মাটি ও মানুষের ‘আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী’র সংগ্রাম ও অর্জনের গৌরবময় পথচলা

প্রকাশিতঃ 10:29 am | June 24, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

এক সময় দেশের সবচেয়ে বড় ‘বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী’র নামের পাশে জ্বলজ্বল করতো ‘অবহেলিত’ শব্দটি। কিন্তু সময়ের প্রবাহমান মহাসমুদ্র পেরিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পর্বে গৌরবময় অবদান রাখা এই বাহিনীটি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভূতপূর্ব পুনর্জাগরণ ঘটিয়ে আধুনিক ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছে।

জরুরি প্রয়োজনে সরকারের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে এই বাহিনী বার বার উৎকৃষ্ট প্রমাণ দেওয়ায় মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী বছর চারেক আগে এই বাহিনীটিকে ‘মাটি ও মানুষের বাহিনী’ হিসাবে বর্ণনা করেন। দেশমাতৃকার সেবায় নানামুখী কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে দেশের সতের কোটি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন বাহিনীটির সদস্যরা।

বাল্য বিয়ে প্রথা বন্ধ থেকে শুরু করে মাদক নিমূর্ল, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনেও তাঁরা তৎপর ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়েই। প্রত্যন্ত পল্লী থেকে শুরু করে কূটনৈতিক এলাকা, কূটনৈতিক ব্যক্তি এবং দেশের বিশিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন এই বাহিনী।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ‘এভসেক’ (এভিয়েশন সিকিউরিটি) এর অংশ হিসেবে সফলতার সঙ্গেই যেমন দায়িত্ব পালন করছেন তেমনি পার্বত্য এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে অপারেশনাল ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে বাহিনীটির ১৬ টি ব্যাটালিয়ন।

৬১ লাখ সদস্যের এই বিশাল বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার অঙ্গীভূত সদস্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেও পালন করছেন অনন্য এক ভূমিকা। আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রেও এই বাহিনী সারাদেশে ‘এক বিশাল পরিবর্তন’ সূচনা করেছেন।

শুধু তাই নয়, দেশের প্রতিটি নির্বাচনে সরকারের হয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে জীবনবাজি রেখেছেন এই বাহিনীর সদস্যরা। আর এসবের নেপথ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনসার বাহিনী পুনর্গঠনে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

সেই গতিধারায় গত এক যুগে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকায়ন হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে। ফলে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ ও জনসম্পৃক্ত একটি বৃহৎ শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনিই প্রথম আনসার বাহিনীর হাতে সর্বোচ্চ সম্মান ‘জাতীয় পতাকা’ তুলে দেন।

বরাবরই রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত এই বাহিনীটির সদস্যদের সততা, আন্তরিকতা এবং সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ঠিক তেমনি আহ্বান জানিয়েছেন জনগণের সুরক্ষা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনেরও।

প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখা এবং এই পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে আনসার সদস্যরাও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।’

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম জাতীয় সমাবেশেও প্রধানমন্ত্রী আনসার ব্যাটালিয়ন আইন প্রণয়নের কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’ এবং ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স’ এর নিরাপত্তার জন্য দুইটি আনসার ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’

সূত্র মতে, ইতোমধ্যেই আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন গঠনের টিওএ্যান্ডই প্রস্তুত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সদর দপ্তর। একইভাবে মুজিবনগর আনসার ব্যাটালিয়ন ও রূপপুর আনসার ব্যাটালিয়ন গঠনের টিওএ্যান্ডই তৈরী করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব করা পাঠানো হয়েছে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে ১০০ জন ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যের পদ তৈরির বিষয়টিও।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশিত চলতি করোনা যুদ্ধে সম্মিলিত উদ্যোগ আর সচেতনতার মাধ্যমে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। আর এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতোমধ্যেই বাহিনীটির ২০ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন।

সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপের ফলে ক্রীড়াঙ্গণেও নিজেদের আধিপত্য অব্যাহত রেখেছেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। এই বাহিনীটির ক্রীড়া দল জাতীয় পর্যায়ে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৩১ টি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ২৩ টি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছে। ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০’ এ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্রীড়া দল ১৩৩ টি স্বর্ণ, ৮০ টি রৌপ্য এবং ৫৭ টি তাম্র পদক অর্জন করে টানা পঞ্চমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

