শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনা-ই

প্রকাশিতঃ 10:16 am | June 25, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

জাতির পিতার হাতে গড়া দল, নেতৃত্ব দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলা গড়ে তোলার। সেভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেন তিনি। তাই সম্পদ বলতে মাটি ও মানুষকে নিয়েই শুরু করেন স্বপ্নের পথচলা।

কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকচক্রের ষড়যন্ত্র জোতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। বাঙালির জীবনে নেমে আসে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ববর্র কালরাত। এরপর যেন স্বপ্ন দেখতেও ভয় পেতো বাঙালি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল জাতি।

এ অবস্থায় কঠিন সময় পার করে স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানকারী ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। কষ্টের সীমা ছিলো না যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদেরও। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন জাতির পিতার রক্তের উত্তরাধিকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে দল গোছানোর কাজে হাত দেন তিনি। ছুটে যান দেশের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ান, উজ্জ্বীবিত করে তোলেন তাদের। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে হাতি যে শোক সাগরে নিমজ্জিত হয়েছিল, শেখ হাসিনাকে কাছে পেয়ে যেন ভরসা পেলেন। এভাবেই বাঙলার মানুষের দুঃখ-কষ্টে একমাত্র ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

গত ৫০ বছরের যত অর্জন, তার বেশিরভাই এসেছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশ হয়েছে বিশ্বের বিস্ময়। উঠেছে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।

এবছর ৭২ বছরে পা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ছিল ৪০ বছরেরও বেশি সময়। টানা ৯ বার দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সংখ্যার হিসাবে ছাড়িয়ে গেছেন পিতাকেও। বঙ্গবন্ধু টানা আট বছর সভাপতিসহ মোট ২৫ বছর দলের বিভিন্ন পদে ছিলেন।

সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অসংগঠিত দলটিকে সুংগঠিত করেছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী বলে দাবি করেন দলটির নেতাদের।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে অনেকগুলো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা। দলকে ক্ষমতায় এনেছেন চারবার। রেকর্ড ভেঙে টানা তৃতীয় টার্মে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

৭২ বছরের মধ্যে ২১ বছর দেশের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে সাড়ে ১৬ বছরই নেতৃত্বে আছেন শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দেশের মানুষের অধিকার আদায়েপালণ করেছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ১২ বছর বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন জাতীয় সংসদে।

শেখ হাসিনার যত উন্নয়ন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ চাক্ষুষ করেছে অভূতপূর্ব সব উন্নয়ন। দেশের নানা সংস্কারমূলক কাজ হয়েছে তাঁর হাত দিয়েই।

তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ওই সময় ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন ও পার্বত্য শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায় ২১ ফেব্রুয়ারি।

নারীর ক্ষমতায়ন
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের সব পরিষদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত পদ সৃষ্টি করে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেন শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা এমপির সংখ্যাও তিনি বৃদ্ধি করেছেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়েই সন্তানের পরিচয়ে পিতার পাশাপাশি মায়ের নাম যুক্ত করার বিধান চালু হয়। সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন, আদালত থেকে শুরু করে বিভিন্ন উচ্চপদে নারীদের অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে তাঁর আমলেই। তিনি প্রথম নারী স্পিকার মনোনীত করেন। সংসদের উপনেতাও করেছেন নারীকে।

সরকারের পাশাপাশি দলেও নারী নেতৃত্ব বেড়েছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব এখন ২৫ শতাংশের বেশি। সব স্তরে নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ করার নির্বাচন কমিশনের যে শর্ত তা পূরণের পথে এগোচ্ছে দলটি।

দলের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন হিসেবে যুব মহিলা লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগ নামে দুটি উইং হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই।

বিশ্বজুড়ে শেখ হাসিনা বন্দনা
বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিচারে একাধিকবার বিশ্বের প্রভাবশালী নেতৃত্বের উপাধী পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসের জন্য বেশ আগেই আন্তর্জাতিক পদকে ভূষিত হয়েছে দেশ।

আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসন আমলেই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। দেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এ বছরই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন
স্বাধীনতার গত ৫০ বছরে শেখ হাসিনার হাত দিয়েই ঘটেছে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার। তিনিই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা নিয়ে এ দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ঘোষণার সময় অনেকেই এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে নানা মন্তব্য করেন। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তব। যার সুফল ভোগ করছে দেশবাসী।

তথ্য-প্রযুক্তির যত উন্নয়ন
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে মহাকাশে এখন আছে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট। বিশ্বব্যাংকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে গড়েছেন পদ্মা সেতু।

সর্বশেষ বৈশ্বিক মহামারি করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় তার ভূমিকা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।

ছিটমহল সমস্যার সমাধান
ভারতের সঙ্গে ৬৮ বছরের ছিটমহল ও সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে সুবিশাল সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)-এর মতো আন্তর্জাতিক দুটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ।

অর্থনীতির চাকায় নতুন গতি
২০০৮-৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ হয়। মাথাপিছু জাতীয় আয় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৭৫৯ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১-এ তা দাঁড়ায় ২২২৭ ডলারে।

রাজস্ব আয় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৬৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ এ হয় তিন লাখ ৪৮ হাজার ৫৯ কোটি।
রফতানি আয় ২০০৮-০৯ এ ছিল ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয় ৪০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে আমদানি ব্যয় ২২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৫৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

রিজার্ভ বেড়েছে, বেড়েছে প্রবাসী আয়
২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রবাসী আয় ছিল ৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ এ তা দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। বর্তমানে মাছ, মাংস ও সবজি উৎপাদনে অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের কারণেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুকন্যা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ও সুদক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন, স্থিতিশীল অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নয়নে গতিশীলতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

সদ্যপ্রয়াত লেখক ও লোক সাহিত্যিক শামসুজ্জামান খান আওয়ামী লীগের মূল্যায়নে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ‘পাকিস্তান’ নামের অবৈজ্ঞানিক এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিকভাবে এক উদ্ভট রাষ্ট্রের পূর্ববাংলার বাঙালি জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে অবজ্ঞায়, অবহেলায় ও ঔপনিবেশিক কায়দায় শোষণ-পীড়ন-দমন ও ‘দাবিয়ে রাখা’র বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং গণসংগ্রামের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা বিপুল জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল। এই দলের নেতাকর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অঙ্গীকার দীপ্ত সংগ্রামী ভূমিকা ইতিহাস বিদিত।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে বাঙালির আবেগ-অনুভূতি হিসেবে উল্লেখ করে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, আওয়ামী লীগ বাঙালির আবেগের সংগঠন, ভালোবাসার সংগঠন, অনুভূতির সংগঠন। আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রায় প্রতিটি পদে বাধা ছিলো। সব বাধা পেরিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়েছেন।

‘এদেশের গণমানুষের আবেগের সংগঠনে পরিণত করেছেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন পর্যন্ত পরতে পরতে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের হাত ধরে আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, পাকিস্তান মুসলিম লীগ সরকারের দুঃশাসন, নির্যাতন, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের জন্ম। জন্মলগ্ন থেকেই গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে কাজ করছে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘শেখ হাসিনা সব ধরনের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের জায়গায় এসেছেন। শেখ হাসিনার বিকল্প এখন শেখ হাসিনাই।’

‘না সরকারে, না রাজনৈতিক অঙ্গনে; তার নেতৃত্বের কোনও বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন দ্বারা প্রভাবিত শেখ হাসিনা জাতির পিতার অসম্পূর্ণ কাজগুলোই সম্পূর্ণ করছেন,’ যোগ করেন তিনি।

কালের আলো/ডিডিএস/এমএম