রোহিঙ্গা সংকটে জৌলুস হারাচ্ছে সু চি’র সাহিত্য উৎসব!
প্রকাশিতঃ 10:36 pm | October 04, 2017
মিয়ানমারের বিখ্যাত নদী ইরাবতি। স্রোতস্বিনী ইরাবতির মতো করে সাহিত্য ধারাও প্রবাহমান থাকবে মিয়ানমারে; এমন আকাঙ্ক্ষা থেকেই সম্ভবত সেখানকার আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবের নাম দেওয়া হয় ইরাবতি সাহিত্য উৎসব। কথিত গণতান্ত্রিক সংস্কারের যুগে ২০১৩ সালে দেশটিতে সূচনা হয় ওই উৎসবের। এর পৃষ্ঠপোষক তখনকার আপোষহীন গণতন্ত্রপন্থী এবং আজকের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের ক্ষমতার ভাগীদার অং সান সু চি। গত চার বছরের আয়োজনে ইরাবতি উৎসব মিয়ানমারে সাহিত্যের ইতিহাসে একটি বড় ঘটনায় রূপান্তরিত হয়। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে আরও ঋদ্ধ করতে ওই উৎসব পরিণত হয় গুরুত্বপূর্ণ উন্মুক্ত ফোরামে। তবে এবার মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নিধনযজ্ঞের ঘটনায় উৎসবের ব্যাপকতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এরইমধ্যে এতে আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিদের কেউ কেউ জানিয়েছেন এ আয়োজনে তাদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত যদি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাহিত্যিকরা এতে অংশ না নেন; তাহলে পুরো আয়োজন তার জৌলুস হারাবে। সেক্ষেত্রে এটা মিয়ানমারের একটা অভ্যন্তরীণ উৎসবে পরিণত হবে। আগামী ৩ থেকে ৫ নভেম্বর এ উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৩ সালে এই উৎসবের উদ্যোক্তা ছিলেন মিয়ানমারের তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত এন্ড্রু হেইন-এর স্ত্রী জেন হেইন। এর সঙ্গে যুক্ত হন মিয়ানমার এবং মিয়ানমারের বাইরে বসবাসরত বিদেশিদেরও। এমনই একজন হলেন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ভ্রমণ গাইড বিষয়ক বই প্রকাশক প্রতিষ্ঠান লোনলি প্ল্যানেটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা টনি হুইলার। তিনি বলেছেন, এখনও পর্যন্ত তিনি এ আয়োজনে অংশ নিতে ফ্লাইট বুকিং দেননি। ইরাবতি সাহিত্য উৎসবে যোগদানের বিষয়েও তিনি এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেননি।
মেলবোর্নের বাসা থেকে ফোনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন টনি হুইলার। তিনি বলেন, আমি উভয় সংকটের মধ্যে রয়েছি। যদি আপনি সেখানে যান, তাহলে এই অংশগ্রহণকে বিদ্যমান সমস্যা উপেক্ষা করা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। দৃশ্যত মনে হতে পারে, এমন আচরণ করা হচ্ছে যেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক; কিন্তু বাস্তবতা হয়তো ভিন্ন। অন্যদিকে, আপনি যদি সেখানে না যান তাহলে মনে হবে, আপনি সমস্যার মুখোমুখি হতে চাইছেন না।
রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের চালানো গণহত্যার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না অস্ট্রেলিয়ার খ্যাতনামা শিশুতোষ লেখক গাস গর্ডন। তিনি ইরাবতি সাহিত্য উৎসবে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর সঙ্গে কথা বলেন গাস গর্ডন। তিনি বলেন, এটা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, সম্ভাব্য নিরাপত্তার ঝুঁকির বাইরেও এখানে অংশ নেওয়াটা ভুল। এটা মেলাতে পারছি না যে, আমি একটা সাহিত্য উৎসবে গেলাম এবং গল্প নিয়ে কথা বললাম যখন আমার ঘরের দরজায় একটি মানবিক সংকট চলছে।
লোনলি প্ল্যানেট গাইড বুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা টনি হুইলার এবং অস্ট্রেলিয়ার খ্যাতনামা শিশুতোষ লেখক গাস গর্ডন দুজনই রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বেগ না জানানোয় ইরাবতি সাহিত্য উৎসবের আয়োজকদের ওপর হতাশা প্রকাশ করেছেন।
উৎসবের ওয়েবসাইটে ২৫ জন সাহিত্যিকের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা সাহিত্য উৎসবে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদের মধ্যে স্কটিশ কবি ক্যারল অ্যান ডাফি, ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিনিধি ভিক্টর ম্যালেট, কানাডিয়ান লেখক মেডেলিন থেইন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
অন্যান্য বছর এ আয়োজনে সু চি অংশ নিতেন। তবে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের উৎসবে সু চি’র অংশ নেওয়াটা অনিশ্চিত।