নামিদামি ব্র্যান্ডের জুতা নকল করে বিক্রি, ভোক্তা অধিকারের অভিযানে জরিমানা

প্রকাশিতঃ 11:03 am | May 06, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

নিত্যপণ্যের দোকান, ফলের আড়ত, বেকারি, পাইকারি জুতার মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম পাওয়ায় অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

বুধবার (৫ মে) দিনব্যাপী এসব অভিযান চালানো হয়।

এদিন সারাদেশে ৫৫টি মনিটরিং টিম কর্তৃক পরিচালিত বিশেষ অভিযানে ভোক্তাস্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন অপরাধে ১৫৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।

এর মধ্যে পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে জুতার পাইকারি মার্কেটে বিশেষ অভিযান চালিয়ে অবাক তথ্য পায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

সেখানে দেখা যায়, দেশের জুতার অন্যতম ব্র্যান্ড এপেক্সের নামের অনুকরণ করে লেখা হচ্ছে এপোক্স। বাটার জুতার নাম বদলে করা হয়েছে বালা। লোটো জুতা নকল করে বানানো হচ্ছে লাটো। এভাবেই নামিদামি সব ব্র্যান্ডের জুতা নকল করে বিক্রি করা হচ্ছে। সহজ সরল সাধারণ ক্রেতাদের বোকা বানিয়ে ঠকানো হচ্ছে।

অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মাসুম আরেফিন জানান, নামিদামি সব ব্র্যান্ডের জুতা সূক্ষ্মভাবে বানান পরিবর্তন করে বিক্রি করা হচ্ছে। বাটা জুতার নাম বালা লেখা। এপেক্সের নাম এপোক্স লেখা। অনেকে সহজে এসব যে নকল জুতা বুঝতেও পারবে না। এসব জুতার বেশিরভাগ বিক্রি হয় জেলা ও মফস্বল এলাকায়। এতে করে গ্রামের সাধারণ ক্রেতারা ব্র্যান্ডের নামে নকল জুতা কিনে ঠকছেন। অধিদফতরের পক্ষ থেকে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি সতর্ক করা হয়েছে যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ না করে।

ঢাকা মহানগরীতে আটটি মনিটরিং টিম কর্তৃক ১১টি পাইকারি ও খুচরা বাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালিত হয়। রাজধানীর এসব বাজার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মাসুম আরেফিন, বিকাশ চন্দ্র দাস, ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল ও প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রণব কুমার প্রামাণিক।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত মোবাইল টিমের সঙ্গে বাজার তদারকি করেন অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রজবী নাহার রজনী, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রোজিনা সুলতানা ও মাহমুদা আক্তার।

রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর বাসাবো, খিলগাঁও, মালিবাগ রেলগেট, মধ্য বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, ভাটারা, গুদারাঘাট, গুলশান-১,ফুলবাড়িয়া এলাকার কাঁচাবাজার, নিত্যপণ্যের দোকান, ফলের আড়ত, বেকারি, পাইকারি জুতার মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে তরমুজ, সবজি, পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুরসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য যৌক্তিকমূল্যে বিক্রয় হচ্ছে কি-না তা তদারকি করা হয়। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা সঠিকভাবে প্রদর্শন, নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রয়, পণ্যের ক্রয় রসিদ সংরক্ষণ, মূল্য তালিকায় প্রদর্শিত মূল্যের সঙ্গে বিক্রয় রসিদের গরমিল, সঠিক ওজন, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য ও ওষুধ, নকল পণ্যসহ ভোক্তাস্বার্থ বিরোধী কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

তদারকিকালে বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও পণ্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রয়েছে পরিলক্ষিত হয় এবং সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য বিক্রি হতে দেখা যায়।

এ সময় পণ্যের মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা ও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রয়, নকল পণ্য তৈরি, নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য তৈরি করার অপরাধে জরিমানা আরোপ করা হয় এবং এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা হয়।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি বিভাগ, মৎস্য বিভাগ, ক্যাবসহ সংশ্লিষ্ট শিল্প ও বণিক সমিতির প্রতিনিধিরা অধিদফতর পরিচালিত বাজার অভিযানে সহযোগিতা করেন। বাজার তদারকিকালে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীবৃন্দের মধ্যে লিফলেট, প্যাম্পলেট বিতরণ এবং করোনাকালে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের জন্য হ্যান্ডমাইকে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়।

এছাড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতকরণসহ স্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। বাজার তদারকির পাশাপাশি ঢাকাসহ সারাদেশে টিসিবির সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্যসমূহ (ট্রাক সেল) যথাযথ নিয়ম মেনে বিক্রয় হচ্ছে কি-না তা তদারকি করা হয়।

এ বিষয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, নকল-ভেজাল প্রতিরোধ ও মানসম্মত পণ্য নিশ্চিতকরণে অধিদফতরের নিয়মিত অভিযান এবং প্রচারণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে ও ভোক্তা-ব্যবসায়ীবান্ধব স্থিতিশীল বাজারব্যবস্থা গড়তে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান তিনি।

একইসঙ্গে বাজারে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের জন্য ভোক্তা-ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেন তিনি।

কালের আলো/এসবি/এমএম