আরও শক্তিশালী হচ্ছে সেনাবাহিনী, সংযোজিত হচ্ছে দূরপাল্লার এমএলআরএস ও মিসাইল
প্রকাশিতঃ 8:53 pm | November 09, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে শক্তিশালী সেনাবাহিনীতে রূপান্তরের লক্ষে কার্যকর সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক এ বাহিনীকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করতে প্রশ্নাতীত আন্তরিকতার প্রমাণও দিয়েছেন বঙ্গকন্যা।
এক সময় যা ছিল কল্পনা এখন সেটি হাতের মুঠোয়। সেনাবাহিনীর সার্বিক সক্ষমতা অর্জনে ট্যাংক, এপিসি, সেল্ফ প্রোপেল্ড বা আর্টিলারি গান যুক্ত হয়েছে আরও আগেই। গত দুই বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক দিক নির্দেশনায় সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে সমকালীন বিশ্বে সেনাবাহিনীসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম পর্যায়ে পৌঁছেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
পেশাদার, দক্ষ ও সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের এমন সব তথ্যই জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। একই সঙ্গে তাঁর তথ্যসমৃদ্ধ উচ্চারণই প্রমাণ করে দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর সক্ষমতার বিষয়টিও।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীর সার্বিক ফায়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে দূরপাল্লার মাল্টিপল লাঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস) এবং মিসাইল কেনা হয়েছে। শিগগির এসব সমরাস্ত্র যুক্ত হবে সেনাবাহিনীতে। একই সঙ্গে ১৫৫ মিলিমিটার গান এবং অত্যাধুনিক মর্টার সিষ্টেমও সেনাবাহিনীতে সংযোজনের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

সোমবার (০৯ নভেম্বর) সকালে বগুড়া সেনানিবাসের শহীদ লেফটেন্যান্ট বদিউজ্জামান প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪টি ইউনিটের রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
সেনাবাহিনীর আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সুযোগ দেওয়ার জন্য সেনাপ্রধানের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নিজের বক্তব্যের শুরুতেই তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নেতৃত্বে সূচিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম। যার বলিষ্ঠ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য আপামর জনগণের সঙ্গে একাত্ন হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমাদের মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে এবং আমাদের আত্নপরিচয় প্রতিষ্ঠিত করতে। ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি আমাদের এই স্বাধীন দেশ।’

রেজিমেন্টাল কালারের সম্মান অটুট রাখার জন্য চারটি ইউনিটের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আর্টডক জিওসি বলেন, ‘সেনাবাহিনী তথা দেশ মাতৃকার সেবায় আত্নোৎসর্গের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থেকে রেজিমেন্টাল মূলমন্ত্র ‘সম্মান ও গৌরব’ এবং ‘দ্রুত ও নিশ্চিত’ এর যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে হবে।’
ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি আধুনিক ও সক্ষম সেনাবাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত প্রতিরক্ষা নীত ১৯৭৪ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিরক্ষা নীতি ২০১৮ এর আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
সেনাবাহিনীর শক্তিমত্তা বৃদ্ধির ইতিবাচক তথ্য জানিয়ে তিনি এ সময় আরও বলেন, ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক অরলিকন গান সিস্টেম সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে। এর পাশাপাশি অত্যাধুনিক রাডার, সিমুলেটর, মেটেরোলজিক্যাল সিস্টেমসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আধুনিক প্রযুক্তির অস্ত্র ও সরঞ্জামাদির মূল্যায়ন, প্রমিতকরণ ও ক্রয়ের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সুযোগ্য নেতৃত্বে গত দুই বছরে সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রার অংশ হিসেবে উন্নত প্রযুক্তির যোগাযোগ সরঞ্জামাদি সিগন্যাল কোরে সংযুক্ত হয়েছে বলেও গুরুত্বের সঙ্গেই উচ্চারণ করেন আর্টডকের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম সংযোজিত হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে বিভিন্ন সেনানিবাসে হাব স্টেশনসহ (ঠঝঅঞ) টার্মিনাল স্থাপিত হবে, যার মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সাথে সংযুক্ত হয়ে আধুনিক তথ্য প্রবাহে পদার্পণ করবো।
পার্বত্য চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার মান উন্নয়নের জন্য ফাইবার অপটিক ব্যবহারের পাশাপাশি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা স্থাপিত হচ্ছে, যা জোন সদর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন ভয়েস ও ডাটা যোগাযোগ নিশ্চিত করবে। এছাড়াও বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোর সম্প্রসারণের আওতায় বরিশাল সেনানিবাসে একটি ডিভিশনাল সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন, একটি স্ট্যাটিক সিগন্যাল কোম্পানী এবং দু’টি ব্রিগেড সিগন্যাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।’

এর আগে আর্টডকের জিওসি বগুড়া সেনানিবাসের শহীদ লেফটেন্যান্ট বদিউজ্জামান প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে ১১ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও বগুড়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান তাকে স্বাগত জানান।
এ সময় সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও রংপুর এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলামসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্যারেড কমান্ডার লে: কর্নেল মীর শাফকাত হোসাইন এর নেতৃত্বে ১১ পদাতিক ডিভিশনের একটি সম্মিলিত চৌকষ দল কুচকাওয়াজ প্রদর্শন এবং প্রধান অতিথিকে জেনারেল সালাম প্রদান করেন। পরে সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে আর্টডকের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে চারটি ইউনিটকে রেজিমেন্টাল পতাকা প্রদান করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে