প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে রক্ষা পেলো ‘পুকুর চুরি’

প্রকাশিতঃ 7:08 pm | June 05, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলোঃ

ফ্রান্স থেকে ১৭৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি রাডার ক্রয় করার কথা। যা ২০১৭ সালের ১ মার্চ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন পায়।

১০ বছর মেয়াদি চুক্তিতে সরকারি অর্থায়নে রাডার ক্রয় অনুমোদনের ফাইল সম্প্রতি পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এ সময় তিনি জানতে পারেন ১ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকায় যে রাডার কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে; সেটি ৬৩০ কোটি টাকাতেই কেনা সম্ভব। অতিরিক্ত ১১২৫ কোটি টাকা যাবে নেপথ্যের সিন্ডিকেটের পকেটে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে নিবিড় খোঁজখবর নেন এবং মধ্যস্বত্বভোগী সেই সিন্ডিকেটের ফাঁদ এড়িয়ে জিটুজি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে ফ্রান্স থেকে রাডার ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন। সেই সঙ্গে ১ কাজার ৭৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাডার ক্রয়ের প্রস্তাবে মন্ত্রিসভা কমিটির দেওয়া অনুমোদনও বাতিল করে দেন।

প্রধানমন্ত্রীর এ সময়োপযোগী হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেছে ১১২৫ কোটি টাকা লুটপাটে সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্র।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত চল্লিশ বছরের পুরনো রাডারে নিরাপদ বিমান চলাচল ও দেশের আকাশসীমা নজরদারি কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ১০ বছর মেয়াদি চুক্তিতে আয়কর ও ভ্যাট ব্যতীত ১৭৫৫ কোটি টাকার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে প্রকল্পটি পিপিপির পরিবর্তে সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এরপর একাধিক বৈঠকে একই প্রস্তাব অব্যাহত ছিল। সব জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে প্রকল্পটি সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু সেখানেই ভেস্তে যায় পুকুরচুরির পরিকল্পনা।

স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে ফ্রান্সের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে এখন রাডার বসানোর প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। মূলত তাঁর দূরদর্শিতায় ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। কেননা এ রাডার প্রকল্পটি এর আগে দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি দিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়ে এ পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু একটি রাডার প্রকল্পে এত টাকা ব্যয়ের বিষয়টি সবার মনে সন্দেহ ও বির্তকের সৃষ্টি হওয়ায় তা আর চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।

সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তাদের বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল প্রকল্পটিতে পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছিলো। কিন্তু দেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সিভিল এভিয়েশন, মন্ত্রণালয় ও সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহলের সজাগ দৃষ্টি ও আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে রাডার প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন পেয়েছে।

জানা যায়, এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে দেশের এভিয়েশন খাতে যোগ হবে নতুন মাইলফলক। ফলে নিরাপদ বিমান চলাচল আরও নির্বিঘ্নে নিশ্চিত ও বিশ্বমানে উন্নীত হবে। মূলত নেভিগেশন সিস্টেমকে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিরাপদ আকাশ চলাচলের জন্যই সিএনএস-এটিএম নামে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয়ের হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে।

বেবিচক সূত্র বলছে, এই রাডারের প্রয়োজনীয়তা ছিল অনেক আগেই। দীর্ঘদিনের পুরাতন রাডার দিয়ে দেশের পূর্ণ সীমানা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। ফলে ক্ষেত্রবিশেষে অন্য দেশের বিমান বাংলাদেশের আকাশপথ ব্যবহার করলেও রাজস্ব বা জরিমানা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া নতুন অধিকার পাওয়া সমুদ্রসীমায় চলাচলকারী অন্য দেশের উড়োজাহাজ থেকে রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে নতুন রাডার স্থাপন অনস্বীকার্য হয়ে পড়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে বিশ্বে অত্যাধুনিক বিমানবন্দরগুলোয় ফ্রান্সের থ্যালাস কোম্পানির রাডার ব্যবহার করছে। থ্যালাস বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ সফল উৎক্ষেপণ করে। এর আগে ১৯৮০ সালেও জিটুজি’র ভিত্তিতে থ্যালাস বাংলাদেশে রাডার ও নেভিগেশন সিস্টেম চালু করে, যা এখন পর্যন্ত চালু রয়েছে এবং উড়োজাহাজের নিরাপদ উড্ডয়ন-অবতরণ নিশ্চিত করছে।

সূত্রে জানা গেছে, রাডার ক্রয়ের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকারও বেশি লুটপাট করতে প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল।

ওই সিন্ডিকেট ১ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা দিয়ে রাডার কিনতে ঘাটে ঘাটে বাধার সৃষ্টি করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তা ও নজরদারির কাছে ভেস্তে যায় সব ষড়যন্ত্র।

কালের আলো/বিএস/এমএম