও পরিদর্শন করেন। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি এ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারের উদ্বোধন হয়েছে। ১০ শয্যার এ ইউনিটে হেপাটাইটিস পজেটিভ নেগেটিভ সকল রোগীকে সেবা প্রদানের দৃশ্য মুগ্ধ করে ডিজিকে।
তবে এ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা অধিদপ্তরের ডিজিকে প্রথমবারের মতো পেয়ে জনবল সঙ্কটের বিষয়টি উত্থাপন করেন। জনবল সঙ্কট প্রকট হলেও চিকিৎসা সেবায় নূন্যতম প্রভাব পড়েনি। যদিও এখানে ৫৫ জন চিকিৎসকের মাঝে রয়েছেন ৫০ জন। ১৪৬টি মঞ্জুরীকৃত পদ থাকলেও সবমিলে নার্স রয়েছেন ৮২ জন।
সারাদেশে নতুন ৫ হাজার নিয়োগকৃত নার্সের মধ্যে ফেনীতে ৬৫ জন পদায়নের কথা থাকলেও নতুন নার্স এসেছেন মাত্র ৫ জন।
এছাড়াও আরও ৩১ জন নার্স ফেনী হাসপাতালে বদলি করা হলেও যোগ দিয়েছেন ১৫ জন। এদের সবাই ৮২ জনের অন্তর্ভূক্ত। লোকবল সঙ্কট রয়েছে অপারেশন থিয়েটারেও। হাইফ্লো অক্সিজেন সেবা প্রদানেও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। রোগীদের যথাযথ সেবা প্রদানে জনবল সঙ্কটের আশ্বাস দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি।
কালের আলো/এসএকে/এমএএএমকে