ওয়াসার পানি ব্যবস্থাপনা ‘অকার্যকর’ করার অপতৎপরতার নেপথ্যে
প্রকাশিতঃ 12:16 am | May 26, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
ঘাটতি দূর করে চাহিদার চেয়ে বেশি পানি উৎপাদন বা গতানুগতিক পানি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন। কোটি কোটি টাকা সাশ্রয়। সরকারের ভর্তুকি হ্রাস এবং আধুনিক, টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও গণমুখী পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত। সবকিছুতেই আমুল এক পরিবর্তন এনেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।
বঙ্গবন্ধু কন্যা, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম তাঁর সার্বিক পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। অথচ সময়ে সময়ে ‘ঢাকা ওয়াসা ঘুরে দাঁড়াও’ কর্মসূচির টুঁটি চেপে ধরতে ভেতরে-বাইরে নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছে। নেতিবাচক ফোকাসে ‘খলনায়ক’ বানানোর তোড়জোড় হয়েছে ওয়াসার এমডিকে।
মাসখানেক আগের একটি ‘অপচেষ্টা’ ব্যর্থ হওয়ার পর এবার ঢাকা ওয়াসার পানি ব্যবস্থাপনাকে ‘অকার্যকর’ করতে নতুন করে অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। মূলত এর মাধ্যমে রাজধানীকে অস্থিতিশীল ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ছক কষা হচ্ছে কীনা এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখার জোর দাবি উঠেছে।
জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার এক হাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ ২৫ থেকে ২৮ টাকা। আবাসিক ও বাণিজ্যিক আয়ের মধ্যে বাণিজ্যিক আয়ের হার ৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের সঙ্গে পানির দাম সমন্বয় করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ২২(২) ধারা অনুযায়ী ওয়াসা বোর্ড অনধিক ৫ শতাংশ হারে পানি ও পয়ঃঅভিকর সমন্বয় করতে পারে। সেই মোতাবেক সোমবার (২৪ মে) ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সভায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ৫ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করা হয়।
ওয়াসার পানি ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করে তুলতে বোর্ড সভায় নেওয়া এ সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর হয়েছে একটি চক্র। করোনা মহামারির ভেতরে প্রকৃত মূল্যে গত বছরের তুলনায় ০.৬৪ শতাংশ (২০২০ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৬৪) পানির দাম কমানো হলেও ভিন্ন মোড়কে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে নিজেদের প্রচারণায় মনগড়া তথ্য সন্নিবেশিত করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে ঢাকা ওয়াসার একজন কর্মকর্তা কালের আলোকে বলেন, ‘অনেকেই বলাবলি করছেন ঢাকা ওয়াসার এমডির সিদ্ধান্তে না কী পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এটি একটি ডাহা মিথ্যা তথ্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। আসলে পানির মূল্য বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা এমডির নেই। প্রতি বছর ওয়াসার অ্যাক্ট অনুযায়ী বোর্ডকে এই মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পানির দামের সমন্বয় করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’
অপর এক কর্মকর্তা কালের আলোকে বলেন, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পানির দামের সমন্বয় করা না হলে ঢাকা ওয়াসার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রাহক সেবা। সরকারের ভর্তুকি বাড়বে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই এই সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। এখানে ভিন্ন কালার বা মোড়ক দেওয়ার প্রবণতা অনভিপ্রেত।
জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে রাজধানীতে পানির জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছিল। রাজধানীর বেশিরভাগ মানুষই পানির সুবিধার আওতার বাইরে ছিলেন। এ নিয়ে জনঅসন্তোষ তীব্র আকার নিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে চাহিদার চেয়ে বেশি পানি উৎপাদন করছে ঢাকা ওয়াসা। এই সংস্থাটি নিজেদের দৈনিক পানির উৎপাদন সক্ষমতা ২৬৫ কোটি লিটারে উন্নীত করেছে। সামগ্রিকভাবে পানি ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি দূর হয়েছে।
ওয়াসার পানি ব্যবস্থাপনাকে অকার্যকর করার ‘খোয়াব’ দেখছে একটি চক্র। তাদের এই দিবা স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলে রাজধানীতে নাগরিক অসন্তোষের সৃষ্টি হবে। এতে সরকার বেকায়দায় পড়বে। পূর্বপরিকল্পিতভাবে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নেই এমন হীন কায়দায় অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়ান ইলেভেনে ‘কিংস পার্টির’ উদ্যোক্তা ও ঘোর আওয়ামী লীগ বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত একটি চক্র। এ চক্রটিই মূলত সরকার পতনের ‘নব্য ষড়যন্ত্রে’ মেতে উঠেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
একই সূত্রের অভিযোগ, এই চক্রটি কখনও আলজাজিরার মনগড়া ও কাল্পনিক চিত্রনাট্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে নিজেদের কন্ঠ চড়া করতে পারে। আবার তাঁরাই সরকারি সব নিয়ম-কানুন মেনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের বিদেশে অবস্থানকালীন টেলিওয়ার্কের বিরুদ্ধে বিষোদাগার করতে পারে। আদতে এরা একই নেক্সাস (Nexus)। এদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সরকারের বিরোধীতা করা। অধ:পতিত চরিত্র সচেতন মানুষের কাছে পরিস্কার।
কালের আলো/এসআর/এমএ