জানা যায়, ‘সর্ববৃহৎ ও সুশৃঙ্খল’ এই বাহিনী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের প্রয়োজনে সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে ১২ জন আনসার সদস্যের ‘গার্ড অফ অনার’ প্রদান করেন।

বাঙালি জাতির মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনী স্বতঃস্ফূর্ত ও ব্যাপক অংশগ্রহণ ও ৬৭০ জন সদস্যের প্রাণদান ইতিহাসে লেখা রয়েছে স্বর্ণাক্ষরেই। বাহিনীটির সদস্যদের কাছে রক্ষিত ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেলই ব্যবহৃত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে মূল অস্ত্র হিসেবে। ৫২’র ভাষা আন্দোলনেও আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বারের আত্নত্যাগ চির অম্লান হয়ে থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নানা কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল বাস্তবায়ন করেন। নিজের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও বিচক্ষণ সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বাহিনীকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে উদ্যোগী হয়েছেন।

আনসার বাহিনীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর যতো পদক্ষেপ
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বাহিনীটিকে আধুনিকায়ন করার পদক্ষেপ কার্যকর ও বাস্তবায়ন করছেন সরকারপ্রধান। বাহিনীটির সদস্যদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন। ১৯৯৮ সালে বাহিনীর প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তীতে তাদেরকে জাতীয় পতাকা প্রদান করেন। ব্যাটালিয়ন আনসারদের চাকুরি ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১২ বছর, ১২ বছর থেকে কমিয়ে ৯ বছর এবং ৯ বছর থেকে কমিয়ে ৬ বছরে স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা করেছেন। উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা (ইউএভিডিও) পদকে দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড পদে উন্নীত করেন।

দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাহিনীটিকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ হিসেবে সাধারণ মানুষকে স্বাবলম্বী করতে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ (বর্তমানে আমার বাড়ী আমার খামার) প্রকল্পে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে যুক্ত করেছেন। প্রায় ৫০ হাজার অঙ্গীভূত আনসারদের বাছাই থেকে শুরু করে নিয়োগ বদলী এবং বেতন ভাতাদি পরিশোধ প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। বাহিনীর কর্মকর্তা-কমচারী ও সদস্য-সদস্যদের বীরত্বপূর্ণ এবং প্রশংসনীয় কাজের জন্য বাংলাদেশ আনসার পদক, বাংলাদেশ ভিডিপি পদক, রাষ্ট্রপতি আনসার পদক এবং রাষ্ট্রপতি ভিডিপি পদক প্রবর্তন করেন বঙ্গকন্যা।

সূত্রটি আরও জানায়, উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ১৫টি আনসার ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরকে ‘মডেল ব্যাটালিয়ন’ সদর দপ্তরে রূপান্তর করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। একই সঙ্গে ২৯টি জেলা ও ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে কিচেন, ডাইনিং এবং প্রশিক্ষণ ক্লাশ রুমের সুবিধা সম্বলিত ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের মঞ্জুরী প্রদান করেন।

ইতোমধ্যেই সবগুলো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভিআইপি এবং ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা দায়িত্ব পালনের জন্য ২টি আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) গঠনের মঞ্জুরী প্রদান করেছেন। বাহিনীর উর্ধ্বতন পর্যায়ে দ্বিতীয় গ্রেডে একটি অতিরিক্ত মহাপরিচালক, তৃতীয় গ্রেডে ৮টি উপ-মহাপরিচালক এবং পঞ্চম গ্রেডে ৪৪টি পরিচালক পদ তৈরির অনুমোদন প্রদান করেছেন।

সূত্র মতে, আনসার বাহিনীর কমকর্তাদের জন্য নতুন আনুষ্ঠানিক পোষাক এবং কর্মকর্তা ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের জন্য নতুন কম্ব্যাট পোষাক প্রবর্তন করা হয়েছে। ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের আনসার, ল্যান্স নায়েক ও নায়েক এই তিনটি পদের বেতন গ্রেড প্রথম ধাপ উন্নীত করে পর্যায়ক্রমে ১৭, ১৬ ও ১৫তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। সেই সাথে ৩৭ টি আনসার ব্যাটালিয়নের জনবল ৪১৬ থেকে ৪২৫ এ উন্নীত করেছেন সরকারপ্রধান।

