বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের পথে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হন তিনি।

বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, বিভিন্ন বাহিনী প্রধানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা। জাতিসংঘে এবারের সফরে ৫০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যবসায়ীদের ২০০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও তার সফরসঙ্গী হয়েছে।

একই দিন লন্ডনের স্থানীয় সময় ৩টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। লন্ডনে দু’দিনের যাত্রাবিরতির পর প্রধানমন্ত্রী রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটযোগে নিউইয়র্কের উদ্দেশে লন্ডন ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিনই স্থানীয় সময় ১টা ৪০ মিনিটে নিউইয়র্কের লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নিউ জার্সিতে পৌঁছানোর কথা প্রধানমন্ত্রীর।

বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সুশোভিত মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে নিউ ইয়র্কের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন। মানবিক দিক বিবেচনায় বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া এবং রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে শান্তিপূর্ণ কূটনীতিক প্রচেষ্টার জন্য ইন্টার প্রেস সার্ভিস এবং গ্লোবাল হোপ-এর কাছ থেকে দু’টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী।

২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সাধারণ পরিষদের ৭৩ তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব অন্তোনিও গুতেরেসসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের মিডটাউনের হোটেল হিলটনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন তিনি জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশনের আয়োজনে ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক হাই লেভেল ইভেন্টে যোগদান করবেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেবেন।

এছাড়া জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপক্ষীয় সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। তিনি হোটেল গ্রান্ড হায়াতে যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন। ওইদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের সম্মেলন কক্ষে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে বক্তৃতা করবেন।

সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্কের কনভেন কনফারেন্স সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইমপ্যাক্ট সামিট’-এ যোগদানের কথা রয়েছে। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দফতরের কনফারেন্স রুম ১১তে কানাডার প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত মহিলা এবং নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।

তিনি জাতিসংঘের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূতের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দফতরের ৩ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠেয় ‘মেকিং ইমপসিবল পসিবল : আনলকিং হিউম্যান পটেনশিয়াল থ্রো দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স ফ্যাসিলিটি ফর এডুকেশন’-শীর্ষক হাই লেভেল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।

সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করবেন। সংবর্ধনাটি নিউইয়র্কের লোটিস্থ নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের সরকারপ্রধান ২৫ সেপ্টেম্বর সাইবার নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক হাই লেভেল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিএ) যৌথভাবে জাতিসংঘ সদর দফতরের ৩নং কক্ষে এটির আয়োজন করবে। সাধারণ পরিষদ ভবনের নর্থ ডেলিগেট লাউঞ্জে জাতিসংঘের মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে যোগদান করবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকালে জাতিসংঘের অছি পরিষদ আয়োজিত জাতিসংঘ মহাসচিবের হাই লেভেল ইভেন্ট ‘অ্যাকশন ফর পিস কিপিং’ (এ ফোর পি)-এ অংশগ্রহণ করবেন তিনি।

২৬ সেপ্টেম্বর ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর, ইউএন হাই কমিশনার ফর রিফ্যুজিস (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি মঘেরনিনি জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপক্ষীয় সম্মেলন কক্ষে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

একইস্থানে শেখ হাসিনার ও এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালিজুলেইদের মধ্যে বৈঠক হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সচিবালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘ সদর দফতরের ১২ নং কক্ষে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কিত হাই লেভেল সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরে সংস্থাটির মহাসচিব ইন্টোনিও গুতেরেজের সঙ্গে বৈঠক করবেন এদিন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক কমিটি অব রেডক্রসের (আইসিআরসি) প্রেসিডেন্ট পিটার মওরার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। একইদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেও।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ‘নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক হাই লেভেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। আলোচনা সভাটি লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্টের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দফতরের ৩নং কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সদর দফতরে ইন্টার প্রেস সার্ভিসেস (আইপিএস) আয়োজিত সংবর্ধনাতেও যোগদানের কথা রয়েছে।

এদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এরপর নিউইয়র্কের পার্ক অ্যাভিনিউয়ে গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেবেন। অন্যান্য বারের মতো এবারও সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার পর দিন ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের নিউইয়র্কের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিন বিকালে শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ঢাকার উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করবেন। লন্ডন হয়ে ১ অক্টোবর সকালে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

কালের আলো/এমএইচএ