‘গুজব’ উৎপাদনের ‘কারখানা’ আলজাজিরা!

প্রকাশিতঃ 10:47 pm | February 02, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :  

১৯৯৯ সালে আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার প্রচার করে চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলো কাতারভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম আলজাজিরা টেলিভিশন। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে বিশ্বের অনেক দেশে এ টিভি চ্যানেলটির সম্প্রচার তাদের দেশে বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মাধ্যমে শান্তি, শৃঙ্খলা ও সংহতি বিনষ্টের মিশন নিয়েছে কথিত এ গণমাধ্যম।

আরও পড়ুন: সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে আল-জাজিরার ‘মিশন উইন্টার প্রোপাগান্ডা’

বাংলাদেশকেও বারবার নিজেদের গুজবের নিশানা করেছে আলজাজিরা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর প্রয়াস, ভাসানচরে রোহিঈাদের স্থানান্তরের সরকারি উদ্যোগকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন প্রচেষ্টা চালায় আলজাজিরা। 

সবশেষ বাংলাদেশ নিয়ে ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান” নামের ১ ঘন্টা ২১ সেকেন্ডের অসত্য ও মিথ্যাচারে ভরপুর প্রামাণ্যচিত্রে বিষোদাগার করা হয়েছে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাসহ সরকারের দায়িত্বশীরদের নিয়ে। আলজাজিরা যে গুজব উৎপাদনের বিরাট এক কারখানা তার প্রমাণ মিলবে নিচের তথ্য উপাত্তে। 

আরও পড়ুন: কন্ঠ দিলেও দৃশ্যপটে ‘লাপাত্তা’ সেই কনক সারওয়ার?

নাস একাডেমি নিয়ে মিথ্যাচার 
মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে আল জাজিরা কেবল কোনো দেশের বিরুদ্ধেই মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে বিষয়টি তেমন নয় মোটেও। নিজেদের অসৎ মিশন বাস্তবায়নে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে অপসাংবাদিকতা করে। 

আলজাজিরার এমন মিথ্যা সংবাদ প্রচার নিয়ে একটি ভিডিও স্টোরি প্রস্তুত করেছে নাস ডেইলি। এর একটি প্রতিষ্ঠান নাস একাডেমি। মূলত এই নাস একাডেমিকে নিয়েই মিথ্যা খবর প্রকাশ করে আল জাজিরা। সেখানে আল জাজিরা অভিযোগ করে যে, নাস একাডেমি ইসরায়েলের পক্ষের শক্তি এবং তারা মানুষকে ইসরায়েল ভালোবাসতে প্রশিক্ষণ দেয়।  এই সংবাদ প্রকাশের পর আরব বিশ্বে নাস একাডেমির বিরুদ্ধে ঘৃণার সৃষ্টি হয়।  

আরও পড়ুন: আল-জাজিরার আবিস্কার ‘ধুরন্ধর’ সামির আসল পরিচয় জানলে চমকে উঠবেন

পরে তারা দেখতে পায়, আল জাজিরা তাদের নিয়ে যে ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করেছে সেই একই সংবাদ তাদেরই অন্য অনেক পত্রিকাতে প্রকাশ করা হয়েছে এবং সেগুলো আবার স্পন্সরও করা হয়েছে। যাতে করে মানুষের কাছে সেই ভুয়া সংবাদগুলো সহজেই পৌঁছে যায় এবং মানুষ সেগুলো বিশ্বাস করে।

নাস ডেইলির ভিডিও ডকুমেন্ট্রিতে উল্লেখ করা হয়, আল জাজিরা একটি সংবাদ সংস্থা যাদের হাজারের বেশি কার্মচারী রয়েছে।  তারা যেকোনো মানুষকে আক্রমণ করতে পারে এবং যে কারো বিরুদ্ধেই ভুয়া খবর প্রকাশ করতে পারে কারণ তাদের কাছে রয়েছে প্রচুর টাকা।  তারা প্রতি বছরই ২০০ মিলিয়ন ডলার বা তার বেশি অর্থ পেয়ে থাকে। ফলে তারা যে কোনো কিছুই করতে দ্বিধা বোধ করে না।

আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আল জাজিরা দুই মুখো সাপের মতো আচরণ করে তাদের সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে। এক এক দেশের জন্য তাদের নীতি এক এক রকম হয়ে থাকে।  যেমন, মধ্য প্রাচ্যের জন্য তাদের যে নীতি তার ঠিক উল্টো নীতি আবার পশ্চিমা বিশ্বের জন্য।  পশ্চিমা বিশ্বে তারা সমকামীদের অধিকারকে সমর্থন করে কিন্তু আরব বিশ্বে তারা সমকামীদের অধিকারকে দমন করে।  ফলে তারা আল জাজিরার এই দুই মুখো নীতিরও বিরোধীতা করে। এমনকি আল জাজিরা আমেরিকার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করায় আমেরিকার সরকার আল জাজিরাকে বিদেশিদের দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। 

বাহরাইন নিয়ে আলজাজিরার মিথ্যাচারের প্রতিবাদে কী বলেছিলেন দেশটির দুই মন্ত্রী
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বীপ রাষ্ট্র বাহরাইন নিয়েও বিভিন্ন সময়ে মিথ্যাচার করে দেশটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংসের পাঁয়তারা করে আলজাজিরা। এসব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বাহরাইনের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী শায়খ খালিদ বিন আহমেদ বিন মোহাম্মদ আল খলিফা ও তথ্যমন্ত্রী নাবিল বিন ইয়াকুব আল-হামার।

২০১৯ সালের ১৫ জুলাই বাহরাইনের সরকারি সংবাদ সংস্থা বাহরাইন নিউজ এজেন্সি, যার সংক্ষিপ্ত নাম বিএনএ এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার সংক্ষিপ্ত অংশ এখানে উপস্থাপন করা হলো :

বাহরাইনের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী শায়খ খালিদ বিন আহমেদ বিন মোহাম্মদ আল খলিফা জোর দিয়ে বলেছেন, কাতারে প্রচারিত তথাকথিত ডকুমেন্টারি “দ্য হিডেন ইজ মোর ইমেনেস” – গতকাল রাতে আল-জাজিরা উপগ্রহ চ্যানেলটি “পরিষ্কার এবং স্পষ্ট মিথ্যা ও মিথ্যাচার” দ্বারা ভরা ছিল। “বাহরাইন রাজ্যের বিরুদ্ধে এবং দু’দেশের সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতার এটি সর্বশেষতম পর্ব।’

একই বছর বাহরাইনের তথ্যমন্ত্রী নাবিল বিন ইয়াকুব আল-হামার এক বিবৃতিতে আলজাজিরার সংবাদদাতাকে দেশটিতে নিষিদ্ধ করেছিলেন। পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্টের জন্যই মূলত ওই প্রতিনিধিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নিউজ দু’টির স্ক্রিণশট পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।

আলজাজিরার হাত রক্তে রঞ্জিত : সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট
কাতারভিত্তিক বিতর্কিত গণমাধ্যম আলজাজিরাকে নিয়ে দেশে দেশে ঘৃণা-ক্ষোভ-অসন্তোষ নতুন নয় মোটেও। বৈশ্বিক সন্ত্রাস ও জঈিবাদকে প্রমোট করা এই টিভি চ্যানেলটিকে বিদ্বেষ, সহিংসতা ও বৈষম্যকে উসকানি দেওয়ার মাধ্যম হিসেবেই উল্লেখ করেছিলেন সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। 

দেশগুলোর অভিযোগ ছিল, আল-জাজিরার হাত রক্তে রঞ্জিত। 

গত বছর দেওয়া এক বিবৃতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিডিয়া নিয়ন্ত্রণবিষয়ক মন্ত্রী নোরা আল কাবি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন, “বিশ্বের কয়েকজন দুর্ধষ সন্ত্রাসীর জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে আল-জাজিরা।” 

ওই সময় গার্ডিয়ান জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৫ মিনিটের একটি ভিডিও তৈরি করেছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, গত মাসে লন্ডনের বোরো মার্কেটে হামলায় জড়িত তিন ব্যক্তির একজন ইউসেফ জাগবাকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আল-জাজিরা অ্যারাবিক দায়ী। 

এ দাবির পেছনে তাদের যুক্তি হলো টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাগবার মা ও বোন টিভি স্টেশনগুলোকে দায়ী করেছিলেন।

অন্য সাক্ষাৎকারগুলোতে জাগবার মা ছেলের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রচণ্ডভাবে ইন্টারনেটকে দায়ী করেছিলেন।

কালের আলো/এএ/এমআরকে