ওয়াসার এমডির নিয়োগ চ্যালেঞ্জের রিট খারিজ, চিহ্নিত ‘ভেস্টেড ইন্টারেস্ট গ্রুপ’!

প্রকাশিতঃ 7:31 pm | October 18, 2020

তাকসিম

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

আইনের কোন ব্যত্যয় না ঘটায় ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের নিয়োগ প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকার্ট। রবিবার (১৮ অক্টোবর) বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আরও পড়ুনঃ ওয়াসার এমডি হিসেবে ‘ডাবল হ্যাট্টিক’; সমালোচনার ‘রহস্য’ খোলাসা তাকসিম খানের

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আহমেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর-উস সাদিক চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার মাসুম।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোরশেদের পক্ষে আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ এ রিট দায়ের করেন। রিটে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঢাকা ওয়াসার এমডিসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেওয়ার পর ষষ্ঠবারের মতো এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে প্রথম নিয়োগ পান তাকসিম এ খান। এরপর চার দফায় তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ১৪ অক্টোবর তার পঞ্চমবারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

এর আগে এক নোটিশে বিশেষ বোর্ড সভার আয়োজন করা হয়। সভার আলোচ্য বিষয় ছিল তাকসিম এ খানকে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ দিতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো। বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়াসার বোর্ড সদস্য ও সরকারদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।

সূত্র জানায়, তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ঢাকা ওয়াসাকে ঘুরে দাঁড় করাতে নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাঁর ইতিবাচক নেতৃত্বে ওয়াসার অনেক সাফল্য ও অর্জন রয়েছে। ফলশ্রুতিতে তাঁর কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ষষ্ঠবারের মতো তাকে নেতৃত্বে এনেছেন।

গত শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার ঘুরে দাঁড়াও কর্মসূচি যেটি হাতে নেওয়া হয়েছিল সেখানে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ ছিল।

এর মধ্যে পঞ্চম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড গ্রুপ (স্বার্থান্বেষী মহল)। সব জায়গায় এই ধরনের একটা গ্রুপ বা গোষ্ঠী থাকে, যেটা আমাদের ভেতরেও আছে, বাইরেও আছে। যাদের স্বার্থে আঘাত পড়ে তারাই সমালোচনা করে এবং ওয়াসার অর্জনের তথা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বিরোধীতা করে। তারা সঙ্ঘবদ্ধভাবে প্রচারণাও চালায়।’

তাকসিম এ খান সেদিন আরও বলেন, ‘ওয়াসার গত দশ বছরের কর্মকান্ড স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে। ওয়াসায় সুশাসন ফিরেছে। এটা হতে গিয়ে অনেকের স্বার্থে লেগেছে, অনেকের অসুবিধাও হয়েছে।’

ওয়াসার এমডির এ বক্তব্যের সূত্র ধরেই অনেক বিষয়াদি খোলাসা হয়েছে এবং দায়ের করা রিটের নেপথ্য কারণও পরিস্কার হয়েছে। পাশাপাশি ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড গ্রুপ বা স্বার্থান্বেষী মহলও ‘চিহ্নিত’ হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, রিটকারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোরশেদ ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েও একই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ফেলো এবং সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে কেন এবং কী কারণে রিট পিটিশন দায়ের করলেন? এখানে স্বার্থহানির কোন বিষয় জড়িত কী না এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ওয়াসার পরিমন্ডলে জোর দাবি উঠেছে।

একই সূত্র জানায়, রিট পিটিশন দায়ের করা প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোরশেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ঢাকা ওয়াসার বর্তমান বোর্ড সদস্য মো.ওয়ালী উল্লাহ শিকদারের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অসদাচরণের অভিযোগে গত কয়েক বছর আগে তাকে ওয়াসার চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।

পরবর্তীতে তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে দু’টি শর্তে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের পরিবর্তে দুটি ইনক্রিমেন্ট হেল্ড আপ করে ভবিষ্যতে এরকম কর্মকান্ড করবেন না এ মর্মে মুচলেকা দিলে তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। এ ওয়ালী উল্লাহ শিকদারই সেই বোর্ড সভায় ওয়াসার এমডি নিয়োগের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

সূত্র মতে, ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইবি) তাদের প্রতিনিধি হিসেবে মো.ওয়ালী উল্লাহ শিকদারকে ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন। অথচ ঢাকা ওয়াসায় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট থাকা সত্বেও তিনি কীভাবে ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সদস্য হয়েছিলেন সেই রহস্যের আজও কিনারা হয়নি। তবে কী নিজের গোমর ফাঁসের আশঙ্কা থেকেই তিনি তাকসিম এ খানকে ওয়াসার এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়ার বিরোধীতা করেছিলেন, এমন প্রশ্নও বড় দাগে উঠে এসেছে।

ওয়াসার এমডির মতবিনিময় সভায় দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী, ওয়াসার ঘুরে দাঁড়াও কর্মসূচির পাঁচ চ্যালেঞ্জের একটি হচ্ছে ‘ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড গ্রুপ’ বা স্বার্থান্বেষী মহল। ওয়াসার এমডির নিয়োগ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে রিট পিটিশন দায়েরও কী ওই গ্রুপেরই কোন এজেন্ডা ছিল, এমন প্রশ্নও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন মহলে।

কালের আলো/এসআর/আরআই