করোনাকালীন সময়েও আয় বেড়েছে রবির

প্রকাশিতঃ 12:03 pm | February 17, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

করোনা মহামারি সত্ত্বেও ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে রবির রাজস্ব বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ১ শতাংশ। চতুর্থ প্রান্তিকে ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকাসহ এ বছর রবির মোট আয় ৭ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এই প্রান্তিকের ৩৯ কোটি টাকাসহ ২০২০ সালে রবির কর পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৫ কোটি টাকায়। আগের বছরের নামমাত্র মুনাফার পর এ অর্জন আশাব্যঞ্জক।

মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে রবি। অপারেটরটি বলছে, আগের বছরের নামমাত্র মুনাফার পর এ অর্জন আশাব্যঞ্জক।

রবি বলছে, প্রবৃদ্ধির গতিতে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করেছে মোট আয়ের ওপর ন্যূনতম ২ শতাংশ কর। কোম্পানিগুলোর মধ্যে একমাত্র রবিই কোন প্রণোদনা ছাড়া পুঁজিবাজারে প্রবেশ করেছে। তাই ২০২০ সালে কার্যকর করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ৮ শতাংশে।

তবে প্রবৃদ্ধির গতিতে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে মোট আয়ের ওপর নূন্যতম ২ শতাংশ কর। অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে একমাত্র রবিই কোন প্রণোদনা ছাড়া পুঁজিবাজারে প্রবেশ করেছে। তাই ২০২০ সালে কার্যকর করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ৮ শতাংশে।

নতুন ১৯ লাখ গ্রাহকসহ ২০২০ সালে রবির সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৯ লাখে। যার মধ্যে ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। গত বছরের তুলনায় ফোরজি গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ।

পারিপার্শ্বিক কারণে ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এই প্রান্তিকে ভয়েস সেবা থেকে রাজস্বের হার ১ শতাংশ কমেছে। যার ফলে গত প্রান্তিক থেকে এই প্রান্তিকে রাজস্ব কমেছে দশমিক ৭ শতাংশ। আগের বছরের (২০১৯) তুলনায় রবির ভয়েস সেবায় রাজস্বের হার ৯ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। যা ভয়েস কল করার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতার প্রতিফলন। অন্যদিকে ডাটা সেবায় রাজস্ব তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় ১ শতাংশ এবং গত বছরের (২০১৯) তুলনায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে।

গত প্রান্তিকের তুলনায় ইবিআইটিডিএ ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। তবে পুরো বছরের বিবেচনায় ইবিআইটিডিএ ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। চতুর্থ প্রান্তিকে ইবিআইটিডিএ মার্জিন ছিলো ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ, যা তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় ১ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট (পিপি) কম। ২০২০ সালের ইবিআইটিডিএ মার্জিন হলো ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০১৯ সাল থেকে ৪ দশমিক ১ পিপি বেশি।

২০২০ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ১ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা, যা ওই প্রান্তিকের মোট রাজস্বের ৭৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২০ সালে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে মোট ৪ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা জমা দিয়েছে রবি যা ওই বছরের মোট রাজস্বের ৫৬ শতাংশ।

চতুর্থ প্রান্তিকে ৬৫৭ কোটি টাকা মূলধনী বিনিয়োগসহ ২০২০ সালে রবির মোট মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ ২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ওই বছর ৪ হাজার ২৬৩টির বেশি ফোরজি সাইট স্থাপন করেছে রবি। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ রবির নেটওয়ার্ক সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪৬১টি’তে যার মধ্যে ৯৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ফোরজি সাইট।

কোম্পানির বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যত অগ্রগতির লক্ষ্যে মূলধনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২০ সালের শেয়ারের ওপর কোনও লভ্যাংশের সুপারিশ করেনি রবি’র পরিচালনা পর্ষদ। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কোম্পানির আর্থিক ফলাফল সম্পর্কে রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “করোনা মহামারীর কারণে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের আয় কমলেও পরিস্থিতি সঠিকভাবে মোকাবেলা করায় রবির আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বছরটি আমাদের জন্য শিক্ষণীয় এবং আমি গর্বের সাথে বলতে পারি সঠিক উদ্ভাবনের পথ বেছে নেয়ায় সামগ্রিকভাবে এ বছর আমরা অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছি। ১৫৫ কোটি টাকা কর পরবর্তী মুনাফার মাধ্যমে বাজারে আমাদের অবস্থান আরো সুসংহত হয়েছে। তবে মোট আয়ের ওপর ন্যূনতম ২ শতাংশ করের কারণে আমরা এখনো কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারছি না।”

মানসম্মত সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “আবারো দশ বছরের জন্য ১১ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম (৯০০ ব্যান্ড ও ১৮০০ ব্যান্ড) নবায়ন গ্রাহকদের মানসম্পন্ন সেবা প্রদানে দেয়া আমদের প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন। তবে দীর্ঘদিন ধরে ডিডব্লিউডিএম সরঞ্জাম ব্যবহারের অনুমতির ব্যাপাটি ঝুলে থাকায় আমরা কয়েক হাজার কিলোমিটার ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারছি না যা মানসম্মত সেবার জন্য জরুরি। তবু আমরা বছরজুড়ে ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছি। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের সাইটগুলোর ৯৭ দশমিক ৮৬ শতাংশই এখন ফোরজি সাইটে রূপান্তরিত হয়েছে।”

বাজারের ভারসাম্যহীন প্রতিযোগিতার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “বাজার প্রতিযোগিতায় ভারসাম্য আনার জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অবস্থানকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা এসএমপি বিধিমালাগুলোর কার্যকর প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছি না। অন্যদিকে আমাদের ০১৬ সিরিজের নম্বার বিক্রি ও পুনরায় বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা দেশব্যাপী গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। এ পরিস্থিতি ভারসাম্যহীন বাজার প্রতিযোগিতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।”

কালের আলো/ডিএস/এমএম