৭৫ পরবর্তী অবৈধ সরকারগুলোই দুর্নীতির বীজ বপন করে গেছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 2:00 pm | October 25, 2020
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
৭৫ পরবর্তী অবৈধ সরকারগুলোই দুর্নীতির বীজ বপন করে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতির বীজ বপন করে গেছে পঁচাত্তর পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সরকারগুলো।’
রোববার (২৫ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) রজতজয়ন্তীর উদ্বোধনকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতির বীজ বপন করে গেছে পঁচাত্তর পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সরকারগুলো। প্রথমে জিয়াউর রহমান এরপরে এরশাদ, এরপর খালেদা জিয়া। তারা দুর্নীতিকে শুধু প্রশ্রয় দেয়া না, নিজেরাই দুর্নীতি করে গেছে এবং দুর্নীতিকে লালন-পালন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা কিন্তু সেটা কখনও করছি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় আমাদের দেশে ছিল কী? যতই দুর্নীতি, অনিয়ম হোক, সেগুলো ধামাচাপা দেয়া হতো। আর সমস্যাগুলো ওই যে কথায় বলে কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা। আমাদের সরকার কিন্তু তা করছে না।’
তিনি বলেন, ‘কোথাও কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হলে পরে আমরা কিন্তু এটা চিন্তা করি না যে এটার সঙ্গে আবার দল জড়িত কি না। আমার অমুক জড়িত কি না। পার্টির বদনাম হবে কি না। সরকারের বদনাম হবে কি না- আমরা কিন্তু সেই চিন্তা কখনও করি না। আমি চিন্তা করি, সেখানে অন্যায় হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা নিতে গিয়ে হয় এমন অনেক সময় দোষটা আমাদের ওপর চলে আসে। তখন এমন মনে হয়- আওয়ামী লীগ সরকারই যেন দুর্নীতি করছে। আসলে তা এমন নয়।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দায়িত্বশীলতা নিয়ে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে আপনারা কাজ করবেন। সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা চাই, বাস্তবমুখিতা চাই, দেশ ও জাতির প্রতি যেন কর্তব্যবোধ থাকে। নীতিহীন সাংবাদিকতা কোনো দেশের কল্যাণ আনতে পারে না, বরং ক্ষতি করে। নীতিহীন সাংবাদিকতাটা যেন না হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে একটা দায়িত্ববোধ নিয়ে চলতে হবে। দায়িত্ববোধটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। …অহেতুক সমালোচনা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে সেই হলুদ সাংবাদিকতাটা যেন না থাকে। আর অনলাইনে সমাজভিত্তিক, মানবিক, মানুষের কল্যাণ, উন্নয়নের দিকে যেন মানুষের দৃষ্টি থাকে। সেই ধরনের সাংবাদিকতাই যেন হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বক্তব্য উদ্বৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছেন- ‘নীতিহীন রাজনীতি দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পারে না। তেমনি নীতিহীন সাংবাদিকতা দেশের কোনো কল্যাণ করতে পারে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সাংবাদিকতারও একটা নীতিমালা আছে সেই নীতিমালাটা সবাইকে মেনে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, দায়িত্বশীলতা নিয়ে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে আপনারা কাজ করবেন। আপনাদের রিপোর্টগুলো অনেক সহযোগিতা করে, আপনাদের রিপোর্ট পড়ে পড়ে বিভিন্ন পত্রিকায় অনেক সময় অনেক ঘটনা আসে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেই রিপোর্ট দেখেই কিন্তু অনেক অসহায় মানুষের পাশে যেমন দাঁড়াই। আবার অনেক অন্যায় ঘটনা ঘটলে তার প্রতিকার করতে পারি, অনেক দোষীকে শাস্তি দিতে পারি।
‘অনেক ঝুঁকি নিয়ে রিপোর্ট করেন, সে জন্য ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি এইটুকু অনুরোধ করবো আপনারা যেমন ধন্যবাদযোগ্য কাজও করেন আবার এমন রিপোর্ট কইরেন না যেটা মানুষকে বিভ্রান্ত করে বা মানুষ বিভ্রান্তির পথে যায়। ’
শেখ হাসিনা বলেন, আসলে সংবাদপত্র হলো সমাজের দর্পণ। সেই সমাজের দর্পণ যেটা হবে সেটা যেন মানুষের চিন্তা চেতনাটা যেন অন্তত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়। তাদের ভেতরে মানবতাবোধটা যেন থাকে। তারা যেন মানুষের কল্যাণে কাজ করে।
করোনার মহামারীতে সাংবাদিকদের সহায়তার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে অনেকেই নানা রকম সমস্যায় ভুগছে। দুস্থ, অসহায় সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আমরা সেখানে প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা ৩শ ৫০ জন সাংবাদিকের মাঝে বিতরণ করেছি।
সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে একটু মামলা হলেই সাংবাদিকদের চট করে গ্রেফতার করা হতো। আমরা কিন্তু সেটাও সংশোধন করে দিয়েছি। সেদিক থেকেও আমরা সাংবাদিকদের জন্য নানা রকম সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে দিয়েছি। যাতে হয়রানির সম্মুখীন না হতে হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর সন্তান হিসেবে আমিও সাংবাদিক পরিবারেরই সদস্য।
দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আমরা চাই দেশকে সেভাবে এগিয়ে নিতে। জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্য সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আমাদের প্রচেষ্টাই হচ্ছে মানুষের জীবনটাকে আরও উন্নত করা।
গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্রান্তে থেকে রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি, উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান শাহজাহান সরদার।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ডিআরইউর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, উদযাপন কমিটির কো-চেয়ারম্যান, ডিআরইউর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ফিরোজ, উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ডিআরইউর সহ-সভাপতি নজরুল কবির, ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী, ডিআরইউর সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীবুর রহমান।
কালের আলো/এসবি/এএনএল