জন্মদিনে পাঠকের মুখোমুখি আনিসুল হক, বললেন ‘লেখালেখি খুবই নির্জনতম একটি কাজ’
প্রকাশিতঃ 11:29 pm | March 05, 2021
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ
জন্মদিন উপলক্ষে পাঠকের মুখোমুখি হয়েছিলেন কথাশিল্পী আনিসুল হক। এরপর নিজের কথা, কবিতা আর সঙ্গীত-আবৃত্তিতে কেটে গেছে সন্ধ্যা।
শুক্রবার (৫ মার্চ) বিকেলে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বাতিঘরে পাঠকের মুখোমুখি হন লেখক। আনিসুল হকের জন্মদিন উপলক্ষে এ আয়োজন করে বাতিঘর।
এ সময় পাঠকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আনিসুল হক। তার কবিতা আবৃত্তি করেন শিমুল মুস্তাফা।
এ সময় আনিসুল হক বলেন, ‘লেখালেখি খুবই নির্জনতম একটি কাজ। যখন লেখি তখন চারপাশে নির্জনতার দেয়াল তুলে দেই।’
একজন লেখক জনপ্রিয়তার স্বাদ কিভাবে উপভোগ করেন, লেখকের দায় কিভাবে দেখেন, পাঠকের এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘জনপ্রিয়তা খুবই মজার, জনপ্রিয়তা খুবই উপভোগ করি। কিছু অসুবিধা তো হয়ই। যদি জনপ্রিয়তা উপভোগ করি, সুবিধা নিই তাহলে অসুবিধা নেবো না কেন, দায় তো নিতেই হয়।’
একই সঙ্গে একজন লেখক হাসি, কান্না কিভাবে পার্থক্য করেন, মানে হাসির পাশাপাশি কান্নাকে ফুটিয়ে তোলেন কিভাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, “আমি ‘মা’ লিখেছি, ‘গুড্ডু বুড়া’ লিখেছি আবার ‘চিয়ারি বা বুদু ওরাঁও কেন দেশ ত্যাগ করেছিল’ লিখেছি। একেকটা একেক রকম। আমরা যখন লিখতে বসি তখন এক ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই বসি। যখন উপন্যাস লিখতে বসি তখন কবিতা লিখি না। কবিতা লিখতে বসলে কবিতাই লিখি, নাটক নয়। আমার লেখার একটা প্রস্তুতি থাকে।”
তিনি বলেন, ‘আমরা তো একটা ঘোরের মধ্যে থেকে লিখি। ঘুমের মধ্যে কোনও একটা লাইন চলে এলো, চট করে উঠে লিখতে বসে যাই। লিখে ফেলি।’
লেখালেখিতে কেন আসা বা কিভাবে এলেন এমন প্রশ্নে জবাবে ‘যারা ভোর এনেছিল’ -এর লেখক বলেন, তখন বুয়েটে ভর্তি হয়েছি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ক্লাস শুরু হচ্ছে না, এরশাদবিরোধী আন্দোলন চলছে। সে সময় রংপুরে এক নারীকে দেখে ভালো লেগে যায়, মুগ্ধ হই। লিখে ফেলি ‘তুই কি আমার দুঃখ হবি?’ কবিতা। ঢাকায় ফিরে ঘোষণা দেই, ইঞ্জিনিয়ার হবো না, কবি হবো। তারপর থেকেতো সিরিয়াসলি লেখালেখির শুরু।
তিনি জানান, নারী চিত্ত জয়ের আকাঙ্ক্ষা থেকে লিখেছেন ‘তুই কি আমার দুঃখ হবি’।
তিনি আরও জানান, যার জন্য কবিতা লেখা, সেই নারীর সঙ্গে তার ৫২ বছর বয়সে দেখা হয়েছে। সেই নারী তাকে ফোন করে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আনিসুল হকের পাঠকরা উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তাফা, কবি পিয়াস মজিদ, মনোবিজ্ঞানী ডা. আহমেদ হেলাল, কবি রাশেদ আহমদ, গল্পকার তানজিনা হোসেন প্রমুখ।
সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক আনিসুল হককে শুভাশীষ জানিয়ে বলেন, আমি তাকে বড় একজন লেখক মনে করি। তিনি সৈয়দ শামসুল হকের স্নেহভাজন ছিলেন। আনিসুল হক আমাদের জন্য লেখেন, মানুষের জন্য লেখেন।
আবৃত্তি শিল্পী শিমুল মুস্তাফা আনিসুল হকের লেখা ‘তুই কি আমার দুঃখ হবি?’ আবৃত্তি করেন। আনিসুল হক জীবিত অবস্থায় যেন রাষ্ট্রীয় সম্মান পান- সংশ্লিষ্টদের কাছে তিনি সেই দাবি জানান, পাঠককূলকেও সেই দাবি তুলতে বলেন।
কালের আলো/এআরকে/এএ