করোনার প্রথম ঢেউ পরবর্তী পর্যায়ে আনসার ও ভিডিপি’র সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য নামমাত্র সুদে আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকা কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা খাতে ঋণ মঞ্জুর করেছেন হ্যাট্টিক প্রধানমন্ত্রী।

গর্বিত সহযাত্রী হতে দৃপ্ত শপথ
রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে পাওয়া বাংলাদেশের আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। তৃণমূল থেকে বাঙালির জাগরণে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে বাহিনীটি। বাহিনী সদস্যদের পরস্পরের অন্তরের সুপ্ত মনুষ্যত্বের বোধকে উদ্দীপ্ত করে উপভোগ্যকর কর্মময় পরিবেশ গড়ে তুলতে উজ্জীবনের প্রয়াস নিয়েছেন বাহিনীটির ৩৮ তম মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বিপি,ওএসপি,এনডিসি,পিএসসি।

গত বছরের ৯ আগস্ট দায়িত্বভার গ্রহণ করে প্রতিটি সদস্যকে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে গর্বিত সহযাত্রী হতে দৃঢ় শপথে বলীয়ান করে তুলেছেন। অব্যাহত রেখেছেন একটি আধুনিক ও পেশাগতভাবে দক্ষ বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে নিরলস প্রচেষ্টাও।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিজি মিজানুর রহমান শামীম নিজ পদে যোগদানের পর ব্যাটালিয়ন আনসারের প্রবিধি সংশোধন করেছেন। ৯৪ জন উপজেলা প্রশিক্ষিকার অস্থায়ী পদে ৫০% সংশোধিত চাকুরীকাল গণনার প্রশাসনিক আদেশ জারি করেছেন। জারি করেছেন ৩৩৩ জন উপজেলা/থানা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষক/প্রশিক্ষিকাদের চাকুরী স্থায়ীকরণের আদেশ।

ইতোমধ্যেই জেলা ও ব্যাটালিয়ন সদরে আনসার ও ভিডিপি’র ব্যারাকসমূহের ভৌত সুবিধাদি সম্প্রসারণ- শীর্ষক প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়েছে। ভাষা শহিদ আব্দুল জব্বার স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা ও শিক্ষাদানের সক্ষমতা উন্নীত করার লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান তৈরী করেছেন। যার ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছে প্রথম পর্যায়ের কাজ। একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু স্পোর্টস্ কমপ্লেক্স এর মাস্টার প্ল্যান তৈরী করে ডিপিপি প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছেন।

সূত্র জানায়, আনসারপ্রধান টাইপ প্ল্যান অনুযায়ী আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন উপজেলা অফিসের প্রোটো টাইপ প্ল্যান চূড়ান্ত করেছেন। এই মোতাবেক মডেল উপজেলা অফিস নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মডেল উপজেলা অফিস নির্মাণের জন্য জমি সংক্রান্ত চাহিদা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের যোগাযোগের মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়াও রাজস্ব বাজেটের আওতায় ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের আবাসনের জন্য ব্যারাক নির্মাণ ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ শুরু করা হয়েছে। আনসার ও ভিডিপি হাসপাতালের ভিআইপি কেবিন ব্লক সংস্কার করা হয়েছে এবং ৩ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, ৩ জন আরএমও ও ৫ জন মেডিকেল অফিসার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

একই সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ আনসার (সরকারি) কল্যাণ তহবিল থেকে ২ হাজার ৩২০ জনকে ৪ কোটি ৬২ লক্ষ ৩১ হাজার ১১০ টাকা এবং বাংলাদেশ ভিডিপি (সরকারি) কল্যাণ তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৩৬ জনকে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা অনুদান প্রদান করেছেন বর্তমান ডিজি।

