এসপি মাহতাবের নতুন চমক, নিশ্চিত করতে চান রক্তপাতহীন সড়ক
প্রকাশিতঃ 12:22 pm | August 09, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নিজেই মাঠে নেমেছেন। জনসচেতনতার কাজ করছেন। মোটর সাইকেল এবং চালকের কাগপত্র ‘ওকে’ থাকলে মাথায় পড়িয়ে দিচ্ছেন হেলমেট। সরকারি কোন অর্থায়ন না থাকলেও নিজস্ব তহবিল থেকেই এই ‘হেলমেট’ উপহার দিচ্ছেন তিনি।
সড়কে লাশের মিছিল বন্ধে ট্রাফিক আইন মেনে চলারও পরামর্শ দিচ্ছেন। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তব দৃশ্য এমনই। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি রুখে দেওয়ার পাশাপাশি রক্তপাতহীন সড়ক নিশ্চিত করতে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে নতুন চমক সৃষ্টি করেছেন লক্ষীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আ স ম মাহতাব উদ্দিন।
মূলত হেলমেট ব্যবহারে মোটর সাইকেল চালকদের উদ্ধুদ্ধ করতেই হেলমেট ‘উপহার’ দিয়ে জনমনে প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ফেসবুকের দৌলতে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর এই উপহারের কথা। দেশের সব জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) জন্য এসপি মাহতাব উদ্দিনের এই উদ্যোগ অনুরকণীয় হতে পারে বলেও মন্তব্য চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
জেলা পুলিশ বিভাগ সূত্র কালের আলোকে জানিয়েছে, লক্ষীপুর শহরের ঝুমুরসহ বিভিন্ন স্পটে চেকপোস্ট বসিয়ে বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। স্বভাবতই কাগজপত্র না থাকলে নিয়মত মোতাবেক মোটর সাইকেল আটকে জরিমানা ও মামলা করা হচ্ছে।
এর বিপরীতে যাদের মোটর সাইকেল ও চালকের কাগজপত্র নবায়ন রয়েছে তাঁরা পাচ্ছেন উপহার। আর এই উপহার স্বয়ং তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। সচেতনতার পরিচয় দিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছ থেকে বিনামূল্যে হেলমেট উপহার নিয়েছেন কমপক্ষে ৭০ জন মোটর সাইকেল চালক।
নিজের এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে লক্ষীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আ স ম মাহতাব উদ্দিন কালের আলোকে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে মোটর সাইকেল চালক বা আরোহীর সংখ্যা কম নয়। মোটর সাইকেল আরোহীদের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানও ভারী হচ্ছে। বেপরোয়া গতিতে ছুটার পাশাপাশি এর অন্যতম কারণ হেলমেট না থাকা।
তিনি বলেন, হেলমেট ব্যবহার করতে বাইকারদের উদ্ধুদ্ধ করতেই যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে, কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে তবে হেলমেট নেই তাদেরকে আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে হেলমেট উপহার দিচ্ছি।
ক্রিয়েটিভ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম রয়েছে আ স ম মাহতাব উদ্দিনের। পুলিশের ২১ তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ২০১৬ সালের ৮ মার্চ লক্ষীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর অপরাধ দমনে সফলতা দেখিয়ে গত বছরের শুরুর দিকে চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এসপি’র সম্মাননা পান।
স্থানীয়রাও বলছেন, এক সময় অস্ত্রবাজী ও খুনাখুনিতে ভয়ঙ্কর আতঙ্কের এক জনপদ বলা হতো লক্ষীপুরকে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী ও উপ-বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল সাধারণ মানুষ। কিন্তু জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে অপরাধ মানচিত্র থেকে ক্রমশ বের করে আনতে সক্ষম হন এই জেলাকে।
অবশ্য এই কৃতিত্বকে নিজের মানতে নারাজ বিনয়ী এই পুলিশ কর্মকর্তা। কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘লক্ষীপুরের জনগণ পুলিশকে সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা করছে। তারা চায় শান্তিতে ঘুমোতে। আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি সব সময়। তাদের জন্য কাজ করছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই লক্ষীপুর এখন এক শান্তিপূর্ণ জেলা।
চলতি ট্রাফিক সপ্তাহে পুলিশের সঙ্গে বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্যদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করারও প্রশংসা করেন আ স ম মাহতাব উদ্দিন। কালের আলোকে বলেন, ট্রাফিক আইন মেনে চলা, দৌড়ে রাস্তা পার না হওয়াসহ বিভিন্ন কাজে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে এসব শিক্ষার্থীরাও।’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ক’দিন আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুহুর্তেও লক্ষীপুর শান্ত ও নিরাপদ ছিলো বলেও মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘লক্ষীপুরের ছাত্র-ছাত্রীরা নিরাপদ সড়ক চাই দাবিকে সমর্থন করলেও রাস্তায় বিশৃঙ্খলা করেনি। এসব শিক্ষার্থীরা কোন গাড়িতে ঢিল মারেনি, যাত্রী হয়রানি করেনি কিংবা রাস্তাও আটকায়নি। ওদের এই ভূমিকা প্রশংসার যোগ্য।’
‘পুলিশ জনগণের শত্রু না, বন্ধু’ এই স্লোগান দিয়ে এসপি আ স সম মাহতাব উদ্দিন কালের আলোকে বলেন, ‘আমরা জনগণের বন্ধু হয়েই থাকতে চাই। মানুষের সেবা করতে যে প্রক্রিয়া দরকার সেই প্রক্রিয়া মোতাবেক কাজ করতে চাই।’
কালের আলো/এসএস/এএ