এমন পরিচালক কী আর পাবে মমেক হাসপাতাল?
প্রকাশিতঃ 1:33 pm | August 14, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে অবধারিতভাবেই সামনে চলে এলো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহমেদের নাম। নিজের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বললেন, ‘ময়মনসিংহ মেডিকেলে আমার চাঁপাইনবাবগঞ্জের এখনো ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী আছে। তাদের দেখভাল আমি করি। ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে আসতাম এদেরকে। ডিরেক্টর নাসির স্যার খুব সহযোগিতা করতেন। নাসির স্যার প্রায়ই বলতেন আমার বাবা দুই বার এমপি ছিলেন। জনসেবা কীভাবে করতে হয় আমি জানি। কিন্তু আমি আপনার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত মানবতা শিখি। আমি স্যারকে বলতাম আপনার মেডিকেলটা এতো ভালো। রাজশাহীতে চিকিৎসা পায় না, তাই আপনার মেডিকেলে নিয়ে আসি।’
নিজের বিদায়লগ্নে যেন এক রকম স্বীকৃতিই দিয়ে গেলেন এই পুলিশ সুপার (এসপি)। দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে সুচিকিৎসা নির্বাসনে সেখানে সেবার মানে অভূতপূর্ব এক উন্নতি ঘটিয়েই দেখিয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহমেদ।
জেলার একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হাসপাতালের চেহারা পাল্টে দেওয়ায় পরিচালকের কৃতিত্বের প্রশংসা করলেও কথিত এক সিন্ডিকেটের যারা নিন্দুকের ভূমিকায় অবতীর্ণ, তাদের সমালোচনার শেষ নেই গুণী এ মানুষটিকে নিয়ে।
উচ্চ পদস্থ এই সেনা কর্মকর্তা দুই বছর নয় মাসের কর্মযজ্ঞে প্রকারন্তরে ‘হৃদয় দিয়েই হৃদয়’ কিনেছেন এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের। এই কারণেই হয়তো তিনি সবার চেয়ে আলাদা। এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী কালের আলোকে বললেন, ‘অতীতে অনেক পরিচালকই এসেছেন। সেই ১৯৬২ সাল থেকে আজ অবধি। তাদের বেশিরভাগই ব্যস্ত ছিলেন রুটিন ওয়ার্কে।
কিন্তু একজন নাছির উদ্দিন আহমেদ রোগী এবং চিকিৎসক থেকে শুরু করে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবেই কাজ করেছেন। এজন্যই কতিপয় স্বার্থবাদীদের কাছেই রীতিমতো ‘গলার কাঁটা’ হয়েছেন। তিনি চলে গেলো এই হাসপাতালের ভাগ্যে কী আর এমন ‘রোগী ও চিকিৎসক’ বান্ধব পরিচালক পাবে,’ তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে এই প্রশ্ন রাখেন হাসপাতালের এক অফিস সহায়কও।
ময়মনসিংহের সচেতন জনগোষ্ঠীর ভাষ্যও অভিন্ন। তাঁরাও বলছেন- ‘ষড়যন্ত্রকারী মহলের গোয়েবলসীয় প্রচারণা বার বার ক্ষতবিক্ষত করেছে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া এই পরিচালককে। হয়তো এই কারণেই কখনো কখনো তিনি হয়ে ওঠেন অভিমানী। সময়ের আগেই এই হাসপাতালকে বিদায় জানাতে চান কর্মজীবনে সৎ, দৃঢ়চেতা, আদর্শনিষ্ঠ ও নীতিবান দেশপ্রেমিক সেনা বাহিনীর এই চিকিৎসক কর্মকর্তা।’
কেন অন্য সব পরিচালক থেকে ব্যতিক্রম, অনন্য সাধারণ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনেকেই বলছেন, নিজের পরিবার থেকেই মানবসেবার শিক্ষা পেয়েছেন তিনি। তাঁর বাবা প্রয়াত চিকিৎসক আব্দুস সাত্তার ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর।
যিনি বঙ্গবন্ধু’র নেতৃত্বে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত চাঁদপুর-২ আসনে পরপর দু’বার সংসদ সদস্য ছিলেন। বাবা’র উৎসাহে শিশুমনে যে স্বপ্ন দেখতেন তার পূর্ণতা দিয়েছেন এই মহান পেশায় থিতু হয়েই। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মতোই ময়মনসিংহ মেডিকলে কলেজ হাসপতালকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের একাধিক শিক্ষার্থী কালের আলোকে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ বছর ৯ মাস আগেও কী অবস্থায় ছিলো, এখন কী অবস্থায় রূপ পেয়েছে? নি:সন্দেহে এই সাফল্যের রূপকার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহমেদ।
অবশ্য স্থানীয়দের এমন ভাষ্যেই যেন ‘গাত্রদাহ’ তৈরি হয় কথিত সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাঝে। কিন্তু তাদের চোখে আঙুল দিয়ে একজন বলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিনের নিজস্ব মস্তিষ্কের ফসল ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস। এটি তো দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যেই প্রথম ও একমাত্র।
একই সঙ্গে এই হাসপাতালকে অনিয়ম, দুর্নীতি, দালাল ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মুক্ত করে সেবার পরিবেশ পুরোমাত্রায় ফিরিয়ে এনে যে নজির প্রথা বিরোধী এই পরিচালক সৃষ্টি করেছেন তা কী দেশের অন্য সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে?
হুমায়ুন কবির নামে সরকারি এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কালের আলোকে বলেন, ‘মহানুভব এ মানুষটি চিকিৎসাসেবার মানে যেমন পরিবর্তন এনেছেন, তেমনি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং সার্বিক পরিবেশ পাল্টে দিয়েছেন। অতীতের পরিচালকেরা কী এমনটি করতে পেরেছেন?
নিজের স্বজনের চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগে সম্প্রতি তিনি ঘুরে দেখেছেন প্রাচীন এই হাসপাতাল। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, ‘নতুন ভবনের অষ্টম তলায় কেবিন এবং কয়েকটি ওয়ার্ডের পরিবেশ উন্নতমানের বেসরকারি হাসপাতালকে মনে করিয়ে দেয়। অত্যাধুনিক বিছানা এবং আসবাবপত্রে সাজানো কেবিন ও ওয়ার্ডগুলোও অসাধারণ। আগে কী এমনটি ছিলো?’
‘দেশের চিকিৎসা অঙ্গণের একজন উজ্জ্বল প্রতিভূ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিনের বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বকে থমকে দিয়ে নিজেদের আখের গুছাতেই এখানো মশগুল মহল বিশেষ। তাঁরা কী পারবেন আরেকজন নাছির উদ্দিন আহমেদ তৈরি করতে?’
কালের আলো/এএস/ওএইচ/এএ