‘পুত্রকে বাদশাহ সালমানের নতুন থাপ্পড়’

প্রকাশিতঃ 8:48 am | September 08, 2018

কালের আলো ডেস্ক:

উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ভুল পদক্ষেপের কারণে শাসনতান্ত্রিক বিষয়ের লাগাম নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান। বাদশাহ ও তার পুত্র যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে মতপার্থক্য তীব্র হয়েছে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম আল খালিজের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডিলইস্ট মনিটর জানিয়েছে, যুবরাজের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়ে বাদশাহ সালমানই সৌদি আরামকোর শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন। তাছাড়া ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুবরাজ সালমানের মার্কিন পক্ষপাতের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিয়েছেন বাদশাহ সালমান।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যেখানে বলেছিলেন, ‘ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মেনে না নিলে ফিলিস্তিনিদের উচিত মুখ বন্ধ রাখা’। সেখানে বাদশাহ সালমান নিশ্চিত করেছেন, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থরক্ষার বিষয়ে সৌদি আরব তাদের পাশে থাকবে। সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন, রাজপরিবারে চলতে থাকা এমন মতবিরোধের কারণে দেশটির ঘোষিত ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে।

‘ছেলের করা ক্ষতির পরিমাণ কমাতে’ বাদশাহ সালমান নিজই সৌদি আরামকোর আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বাদশাহ সালমানের এমন সিদ্ধান্তকে ‘পুত্রকে বাদশাহ সালমানের নতুন থাপ্পড়’ আখ্যা দিয়েছে আল খালিজ।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সৌদি আরামকোর শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার মধ্য দিয়ে অনেক বড় আঘাত পেয়েছে ‘ভিশন ২০৩ ‘। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আধুনিক সৌদি আরব গড়ার স্বপ্নের প্রতি এটা হয়ে উঠতে পারে অনেক বড় বাধা।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা দেশটির ইতিহাসে প্রথম। দেশটির তেলসম্পদ শেষ হতে থাকার প্রেক্ষিতে তিনি নিজেকে সৌদি আরব ও এর জনগণের জ্ঞানী রক্ষাকর্তা হিসেবে পরিচিত করে তুলতে চেয়েছিলেন। তার সংস্কারবাদী পরিকল্পনায় এমন চিন্তারই ছাপ রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন, যুবরাজের ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে পারে।

আল খালিজের মতে, তিন বছর পর এসে বাদশাহ সালমানের হস্তক্ষেপে সৌদি আরামকোর আইপিও বিক্রি বাতিলের ঘটনা থেকেই এটা স্পষ্ট, যুবরাজের পরিকল্পনায় ত্রুটি রয়েছে। বাদশাহ নিজে পরিবারের অন্যান্য সদস্য, অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জেনেছেন, যুবরাজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। দেশে ভালো হওয়ার বদলে উল্টো তা অর্থনীতিতে ফেলতে পারে ঋণাত্মক প্রভাব।

শুধু সৌদি আরামকো নিয়ে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সম্পর্ক নিয়েও অসন্তুষ্ট বাদশাহ সালমান। ইসরায়েল- ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সমর্থন দিচ্ছেন যুবরাজ সালমান। কিন্তু বাদশাহ সালমান এর বিরুদ্ধে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বে মোহাম্মদ বিন সালমান ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত ওই প্রস্তাবনাটিকে সমর্থন দিয়েছেন।

সমালোচকরা বলেছেন, ট্রাম্প তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নিলেও মোহাম্মদ বিন সালমান এ বিষয়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কোনও পদক্ষেপ নেননি। তিনি বরং ফিলিস্তিনিদের বলেছেন, ‘ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে নিন। আর তা না হলে মুখ বন্ধ করে থাকুন।’

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এমন মন্তব্যে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ধারণা জন্মেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাদের পাশে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি সৌদি আরব আবারও ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে তৎপর হয়েছে।

আল খালিজ লিখেছে, যুবরাজের ওই মন্তব্যের পর তার বাবা বাদশাহ সালমান এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের যে চেষ্টা চলছে তাতে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিশ্চিতে সৌদি আরব ভূমিকা রাখবে।

কালের আলো/কা/এমএইচ