বায়োবিদ্যুৎ উৎপাদনের অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিইউপির, গবেষণায় সহযোগিতার আশ্বাস প্রতিমন্ত্রীর
প্রকাশিতঃ 9:14 pm | November 23, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
এবার বায়োবিদ্যুৎ উৎপাদনের অভিনব এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি)। ৫ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এ ভার্টিক্যাল উইনড টারবাইনের যুৎসই একটি নামও দেওয়া হয়েছে ‘অনুভা’। শুধুমাত্র বায়ুশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যাধুনিক এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে সবাইকে তাকও লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষকরা।
স্বয়ং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এমপি এ অভিনব প্রযুক্তির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। তিনি বিইউপির সব ধরণের গবেষণা কাজে সার্বিক সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাস্থ বিইউপি প্লাজার পশ্চিম পাশের মাঠে ‘অনুভা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজের এ অনুভূতির কথা তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জ্বালানী নির্ভরতা কমিয়ে সহনশীল কাঠামোর মাধ্যমে প্রকৃতির বায়ুশক্তিকে ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে নিজেদের উদ্ভাবনী কৌশলকে কাজে লাগায় বিইউপি’র একদল গবেষক।
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ও পণ্যের মাধ্যমে অভিনব ব্লেডের নকশার সঈে স্বয়ংক্রিয় গতিরোধক ব্যবস্থা যুক্ত করে তারা তৈরি করেন হাইব্রিড ভার্টিক্যাল টারবাইন। পরবর্তীতে এ উদ্ভাবনটি অস্ট্রেলীয় সরকারের মেধাস্বত্ব প্রতিষ্ঠান আইপি অস্ট্রেলিয়ার সম্মুখে উপস্থাপিত হয়।
একই সূত্র আরও জানায়, আইপি অস্ট্রেলিয়া এই উদ্ভাবনটিকে ইনোভেশন পেটেন্ট হিসেবে বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, সহকারী অধ্যাপক মো. রাজীব উদ্দিন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিগাস বাংলাদেশ এর সামিন ইশরাক সিদ্দিকীর অনুকূলে চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর নথিভূক্ত করে। পেটেন্টটির যথাযথ প্রায়োগিক ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্প, পল্লী ও উপকূল অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলেও মতামত ব্যক্ত করা হয়।
জাঁকালো আয়োজনের মাধ্যমে ‘অনুভা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বিইউপির বায়োবিদ্যুৎ উৎপাদনের এই অভিনব প্রযুক্তি দেশের স্বনির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বিইউপির উপাচার্য এবং তাঁর নেতৃত্বে এ গবেষণার সঈে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে আরও গবেষণা করতে উৎসাহিত করে বলেন, ‘এ ধরনের গবেষণাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আমার মন্ত্রণালয় সব সময় পাশে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারও এগিয়ে আসবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

‘ঢাকা শহরের সব বৈদ্যুতিক তার আগামী চার বছরের মধ্যে ভূগর্ভস্থ করার ঘোষণা দিয়ে নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘ধানমন্ডি এলাকায় তার মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট মিটারসহ আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় সংযুক্ত করে এখাতের স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহিতা আরও দৃঢ় করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে নানাভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে। বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দেশের ৯টি স্থানে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত উইন্ড ম্যাপিং করা হয়েছে। বায়ুর বেগ ৫ দশমিক ৭৫ মিটার/সেকেন্ড থেকে ৬ দশমিক ২৫ মিটার/সেকেন্ড বিবেচনায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বায়ু থেকে পাওয়া যেতে পারে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বর্জ্য থেকে ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে বিদ্যুৎ কেনার প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। সৌর বিদ্যুৎ থেকে এক হাজার ৫৭০ দশমিক ৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায় অনুমোদন পেয়েছে।’
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বর্তমানে ৬৫০ দশমিক ৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, যার মধ্যে সোলার ৪১৬ দশমিক ৩৯, বায়ুবিদ্যুৎ দুই দশমিক ৯ ও জলবিদ্যুৎ ২৩০ মেগাওয়াট উল্লেখযোগ্য। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে লক্ষ্যণীয় সাফল্য দেখাবে’ যোগ করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।

এ সময় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) এর ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান।
এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাসহ বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এসবি/এমআরকে