গণপূর্ত থেকে ‘আউট’ আশরাফুল, নতুন প্রধান প্রকৌশলী শামীম

প্রকাশিতঃ 10:02 pm | December 13, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

নিজের কৃতকর্মের কারণেই কীনা প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে মাত্র এক বছরও টিকতে পারলেন না। ১১ মাস ১৭ দিনের মাথায় ‘আউট’ হয়ে যেন সাজঘরে ফিরলেন! নিজের বানানো অবৈধ সম্পদই যেন কাল হলো। গণপূর্ত অধিদপ্তরের আলোচিত-সমালোচিত এবং বিতর্কিত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের অবশেষে বিদায় ঘন্টা বাজলো। তার স্থলাভিষিক্ত হলেন হাউজ বিল্ডিংয়ের বিদায়ী ডিজি প্রকৌশলী শামীম আখতার।

আবার এই শামীম আখতারের পদেই বদলি করা হলো বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ থাকা আশরাফুল আলমকে। অর্থাৎ হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিজির চেয়ারটিতে এখন বসবেন তিনি।

রোববার (১৩ ডিসেম্বর) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আশরাফুল আলম ও শামীম আখতারের আলোচিত রদবদল সম্পন্ন হয়েছে। আর এ খবরটি মুহুর্তেই সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে হয়ে উঠেছে ‘হট কেক’। আকস্মিক এই রদবদলে সন্তুষ্টির পাল্লাই ভারী বলে মত দিয়েছেন অনেকেই।

উপসচিব মো. মোতাহার হোসেনের সই করা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখা-১ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এই দুই প্রকৌশলী আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তা না করলেও তারা এদিন বিকেল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজড) হিসেবে বিবেচিত হবেন।

মোহাম্মদ শামীম আখতার রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি এবং ১৯৮৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৯১ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি আইসিটি বিষয়ে ২০০২ সালে বুয়েট থকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা এবং ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বিসিএস (পাবলিক ওয়ার্কস) ক্যাডারে ১৫তম (১৯৯৫) ব্যাচের একজন কর্মকর্তা।

শামীম আখতার ১৯৯৮ সালে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, ২০০৮ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী, ২০১৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ২০১৮ সালে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০১৮ সালের ৮ মে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়ে পদোন্নতি পেয়ে মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

অপরদিকে, আশরাফুল আলমও বিসিএস ১৫তম ব্যাচের প্রকৌশলী। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। অধিদফতরের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৯ সালে রংপুর জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে ছিলেন তিনি। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর প্রধান প্রকৌশলী পদে চলতি দায়িত্বে পদোন্নতি পান তিনি। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ দিয়ে পদোন্নতি পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া ঘুষ নিয়ে এবং ‘ঘনিষ্ঠ’ ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার অভিযোগ রয়েছে তার নামে। বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে।

এমন নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আশরাফুল আলমের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। গণপূর্তের বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদাররা কেবল অধিদফতরেই নয়, এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়েও অভিযোগ করেছেন।

কালের আলো/এসকে/এমএম