ক্রিকেটার মোসাদ্দেককে নিয়ে স্ত্রী সামিয়া’র যতো বিস্ফোরক তথ্য
প্রকাশিতঃ 11:52 am | August 30, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বিরুদ্ধে এবার বিস্ফোরক সব তথ্য নিয়ে মিডিয়ার সামনে এসেছেন স্ত্রী সামিয়া শারমিন উষা। ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অব্যাহত নির্যাতনের পর বাধ্য হয়েই সামিয়ার ভাই মোসাদ্দেককে সামিয়ার নামে জমির দলিল দিয়ে এসেছিল।
এরপর কিছুদিন সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আবারো বেঁকে বসেন মোসাদ্দেক। পুনরায় যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি বাড়িয়ে দিতেন শারীরিক নির্যাতনের মাত্রাও। কালের আলো’র কাছে সোজা সাপ্টা এসব অভিযোগ করেছেন সামিয়া শারমিন উষা নিজেই।
মঙ্গলবার (২৮ আগষ্ট) বিকেলে নগরীর আকুয়া চৌরঙ্গী মোড় মুন্সী বাড়িস্থ নিজের বাবা’র বাসায় জনপ্রিয় গণমাধ্যম কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে এসব অভিযোগ করেন তিনি। এই সময় সামিয়ার মা জহুরা বেগম ও ভাই এনামুল হক সুমন উপস্থিত ছিলেন।
দুই বছর প্রেমের পর দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় ২০১২ সালের ২৮ অক্টোবর নিজের খালাতো বোন সামিয়া শারমিন উষাকে বিয়ে করেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। সামিয়া দাবি করেন, আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে তাকে বিয়ে করেন মোসাদ্দেক। ওই সময় সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। ফলে প্রথম তিন বছর তাঁর যাবতীয় ভরণ পোষণ করতো তাঁর পরিবারই।
সামিয়া বলেন, বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সময়েই মেয়েরা মোসাদ্দেককে ম্যাসেজ করতো। আমি এসব নিয়ে কিছু বলতে গেলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতো। এরপর ন্যাশনাল টিমে নিয়মিত হওয়ার পর আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যায়।
বাসায় ফ্রেন্ডস নিয়ে আড্ডা দিতো, ড্রিংকস করতো মোসাদ্দেক। এমনকি শহরের সিলভার ক্যাসেলসহ বিভিন্ন হোটেলে মেয়ে নিয়ে অবাধ যাতায়াত ছিলো তার। আমি ওর মাকে বলতাম-আপনি তো কিছু বলতে পারেন। ওর মা বলতো আমি কিছু বলতে গেলে ও (মোসাদ্দেক) আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে। টাকা বন্ধ করে দিবে।’
আবেগ মেশানো কন্ঠে সামিয়া বরেন, ‘মোসাদ্দেক ঢাকায় বাসা নিয়েছে এক বছর হয়েছে। সেখানেও অনেক মেয়ে নিয়ে থাকে। আস্তে আস্তে আমাদের ঝামেলা বাড়ে। ওর খারাপ সময়ে আমি ওর পাশে ছিলাম। ভালো সময়ে আমাকে মোসাদ্দেক অত্যাচার ও এড়িয়ে চলতে শুরু করে।’
মোসাদ্দেকের ফোনে ব্লক ছিলো সামিয়ার নাম্বার
স্ত্রী সামিয়া বলেন, ‘আমার নাম্বার সব সময় ওর ফোনে ব্লক করে রাখতো। ফেসবুকসহ কোন কিছুতেই আমি ওর সঙ্গে অ্যাড ছিলাম না। এসব নিয়ে কিছু বললেই অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যেতো। পরিবারের সবাই নিয়ে বসে ঝামেলা মিচ্যুয়াল করেছে কয়েকবার। মোসাদ্দেক তখন বলেছে, ভালোভাবে সংসার করবে, নিজে সংশোধন হবে।’
সামিয়ার অভিযোগ, ‘অত্যাচারের পরও আমি ওকে (মোসাদ্দেক) ছেড়ে যাইনি। আমি বিয়ে করেছি ওকে ছাড়ার জন্য না। কিন্তু ও যৌতুকের জন্য আমাকে আবারো প্রেসার দিতে শুরু করলো। ওর লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা অনেক বড় ব্যাপার। আমার বাবা নাই। ভাইয়েরাও আলাদা ব্যাপার। ও বুঝতে পারলো এই প্রেসার দিয়ে কাজ হতে পারে। একটি সিনক্রিয়েট হবে ওকে তাড়িয়ে দিতে পারবো।’
‘আমার নামের জমির দলিল দেওয়া হয়েছিল মোসাদ্দেককে’
সামিয়ার বক্তব্য- ‘মোসাদ্দেকের প্রেসারের কারণে আমার বাবা আমার নামে জমির যে অংশ দিয়েছে সেটা ওর বাসায় দিয়ে এসেছে আমার ভাই। বলেছে, তোকে ক্যাশ টাকা তো দিতে পারলাম না তুই এটাতে বাড়ি করতে বা ভাড়া দিতে পারিস। তারপর কিছুদিন স্টপ গেছে। কতদিন পর আবার অত্যাচার শুরু হয়েছে।’
