ওয়াসার এমডি হিসেবে ‘ডাবল হ্যাট্টিক’; সমালোচনার ‘রহস্য’ খোলাসা তাকসিম খানের

প্রকাশিতঃ 8:45 pm | October 16, 2020

তাকসিম

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

অন্য রকম একটি ‘ডাবল হ্যাট্টিক’ করেছেন। দীর্ঘ এ পথচলায় বরাবরই মহল বিশেষের ‘টার্গেট’ হতে হয়েছে তাকে। কিন্তু অনৈতিক, অবৈধ, দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতিকে ‘পাত্তা’ দেওয়াটা ধাঁচে নেই তাঁর।

আরও পড়ুন: তাকসিম খানের মুখেই ‘শেষ হাসি’; ওয়াসার নেতৃত্ব দিবেন আরও ৩ বছর

অথচ গুটিকয়েক প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স বা অনলাইন মিডিয়া- সব জায়গাতেই ‘আক্রোশ’ ঝরে তাকে ঘিরেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসবের নেপথ্য কারণ জানেন।

কাজের মানুষকে তিনি মূল্যায়ন করেন, পুরস্কারও দেন। ফলশ্রুতিতে ‘বিরল’ এক রেকর্ড গড়েই ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে পুনরায় নিয়োগ পেয়েছেন তাকসিম এ খান।

নিজের এবারের নিয়োগের এক মাসের মাথায় গণমাধ্যমকর্মীদের সঈে মতবিনিময় করেছেন, খোলামেলা কথা বলেছেন তাকসিম এ খান। অনেক অপ্রিয় বিষয়বস্তুও উঠে এসেছে তার বক্তব্যে।

অবশ্য এ বক্তব্যে কেউ হতাশ হয়েছেন কেউ বা আবার মুখ বেজার করেছেন।কিন্তু একজন তাকসিম এ খান কথা বলেছেন নিজের স্টাইলে, প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেই।

দিনশেষে বিজয়মাল্য কেন তার গলাতেই এ বিষয়টিও বুঝিয়ে দিয়েছেন সাবলীল উপস্থাপনায়। সোজা সাপ্টা ওয়াসার এমডি বলেছেন, ‘ওয়াসার সাফল্যের কারণেই ‘একটি গোষ্ঠী’ সমালোচনা করছে।’

বিষয়টি পরিস্কার করেই তাকসিম এ খানের মন্তব্য- ‘ঢাকা ওয়াসার নেওয়া ঘুরে দাঁড়াও কর্মসূচির পাঁচটি চ্যালেঞ্জের একটি হচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহল। ওয়াসার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ‘অনৈতিক, অবৈধ, দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতি’ যারা করতে পারছে না তারাই এসব সমালোচনা করছে।’

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এভাবেই নিজেকে মেলে ধরেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।

এদিন ঢাকা ওয়াসার গত ১০ বছরের অর্জিত সফলতা তুলে ধরতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, ‘গত ১০ বছরের ওয়াসার অর্জন দেখেই সরকার তাকে আবার নিয়োগ দিয়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৯ সালে তাকসিম এ খানকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে তার মেয়াদ বাড়ানো হয় পাঁচ দফা।

তার পঞ্চম দফার মেয়াদ শেষ হয় ১৪ অক্টোবর। তাকে পুনরায় যেন আর নিয়োগ দেওয়া না হয়, সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই তোড়জোড় শুরু করে একটি বিশেষ মহল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপরেই পূর্ণ আস্থা রাখেন। ফলে তাকে ষষ্ঠবারের মতোন আরও তিন বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দেয় সরকার।

সূত্র জানায়, তার পুনঃনিয়োগের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট হয়েছে, আগামী রোববার যার আদেশের তারিখ রয়েছে।

আলোচিত এ মতবিনিময় সভার শুরুতে গত ১০ বছরের অর্জনের ফিরিস্তি তুলে ধরেন তাকসিম এ খান। এছাড়া ওয়াসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও জানান। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

তাকসিম এ খান বলেন, গত দশ বছরে ওয়াসার অনেক সাফল্য আছে, অর্জন হয়েছে। সরকারও অর্জন চায়, সাফল্য চায়। এ কারণেই তাকে আবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাফল্য হয়েছে এবং সরকার সেটাই চাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পাঁচটা চ্যালেঞ্জর মধ্যে পঞ্চমটা হচ্ছে ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড গ্রুপ। সব জায়গায় এই ধরনের একটা গ্রুপ থাকতে পারে, যেটা আমাদের ভেতরেও আছে, বাইরেও আছে। সরকারের মধ্যে আছে, সরকারের বাইরে আছে। যাদের স্বার্থে আঘাত পড়ে তারাই এই সমালোচনা করে। তারা একটা সঙ্ঘবদ্ধভাবে প্রচারণাও চালায়।’

তাকসিম এ খান আরও বলেন, ‘ওয়াসার গত দশ বছরের কর্মকাণ্ডে অস্বচ্ছতা নেই। ওয়াসায় সুশাসন ফিরেছে। এটা হতে গিয়ে অনেকের স্বার্থে লেগেছে, অসুবিধা হয়েছে।’

“আপনি যখন সুশাসন কায়েম করেন তখন যারা সুশাসন চায় না সে কি করবে? আপনি যখন দুর্নীতিবিরোধী কাজ করেন, তখন যে দুর্নীতি করে সে কি করবে? তার পথ হল প্রচারণা চালানো আর আমাকে সরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তো ভালো। আমি যদি না থাকি তাহলে ওই গোষ্ঠী, যারা আগে অনৈতিক কাজটা করতে পারত, তারা আবারও একই কাজ করতে পারবে’ যোগ করেন তাকসিম এ খান।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, ঢাকায় দৈনিক ২৫০ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও ওয়াসা ২৬৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। ৮৬০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভ থেকে এবং পাঁচটি শোধনাগারের মাধ্যমে ৩৩ শতাংশ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

ঢাকা ওয়াসা ২০২৪ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ পানি ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করবে। বর্তমানে ঢাকার ২০ শতাংশ পয়োবর্জ্য শোধন করতে পারে ওয়াসা। এ ক্ষেত্রে ২০২৭ সালের মধ্যে শতভাগ সক্ষমতা অর্জনের জন্য কাজ চলছে বলে জানান ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান।

ঢাকা ওয়াসার ৯০ শতাংশ পানি বিশুদ্ধ, মন্তব্য করে তাকসিম এ খান বলেন, ‘পাইপের মাধ্যমে সরবরাহের কারণে অনেক সময় পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাসা-বাড়িতে রিজার্ভ ট্যাংক ও ছাদের ট্যাংকেও ময়লা জমে পানি দূষিত হয়।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা রাজধানীতে একটি জরিপ চালিয়েছে। সেই জরিপে দেখা গেছে, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বাসাবাড়ির পানির ট্যাংক পরিষ্কার না করার কারণে দূষিত হয়েছে বা জীবাণু পাওয়া গেছে।’

আবার অনেক সময় পাইপ লাইনের মাধ্যমে দূষিত পানি ঢুকে গেছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে নানা রকম কার্কক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।’

কালের আলো/এসআর/ এমএইচ