আজ আমার মন ভালো, খুব ভালো…
প্রকাশিতঃ 6:21 pm | August 29, 2018
প্রভাস আমীন :
আজ আমার মন ভালো, খুব ভালো। অনেকদিন ধরে একটা গ্লানির পাথর চেপে বসেছিল মনে। আমরা যাদের দেখে সাংবাদিকতা শুরু করেছি, পেশাকে ভালোবেসেছি; তাদের একজন বিভূরঞ্জন সরকার। তখন অবশ্য তাকে আমরা চিনতাম তারিখ ইব্রাহিম নামে। আশির দশকে সাড়া জাগানো সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে এই নামেই লিখতেন তিনি।
কাল শুনলাম আমার জন্মসালে মানে ১৯৬৯ সালে দৈনিক আজাদীর প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করা বিভূদা পরে সংবাদ, জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। সম্পাদনা করেছেন সাপ্তাহিক চলতিপত্র, সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ, দৈনিক মাতৃভূমি। উনি লেখেন ভালো, বলেন ভালো, আদর্শের জায়গায় স্পষ্ট এবং দৃঢ়।
এমন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের একজন মানুষ গত দুই বছর ধরে একদম বেকার। তার হাতে ধরে সাংবাদিকতা শুরু করেছেন, এমন অনেকে এখন তারকা ও প্রভাবশালী। পরিচিত প্রায় সবার কাছে চাকরির জন্য ধর্না দিয়েছেন। অনেকেই আশ্বাস দিয়েছেন, চাকরি দেননি। মেয়ে ডাক্তারি পড়ছে, ছেলে বুয়েটে। কিন্তু সংসার চলতে তো টাকা লাগে। দাদা যখন বলতেন, দুইবছর ধরে তার পেশা ধার করা, তখন লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যায়।
পরিচিতের গন্ডি পেরিয়ে ফেসবুকের পাবলিক ফোরামেও নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন, চাকরি চেয়েছেন। পাননি। জীবন থেকে পালাতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। বিভূদার মত মানুষের এই অসহায়ত্ব দেখে নিজের অস্তিত্বের ভেতরে নিরাপত্তাহীনতার একটা শঙ্কা তৈরি হয়, কেঁপে উঠি।
বিভূরঞ্জন সরকারের এই অবস্থা হলে আমরা তো বাতাসে মিলিয়ে যাবো। ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে নাঈম ভাই (নাঈমুল ইসলাম খান) তাকে আমন্ত্রণ জানান। দুজনের সাথে কথা বলে কাল বিকেলে বিভূদাকে নিয়ে যাই নাঈম ভাইয়ের অফিসে যাই। কথায় বুঝলাম দুজনের মধ্যে বিশেষ কোনো অতীত ঘনিষ্ঠতা নেই। চলতি পরিচিতি। কিন্তু এক বসায় তার চাকরি এবং আর্থিক দায় সমাধান হয়ে গেল।
বিভূদা আজ থেকেই কাজে যোগ দিয়েছেন। তার পদবী গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক। দৈনিক আমাদের নতুন সময়, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি ও ডেইলি আওয়ার টাইমের যুগ্ম সম্পাদক। বাজারে নাঈম ভাইয়ের অনেক বদনাম। পত্রিকা তৈরি করে বিক্রি করে দেন, কর্মীকে কম টাকা দেন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নাঈম ভাই কাল বিভূদাকে যে মর্যাদা দিলেন, তা অমূল্য।
আমি বরাবরই নাঈম ভাইকে পছন্দ করি। তার মুখের ওপর বলা যায়, আপনি এটা ঠিক করেননি। আর তিনি যা করেন, সব প্রকাশ্যে। সাধু সাজার চেষ্টা করেন না। বিভূদা যে বিপাকে ছিলেন, তাতে নাঈম ভাইয়ের যে কোনো অফার গ্রহণে প্রস্তুত থাকতেন তিনি। পদ-পদবী, টাকা নিয়ে কোনো বার্গেইন হয়নি। হতে পারতো নাঈম ভাই যা বলছেন, বিভূদা তা মেনে নিয়েছেন। হয়েছে উল্টো।
বিভূদা যা বলেছেন, সামর্থ্য অনুযায়ী নাঈম ভাই তা মেনে নিয়েছেন। সবচেয়ে বড় যা দিয়েছেন, তা হলো সম্মান, মর্যাদা, আশাবাদ, আত্মবিশ্বাস। নাঈম ভাই চাইলে বিভূদাকে করুণা দেখাতে পারতেন। দেখাননি। বরং উল্টো বলেছেন, ‘আপনাকে পেলে, আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আমরা সমৃদ্ধ হবো। আমরা আপনাকে হেল্প করছি না, আমরা আমাদের হেল্পের জন্য আপনাকে চাইছি।’ আমি অবাক হয়ে যাই।
মানুষের মর্যাদাকে এভাবেই বুঝি সম্মান জানাতে হয়। যাদের কৃতজ্ঞ থাকার কথা ছিল, যাদের দুয়ারে ধর্না দিয়েছেন; তারা কেউ ফিরেও চায়নি। আর অতীত কোনো সম্পৃক্ততা ছাড়াই নাঈম ভাই ফেসবুক দেখে ডেকে এনে বিভূদাকে মর্যাদাপূর্ণ চাকরি দিলেন।
কৃতজ্ঞতা নাঈমুল ইসলাম খান। আপনার সাথে কখনো কাজ করা হয়নি বলে আফসোসটা আরো বাড়লো।
অভিনন্দন বিভূদা। আপনার নতুন অভিযান সফল হোক।
লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া