করোনা : ব্যবসা ‘টেকাতে’ কর-ভ্যাটে ছাড় চায় এফবিসিসিআই

প্রকাশিতঃ 11:43 pm | April 18, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

করোনার ধাক্কা মোকাবিলায় ছোট–বড় অনেক প্রতিষ্ঠান প্রণোদনার ঋণ পেয়েছে। এই প্রণোদনা ঋণের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অনুদান হিসেবে ঘোষণার দাবি করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)।

রোববার (১৮ এপ্রিল) এনবিআর-এফবিসিসিআইয়ের যৌথভাবে আয়োজিত বাজেটসংক্রান্ত পরামর্শ সভায় এ প্রস্তাব করা হয়। এ সময় সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন।

এনবিআর ও এফবিসিসিআইর যৌথ উদ্যোগে জুম প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এতে সভাপতিত্ব করেন।

শেখ ফজলে ফাহিম আগামী অর্থবছরের জন্য ১৩টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও চাপে পড়েছে। এ অবস্থায় টিকে থাকতে নীতি-সহায়তা লাগবে। এ সময় ব্যাংকে কোনো ধরনের গোপন চার্জ যাতে না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। ঋণ পাওয়া সহজ করতে হবে। একইসঙ্গে যেসব ব্যাংক প্রণোদনার অর্থ বিতরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, তাদের ১ শতাংশ প্রণোদনা দিতে হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, লকডাউন চলছে। এতে মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় সমাধান হবে না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। লকডাউন দিয়ে সমাধান হবে না।

তিনি বলেন, যদি করোনাভাইরাসের প্রভাব আরও বিস্তৃত হয়, তাহলে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে কিছু মওকুফ করতে হবে। তিনি বড় ও রপ্তানিমুখী শিল্পে নেওয়া প্রণোদনা ঋণের ৫ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র, কুটির, এসএমই শিল্প ও কৃষি খাতে নেওয়া ঋণের ৫০ শতাংশ মওকুফ করার প্রস্তাব করেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে সরকার কাজ করছে। যেখানে যে ব্যত্যয় আছে, তা সংশোধন করে যতটা এগোনোর সুযোগ আছে, তা কাজে লাগাতে চায় সরকার। কিন্তু করোনার কারণে কিছুটা হলেও লক্ষ্য থেকে সরে যেতে হয়েছে। এরপরও সরকার ব্যবসার উন্নয়নে কাজ করছে।

এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, এনবিআর ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব প্রশাসন গঠন করতে চায়। এখন অনেক ক্ষেত্রেই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে। অডিট রিপোর্ট অনলাইনে সাবমিট করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাই এ প্রক্রিয়ায় এলে করপোরেট কর কমানোর সুযোগ হবে।

এফবিসিসিআইর প্রস্তাব: সংগঠনটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আগামী দুই অর্থবছরের মধ্যে সব পর্যায় থেকে অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর বিলুপ্ত করতে হবে। এ ধরনের কর ফেরত পাওয়া জটিল এবং এতে স্থানীয় ব্যবসার চলতি মূলধন কমে যায়।

বর্তমানে মোট লেনদেন বা টার্নওভার তিন কোটি টাকা বা তার বেশি হলে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে নূ্যনতম আয়কর দিতে হয়। এফবিসিসিআই সেটি বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা করা এবং আয়ের ভিত্তিতে কর দেওয়ার বিধান করার প্রস্তাব করেছে।

এফবিসিসিআই বলেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার আরও কমিয়ে অন্যদের তালিকাভুক্ত হওয়ায় উৎসাহিত করা যেতে পারে। এ ছাড়া কর অবকাশ সুবিধা প্রাপ্তির তালিকায় আমদানি বিকল্প শিল্প, পণ্যভিত্তিক বহুমুখীকরণ, ভ্যালু চেইন আপগ্রেডেশনে যুক্ত হওয়া যে কোনো নতুন শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছে।

কৃষক থেকে পণ্য কেনার উৎসস্থলে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে। পরিবেশবান্ধব রি-সাইক্লিন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতকে ভ্যাট ও টার্নওভার করের আওতাবহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। ডিও ব্যবসায়ীদের আয়ের ওপর ভিত্তি করে আয়কর নির্ধারণ এবং ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর, খুচরা ব্যবসায়ী, ফাস্ট মুভিং কনজ্যুমার গুডস ও কাপড়ের ব্যবসায় মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে ভ্যাট নির্ধারণ চায় সংগঠনটি। ব্যবসায়িক লেনদেনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চালানভিত্তিক ব্যাংক টু ব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা চালু করার কথাও বলেছে। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করে সংগঠনটি। তারা ব্যবসায়ীদের নিজস্ব ঘোষণা বা সেলফ ডিক্লারেশনের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। পরপর তিন অর্থবছর এ ধরনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

অন্যদের প্রস্তাব: এনবিআরের পরামর্শক কমিটির এ সভায় এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সংসদ সদস্য সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন কৃত্রিম তন্তুতে ভ্যাট প্রত্যাহার ও ড্রেজার আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেন। বেঙ্গল ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. জসিমউদ্দিন স্পেয়ার পার্টস আমদানিতে শুল্ক কমানো, রি-সাইক্লিন শিল্পে ভ্যাট প্রত্যাহার এবং সব রপ্তানি খাতের করপোরেট কর ১২ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক করা, করপোরেট কর আগামী পাঁচ বছর একই রাখা, নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ, নন কটন পোশাকে প্রণোদনা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। বিটিএমইএর সভাপতি মোহাম্মাদ আলী খোকন সুতার ভ্যাট কমিয়ে কেজিতে তিন টাকা ও যন্ত্রাংশ আমদানির শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেন। প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার, উৎসে কর কমানো, মুড়ির ওপর থাকা ভ্যাট প্রত্যাহার ও টার্নওভার কর কমানোর প্রস্তাব করেন।

সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি আলমগীর কবির অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করার সুপারিশ করেন। বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির আইটি খাতের রপ্তানিতে সহায়তার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন ও ক্রেডিট রিস্ক গ্যারান্টি স্কিমে আইটি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন। ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার ডিজিটাল লেনদেনে প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেন।

খুলনা চেম্বারের সভাপতি কাজী আমিনুল হক মহামারির সময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার প্রস্তাব করেন। চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন। এফআইসিসিআই সভাপতি রুপালী চৌধূরী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির প্রস্তাব করেন। এছাড়া কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় সে বিষয়ে বাজেটে উদ্যোগ আশা করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি টার্নওভার কর প্রত্যাহার ও সারচার্জ কমানোর প্রস্তাব করেন। বায়রার সভাপতি বেনজির আহমেদ জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রণোদনা চান। সিলেট চেম্বারের সভাপতি আফজাল রশিদ চা চাষে কৃষির মতো সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদে ঋণ চান।

কালের আলো/ডিএসকে/এমএম