সেনাপ্রধানের প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব, প্রথমবার জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ পদে বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তা

প্রকাশিতঃ 9:26 pm | May 21, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

এ যেন বিরল এক সম্মান। অযুত এক সম্ভাবনার হাতছানি। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের অফিস অব মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স, ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনের (ডিপিও) চিফ অব স্টাফ পদটিতে নেতৃত্ব দিবেন একজন বাংলাদেশী সেনা কর্মকর্তা। তাঁর নাম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হক।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফরের চার মাসের মাথাতেই মিলেছে এমনই এক সুসংবাদ। ঐতিহাসিক এই সফর এরই মধ্যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের জন্য তিনি খুলে দিয়েছেন অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দূয়ার। অর্জনের অসংখ্য পালকে ইতিহাস গড়েই নিজেদের গৌরবদীপ্ত করছেন দেশপ্রেমিক সেনারা।

পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক ও কার্যকর দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিচক্ষণ ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের দূরদর্শীতায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে।

সেনাপ্রধানের অনুরোধের প্রেক্ষিতেই মুজিব শতবর্ষে প্রথমবারের মতোন বিরল এ সম্মান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মর্যাদাকর এই সম্মানে উচ্ছ্বসিত দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তারা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সেনা সদর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২ বছর ১১ মাসে সরকারের সদিচ্ছায় রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, সৌদি আরব, মায়ানমারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ সফর করেন। প্রতিটি দেশের সরকারের আমন্ত্রণেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার লক্ষে তিনি এসব দেশ সফর করেন।

তাঁর প্রতিটি সফরই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নানা অর্জন নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। যার বেশিরভাগই সুফল পেয়েছে দেশ। কোন কোনটিতে হয়েছে প্রাপ্তির সূত্রপাত। দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই তিনি সফরগুলোর অগ্রাধিকার চিহ্নিত করেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এসব দেশের পাশাপাশি জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সঙ্গে বিরাজমান সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় উন্নীত করতেও নিজের বহুমাত্রিক মেধা, বিচক্ষণতা ও পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন ড.আজিজ।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ কালের আলোকে জানান, মার্কিন সেনাপ্রধানের আমন্ত্রণে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ১৩ দিনের সরকারি সফরে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।

সেই সফরে জাতিসংঘ সদর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলসহ অন্যান্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে তিনি জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি কন্টিনজেন্ট প্রেরণ এবং জাতিসংঘ সদর দফতরের বিভিন্ন উচ্চতর এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে আরও অফিসার নিয়োগের ব্যাপারে অনুরোধ করেছিলেন।

জাতিসংঘের সিনিয়র নেতৃত্ব এই ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি দেন এবং এরই ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘ সদর দফতরে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীর একজন অফিসারকে নিয়োাগ দেওয়া হয়েছে।

আইএসপিআর জানিয়েছে, এই পদটির জন্য এর আগে বাংলাদেশ থেকে কোনো কর্মকর্তা নিয়োগের সুযোগ বা কোনো অনুরোধ আসেনি। সেনাবাহিনী প্রধানের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবার প্রথমবারের মত বাংলাদেশ এই সম্মান অর্জন করেছে।

জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর মনোনীত প্রার্থীদের মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই পদে যোগ্য সামরিক কর্মকর্তাকে নির্বাচন করা হয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল প্রথম একজন বাংলাদেশি সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে জাতিসংঘ সদর দফতরে এমন উচ্চতর এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে নিয়োগ পাচ্ছেন।

আরও অর্জন বাস্তবতার মেলবন্ধন
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরপরই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মালিতে (মিনুসমা) সেক্টর কমান্ডার পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবির একজন কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর নিয়োগ পান। এছাড়াও জাতিসংঘ সদর দফতরে মিলিটারি অ্যাডভাইজার এবং চিফ অব স্টাফ পদে নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়। পাশাপাশি জাতিসংঘে মিলিটারি অবজারভার এবং স্টাফ অফিসার হিসেবে ২০টি অতিরিক্ত নিয়োগ বরাদ্দ মিলেছে।

এদিকে, সেনাবাহিনী প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। সফরকালে তিনি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে (সিএআর) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের জনবল আরও বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব রাখেন এবং তাদের মোতায়েনের কাজ চলমান রয়েছে।

ইতোমধ্যেই সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স কোম্পানি (ব্যানএসএফসি) এবং লাইট কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্সের (এলকিউআরএফ) ৫০ জন জনবল বৃদ্ধিসহ ব্যানব্যাট-এর লেভেল-১ হাসপাতালকে লেভেল-২ হাসপাতালে উন্নীত করার ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রস্তাব পাওয়া গেছে।

একই মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কুইক রিআ্যকশন ফোর্স (কিউআরএফ) এবং ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি মোতায়েনের সম্ভাবনাও রয়েছে। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সমন্বিত স্পেশাল ফোর্স সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েনের ব্যাপারে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব পেয়েছে।

সেনাপ্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মালিতে একটি শক্তিশালী কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স এবং একটি এভিয়েশন ইউনিট মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যা শিগগিরই মোতায়েন করা হবে। ইতোমধ্যেই ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (ডিআর) অব কঙ্গোতে ৬ সদস্যের অ্যারোমেডিক ইভাকুয়েশন টিম (এএমইটি) এবং ১৩ জন অতিরিক্ত মিলিটারি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সফরে সেনাবাহিনী প্রধান দীর্ঘমেয়াদি বকেয়া রিইমবার্সমেন্ট পরিশোধের ব্যাপারেও জাতিসংঘের সিনিয়র নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর ফলে সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য অঙ্কের বকেয়া রিইমবার্সমেন্ট পরিশোধ করেছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি মালিতে নিয়োজিত বাংলাদেশের চারটি কন্টিনজেন্ট রিস্ক প্রিমিয়াম পাচ্ছে।

সেনাবাহিনী প্রধানের ঐকান্তিক উদ্যোগের কারণেই প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনে মোতায়েনের পূর্বেই সকল শান্তিরক্ষীদের করোনার টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করেছে। ইতোপূর্বেই যারা বিভিন্ন মিশনের মোতায়েন হয়েছেন তাদের জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে টিকা দেওয়া হচ্ছে।

কালের আলো/জিকেএম/এমএ