বাহিনীটির সদর দপ্তরসহ ১৯টি ইউনিটে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপন করা হয়েছে। অবশিষ্ট সব ইউনিটে দ্রুত স্থাপনের কাজও চলছে। এছাড়াও বছরব্যাপী বাহিনীর সব প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পাঠ্যসূচীতে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে চলমান মাস্টার্স ইন হিউম্যান সিকিউরিটি কোর্সেও এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আপনাদের প্রশিক্ষণ শুধু নিজেদের না, গ্রামের মানুষকেও উদ্বুদ্ধ করতে পারে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকেও আপনারা আত্মমর্যাদাশীল হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন।’

সেই মোতাবেক আনসার সদর দপ্তর কর্তৃপক্ষ ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৯ হাজার ২৯১ জন সদস্যকে সাধারণ আনসার প্রশিক্ষণ এবং ৫৬ হাজার ২২৫ জন ভিডিপি সদস্যকে মৌলিক ও কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।

আরও একগুচ্ছ উদ্যোগ-পরিকল্পনা
কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে দীর্ঘ চাকরি জীবনে নিজেকে প্রমাণ করেছেন আনসারপ্রধান মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও সঠিক দিক নির্দেশনায় নিজ বাহিনীটিকে আধুনিক ও সুশৃঙ্খল একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

নিজ বাহিনীর উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে মসৃণ করতে ডিজি মিজানুর রহমান শামীম ৫৩৯ জন থানা/উপজেলা আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষক ও থানা/উপজেলা প্রশিক্ষিকা পদ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট/উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা/সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট/সমমান পদে পদোন্নতির প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে আনসার মিউজিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। জেলা পর্যায়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা কার্যালয় নির্মাণের প্রোটো টাইপ নকশা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেঞ্জ পর্যায়ে সমন্বিত রেঞ্জ কার্যালয় নির্মাণের লক্ষ্যে প্রোটো টাইপ নকশা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর ঢাকার অদূরে ধামরাই-এ স্থানান্তরের জন্য ধারণাগত স্থানিক নকশা ও জমি নির্বাচনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের প্রাপ্ত রেশনের অতিরিক্ত ডাল ও চিনি রেশন সামগ্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ব্যাটালিয়ন আনসার এবং সাধারণ আনসার সদস্যদের অবসর গ্রহণ পরবর্তী কল্যাণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘আনসার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র মতে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাড়ীচালক, নারী সমাজের কর্মসংস্থান এবং দক্ষ কম্পিউটার জ্ঞানসম্পন্ন যুবশক্তির স্বল্পতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ৫ বছরে ১ লক্ষ আনসার ও ভিডিপি সদস্য-সদস্যাকে মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, সেলাই প্রশিক্ষণ এবং কম্পিউটার এ্যাপ্লিকেশন প্রশিক্ষণের মেগা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। চলমান রয়েছে বাহিনীটির জন্য নতুন ১০ হাজার শটগান কেনার প্রক্রিয়া।

একই সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বাহিনীটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম তৃণমূল পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী ভিডিপি সদস্যদের কল্যাণের বিষয় বিবেচনা করে প্রতিটি রেঞ্জে একজন করে দুস্থ ও অসহায় ভিডিপি সদস্যাকে বাহিনীর তরফ থেকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন। পর্যায়ক্রমে একই বিবেচনায় প্রতি জেলায় একজন করে ভিডিপি সদস্যকেও গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ডিজির
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভাবমূর্তি ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে নিজেদের উপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে যথাযথভাবে পালন করতে নিজ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডিজি মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম।

কালের আলোর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাহিনীর প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মমত্ববোধ ও অবদান বাহিনীর সদস্য-সদস্যাদেরকে অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী নির্দেশনায় দেশের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা ও জরুরি মুহুর্তে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মতৎপরতা এই বাহিনীকে সরকারের এক নির্ভরযোগ্য অংশে পরিণত করেছে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে এই বাহিনীর সদস্যরা সবসময়ই কর্মদক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়ে আসছেন।’

মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম আরও বলেন, ‘আমাদের বাহিনীর সদস্যদের সক্ষম ও যোগ্য করে দেশসেবায় সম্পৃক্ত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা বদ্ধপরিকর।’

[মুজিববর্ষ উপলক্ষে কালের আলোর বিশেষ প্রকাশনা ‘৫০ বছরে বাংলাদেশ; অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বিশেষায়িত প্রিন্ট ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া।]

কালের আলো/এসএম/এমএইচএ