মননে দেশপ্রেমের মন্ত্র, নীরবে কাজ করা ‘আনসাং হিরো’ ৫ প্রধান প্রকৌশলী

প্রকাশিতঃ 10:03 am | April 16, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

স্বাধীনতার ৫০ বছরে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক থেকে জীবনযাত্রার মান-সব বিষয়েই হয়েছে প্রভূত উন্নয়ন। তথ্য-প্রযুক্তিতেও দেশ এগিয়েছে দুর্বার গতিতে। আবার কাঙ্খিত উন্নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ ও অবকাঠামো ব্যবস্থার সম্পর্ক বেশ নিবিড় হওয়ায় এসব ক্ষেত্রেও সাধিত হয়েছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

বদলে গেছে সড়ক, আবাসন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেহারা। উন্মোচন হয়েছে নব দিগন্তের। নিজেদের মন-মননে দেশপ্রেমের মন্ত্র গেঁথে মানবিক ও সাহসী প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নপূরণে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়টিতে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নীরবেই কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরাও।

অথচ নিজের অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাইরে তাদের চেনেন না সাধারণ মানুষ। কোন মাতামাতি বা আলোচনাও নেই। নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের অভিভাবক মন্ত্রী ও সচিবের কার্যকর নির্দেশনায় উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

কঠোর পরিশ্রমে তিল তিল করে ইট গেঁথে অনেক দূরের স্বপ্ন ছুঁইয়ে দিচ্ছেন নিজ নিজ অধিদপ্তরকে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রত্যেকেই গ্রহণ করেছেন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি। পাদপ্রদীপের আড়ালেই থেকে যাওয়া এসব ব্যক্তিরা অনেকের দৃষ্টিতেই ‘আনসাং হিরো’।

আলোকঝলমল এসব কর্মবীররা হলেন- স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খান, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো.সাইফুর রহমান ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী মো.আরিফুর রহমান।

মো. আব্দুর রশীদ খান
দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকৌশল সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. মো. আব্দুর রশীদ খান। জনকল্যাণমুখী নানা কর্মকান্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে তিনি এলজিইডিকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বুনেছেন।

দেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করতে সরকার ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ খানের। গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলামের কার্যকর দিক নির্দেশনায় সমন্বিত উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যাপক ভিত্তিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করছেন।

উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন এমনকি গ্রাম পর্যন্ত বর্তমানের তুলনায় সকল পুরনো ও নতুন গ্রামীণ সড়ক প্রশস্ত করার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। তবে এসব নির্মাণ কাজ মানসম্পন্ন করার পাশাপাশি টেকসই করতেও জোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন এই প্রধান প্রকৌশলী।

মো. আবদুস সবুর
জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক মিলিয়ে বাইশ হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়কের মালিকানা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের। আর এই অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিসিএস (সড়ক ও জনপথ) ক্যাডারের সদস্য মো.আবদুস সবুর।

সওজের মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে তিনি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এ পদে দায়িত্বের আগে ঢাকা সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন আবদুস সবুর। সওজের আওতাধীন ছোট-বড় সেতু ও কালভার্টের সংখ্যা ১৯ হাজার ২১৮টি। এসব সড়ক, সেতুর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত সড়ক নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়াতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে এই সংস্থাটি।

দায়িত্ব নিয়েই উন্নয়নকাজের গুণগত মান নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছেন প্রধান প্রকৌশলী মো.আবদুস সবুর। টেকসই সড়ক নির্মাণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। সরকারের নির্দেশে নজর দিয়েছেন দুই লেনের সড়কগুলো চার লেনের মহাসড়কে উন্নীতকরণের কাজে।

আগামী দিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ সব মহাসড়ককে ছয় থেকে আট লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের বদৌলতে রাজধানী থেকে পদ্মা সেতুর দূরত্বও যেন কমে এসেছে।

সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর মনে করেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে যোগাযোগ খাতে যুগান্তকারী এক পরিবর্তন এসেছে। গত এক যুগে সড়ক খাতে বিপ্লব ঘটেছে। চলমান উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি উন্নয়নকাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেও নিজের মিশন-ভিশন স্থির করেছেন তিনি।

মোহাম্মদ শামীম আখতার
সরকারের বেশিরভাগ উন্নয়নকাজই বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। দেশের নির্মাণশিল্পের গতি, মান ও কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকাও পালন করে থাকে এই অধিদপ্তর। ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে এখন এই অধিদপ্তর সামলাচ্ছেন মোহাম্মদ শামীম আখতার। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

মুজিববর্ষে সবার জন্য আবাসন সরকারের বার্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিজের লক্ষ্যস্থির করেছেন প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার। স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো নির্মাণেও সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নির্মাণকাজে অন্যতম পথিকৃৎ এই অধিদপ্তরটিকে।

নিজেদের কাজের আন্তর্জাতিক মান ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকেই দিন-রাত একাকার করে কাজ করছেন শামীম আখতার। নানা রকম বাধাবিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অধিদপ্তরটিকে। করোনার প্রকোপের ভেতরেও বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন, কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন সেন্টারসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে গুরুদায়িত্বে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য ১৭টি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করছে তাঁর অধিদপ্তর। এসব কাজ যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় সেদিকে নজর দিয়েছেন এই প্রধান প্রকৌশলী। পরিকল্পনামাফিক পিপিআর মেনে কর্মকর্তাদের কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী জুনেই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত প্রায় আড়াই হাজার ফ্ল্যাট পাবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মাস দুয়েক আগে রাজধানীর আজিমপুরে নির্মাণাধীন ১৭টি আবাসিক ভবন পরিদর্শন করেছেন প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার।

আগামী মে’র মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাস্তবায়নাধীন চারটি আবাসন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৯শ’ ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও ব্যয় হচ্ছে ৯শ’ ৩৬ কোটি টাকা। এতে এই প্রকল্পে সাশ্রয় হচ্ছে ৫৪ কোটি টাকা। এটাও গণপূর্ত অধিদপ্তরের জন্য একটি বিরল দৃষ্টান্ত।

মো.সাইফুর রহমান
প্রায় আড়াই বছর আগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মো.সাইফুর রহমান। নিজের দীর্ঘ কর্মজীবনে দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তাঁর। সাধারণ মানুষের দূয়ারে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা পৌছানোর লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এই অধিদপ্তর। এরই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন কভারেজের দিক দিয়ে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম শীর্ষ স্থান দখল করেছে।

পল্লী এলাকার বিভিন্ন ধরনের নিরাপদ পানির উৎস (টিউবওয়েল) ও স্যানিটারী লেট্রিন স্থাপনাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে এই অধিদপ্তর। ইতোমধ্যেই পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, শৃঙ্খলাবোধসহ বিভিন্ন কারণে শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী মো.সাইফুর রহমান।

মো.আরিফুর রহমান
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে সাফল্যের নজির স্থাপন করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। মাস চারেক আগে এই অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মো.আরিফুর রহমান। শুরু থেকেই সততা ও দক্ষতার সঙ্গেই তিনি দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রূপায়নে কাজ করছে। শিক্ষা সেখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে। আর সেই অগ্রাধিকারকে বাস্তব ভিত্তি দিতে প্রধান প্রকৌশলী আরিফুর রহমানের দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্ব অবকাঠামো উন্নয়নে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে।

এই প্রধান প্রকৌশলীল কর্মকৌশল ইইডি থেকে শুরু করে সব মহলেই প্রশংসিত হচ্ছে। উন্নত অবকাঠামোসহ নানা সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় রাজধানী থেকে শুরু করে তৃণমূলের শিক্ষার্থীরাও শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত হচ্ছেন। এটিও যেন এক নীরব বিপ্লব।

কালের আলো/এমএএএমকে