সেরাদের ‘সেরা’ এসপি মঈনুল হক

প্রকাশিতঃ 11:08 pm | January 09, 2018

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো:
দীর্ঘদিন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) ছিলেন তিনি। এ সময়টাতে মাদক সাম্রাজ্যে কাঁপন ধরিয়েছিলেন। মাদকের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে জুয়াও বন্ধ করেছিলেন পুরোপুরি। বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০১৩, ১৪ সালের অগ্নি সন্ত্রাস ও নাশকতার আন্দোলন দমনে করেছিলেন কঠোরভাবে।

প্রায় সাড়ে ৩ বছরের ময়মনসিংহ অধ্যায় সফলভাবে শেষের পর প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের এসপি’র দায়িত্বের কঠিন চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছেন। রূপগঞ্জে বড় অস্ত্র ভান্ডারেরও সন্ধান করেছিলেন। উদ্ধার করে চমকে দিয়েছিলেন দেশবাসীকে। রক্ষা করেছিলেন বড় রকমের সন্ত্রাসী হামলার কবল থেকে।

কর্মগুণেই পুলিশ বাহিনীতে স্ব-নামে খ্যাত এ কর্মকর্তার নামের পাশে পিপিএম পদকের পর এবার বসেছে বিপিএম পদকের সম্মান। তাঁর এমন সম্মান সাবেক ও বর্তমান কর্মস্থলে এসেছে খুশির খবর হয়ে।

সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে পথচলা এ পুলিশ কর্মকর্তা সামনের দিনগুলোতেও নিজের চেনা স্টাইলেই কাজ করতে চান। কাজের মাধ্যমেই যেন প্রমাণ করতে চান সেরাদের সেরা তিনি!

অবশ্য নিপাট ভদ্র এ মানুষটি নিজে সুস্থ সবলভাবে সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে যেন আগামী দিনেও কাজ করতে পারেন এমন দোয়াই চাইলেন।

পুলিশের ২০ তম ব্যাচের কর্মকর্তা মঈনুল হক ২০০১ সালের ৩১ মে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭০ সালের ২৯ ডিসেম্বর পটুয়াখালিতে জন্ম নেয়া চৌকষ এ পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি, এমএসসি সম্পন্ন করেন।

মঈনুল হকের পরিচিতজন মাত্রই বলেন, দায়িত্বকে ইবাদতের মতোন মেনেই কাজ করেন মঈনুল হক। অপরাধীদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে তাদের সাম্রাজ্য তছনছ করে দিতেই সিদ্ধহস্ত তিনি। নিভৃতচারী আবহের এ পুলিশ কর্মকর্তা এসপি হিসেবে একেক জেলায় তাঁর একেকটি সফল অধ্যায় শেষ করারই স্বাক্ষর রেখেছেন।

তাঁর কথাতে কোন সময়েই উঠে আসে না নিজের কথা কিংবা পরিবারের কথা। পুলিশের চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব তিনি উপভোগ করেন। তবে বরাবরই তিনি গুরুত্ব দেন নিজের টিম মেম্বারদের প্রতি। তাদের প্রতি আন্তরিকতাও মুগ্ধ করার মতোন। সেই কথাই যেন উচ্চারিত হয় তাঁর কন্ঠে- ‘আমাদের প্রতিটি মুহুর্ত কাটে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। প্রতি মুহুর্ত আমাদের পরিবার পরিজন ও সহকর্মীদের অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় থাকে। এ কারণে পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’

ময়মনসিংহের কোতোয়ালী মডেল থানায় এক ঐতিহাসিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যখন তাকে হৃদয়ের সবটুকু উষ্ণতা দিয়ে বিদায় জানানো হয়েছিল, সেই অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেদিন এমন উদাহরণই টেনেছিলেন মঈনুল হক।

বলেছিলেন, ‘পুলিশ সুপার একটি প্রতিষ্ঠান। আমার সাড়ে ৩ বছরের কর্মকালে ময়মনসিংহের পরিবেশ ছিল স্বস্তিকর। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জেরও। এখানকার পুলিশ সদস্যরা জীবনবাজি রেখে, পরিবারের মায়া-মমতা ভুলে জেলা পুলিশের কাজ আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেছে। ফলে সাড়ে ৩ বছর আগের চেয়ে এখন অবস্থা ভাল হয়েছে।’

সেদিন তিনি বলতে থাকেন, ‘ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে পুলিশ সদস্য থেকে শুরু করে তাদের পরিবার পরিজনসহ কমপক্ষে ১১ হাজার মানুষ সরাসরি সম্পৃক্ত। তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। একজন ইউনিট প্রধান হিসেবে আমি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি।’

নিজের কাজের স্টাইল সম্পর্কে সেইদিন মঈনুল হক বলেছিলেন, ‘আমার কাছাকাছি যারা থাকেন অনেকেই আমার কাছে ধমক খেয়েছেন। আমি রাগান্বিত হয়েছি। কিন্তু উদ্দেশ্য একটিই এ জেলার মানুষ যাতে শান্তিতে থাকে। কাজের ধরণের কারণে কাছের মানুষরা মুখে না বললেও কষ্ট পেয়েছে। এ কাজটি অনেক সময় আমি মাথা গরম করে করেছি। আবার বুঝে শুনেও করেছি। এটাই কাজের স্টাইল। ’

সোজা সাপ্টা উচ্চারণে বিশ্বাসী মঈনুল হক ছাত্র জীবনে সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনা অন্ত:প্রাণ মঈনুল বিশ্বাস করেন কাজের মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকা যায়।

আর এমনটি করেই তিনি ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় এসপি’র দায়িত্ব পালন করে মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন পেতেছেন। প্রমাণ করেছেন তিনি সেরা। সেরাদের সেরা।