মোসাদ্দেকের অত্যাচারে নষ্ট হয় বাচ্চা
মোসাদ্দেক ও তাঁর পরিবারের অত্যাচারে তাঁর বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায় বলেও অভিযোগ করে সামিয়া শারমিন উষা বলেন, ‘ও যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে গেলো গত এপ্রিল মাসে তখন আমি কনসিপ করছিলাম। ডক্টর বেড রেস্ট দিয়েছে। তার মাকে বললাম। কিন্তু কনসিভ করার পর সবার অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলো। ওর মাও আমাকে বিভিন্নভাবে মারপিট করতো।’
মোসাদ্দেকের অভিযোগ ছিলো- সামিয়া তাঁর পরিবার নিয়ে এক ছাদের নিচে থাকতে চাইতো না। এই অভিযোগ অস্বীকার করে সামিয়া শারমিন বলেন, ‘আমি ৬ বছর ওর মায়ের সঙ্গেই থেকেছি। আমি কখনোই আলাদা থাকার প্রেসার দেইনি।
গত এক বছর যাবত ঢাকার মিরপুরে মোসাদ্দেক আলাদা বাসা নিয়ে থাকে। কিন্তু ও এটা আমাকে জানায়নি। কোনদিন বাসাতেও নিয়ে যায়নি। অথচ ওর মা-ভাইয়েরা ঠিকই ওই বাসায় গিয়ে থাকতো।’
‘সুজন ভাই কী জোর করে সংসার করিয়ে দিতে পারবে?’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের সমঝোতার উদ্যোগ প্রসঙ্গে সামিয়া বলেন, ‘১৪ আগষ্ট রাতে আমি মোসাদ্দেকের বাসায় গেলে ও আমাকে বলে তোমার সঙ্গে সংসার করবো না। তোমাকে আমার ভালো লাগে না। সুজন ভাই কী জোর করে আমাদের সংসার করিয়ে দিতে পারবে?
আমি সুজন ভাইকে বলে দিয়েছি ঢাকায় যাবো না। তখন আমি বলি, তুমি বলেছো, আমি তো বলিনি। এরপর আমি সুজন ভাইকে ফোন দিতে চাইলে ও আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে। ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর করে এবং আমাকে শারীরিকভাবে ব্যাপক নির্যাতন করে। পরে আমার ভাই এসে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।’
প্রসঙ্গত, গত রোববার (২৬ আগষ্ট) দুপুরে ময়মনসিংহ সদর আমলী আদালতের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রোজিনা খানের আদালতে মোসাদ্দেকের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবিতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন স্ত্রী সামিয়া শারমিন উষা।
পরে আদালত এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
কী বলেছিলেন মোসাদ্দেক
স্ত্রী সামিয়া শারমিন উষা’র এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরাসরি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কালের আলো। তবে সাড়া মেলেনি। তবে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বলেন, ‘ডিভোর্সের ১০ দিন পর আমার বিরুদ্ধে যৌতুকের অভিযোগ আনা রীতিমতো হাস্যকর।
মূলত দেশের মানুষের চোখে আমাকে এবং আমার পরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতেই এমন বানোয়াট অভিযোগ করা হয়েছে। ডিভোর্স পেপারস পাওয়ার পরও এতোদিন তারা কোন রিঅ্যাকশন দেখায়নি, কিছু বলেওনি। অথচ আজ বলছে আমি ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেছি। এটা নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়।’
ডিভোর্স প্রসঙ্গে মোসাদ্দেক বলছিলেন, ‘আমার স্ত্রী চাইতো আমি তাকে নিয়ে আলাদা থাকি। আমার মা, ভাইদের সঙ্গে সংসার করতে চাইতো না। আমার মা’র সঙ্গে প্রায় সময়েই বেয়াদবিও করতো।
কিন্তু ১০ বছর আগে আমি যখন আমার বাবাকে হারিয়েছি তখন আমার মায়ের শ্রম-ঘামেই আমি ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হয়ে ওঠেছি। মা ছাড়া আমি রিক্ত, নি:স্ব। এই নিয়ে মনোমালিন্য। অত:পর ডিভোর্স।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন ভাইয়ের সঙ্গে গত ১৫ আগষ্ট আমাদের দু’জনেরই (সামিয়া) সমঝোতার জন্য বসার কথা ছিল। আমি আগ্রহী থাকলেও মূলত ওর (সামিয়া) অনিচ্ছার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। পরে আমি তাকে ডিভোর্স পাঠিয়েছি।’
কালের আলো/এসএস/এএ
ভিডিও: