নারী গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর সৌদি দূতাবাস, সহযোগিতার আশ্বাস গভর্নরের

প্রকাশিতঃ 4:21 pm | June 30, 2021

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট, কালের আলো :

সৌদি আরবে কাজ করতে যাওয়া বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের বঞ্চনার শেষ নেই। প্রতারিত হওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত বেতন না পাওয়া, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং ভাষা সমস্যাসহ নানা ধরনের বিপদের শিকার হচ্ছেন।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

বিপদগ্রস্ত এসব নারী গৃহকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস। দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) সঙ্কটে পড়া এসব গৃহকর্মীদের দ্রুত ডিপোর্টেশন সেন্টার অথবা ‘সেফ হাউসে’ জায়গা করে দিতে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের গভর্নর প্রিন্স সউদ বিন নায়েফ আল সউদকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) সৌদি গর্ভনরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রদূত ড. জাবেদ পাটোয়ারী এ এ অনুরোধ জানান। সংশ্লিষ্ট গভর্নর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র কালের আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের হাসপাতালের মর্গে যেসব অবৈধ অভিবাসীদের মৃতদেহ সংরক্ষিত রয়েছে, তাঁদের ফি মওকুফের জন্যও গভর্নরকে অনুরোধ জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।

দূতাবাস সূত্র জানায়, হাসপাতালের মর্গে থাকা অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের লাশ দেশে পাঠানোর জন্য দূতাবাস সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালের ফি’র জন্য মরদেহগুলো দেশে পাঠানো অথবা সৌদি আরবে দাফনের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

এদিকে, করোনাকালে অনেক শ্রমিক সৌদি আরবে চাকুরিচ্যুত হয়ে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। এসব অবৈধ অভিবাসীরা দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য চূড়ান্ত বর্হিগমনের ছাড়পত্র পেতে আবেদন করেছেন।

কিন্তু ওই ছাড়পত্র দেয়ার প্রক্রিয়াটা এত ধীরে হচ্ছে যে তাঁরা দেশে যেতে পারছে না। এ অবস্থায় তাঁদের জন্য সৌদিতে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রদূত অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি দ্রুত সম্পন্ন করতে গভর্নরকে অনুরোধ জানান।

রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি একজন বাংলাদেশিকে মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই দেওয়া এবং বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য গভর্নরের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রদূত পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের বিভিন্ন জেলে প্রায় ২৪৫ জন বাংলাদেশি বন্দি রয়েছে উল্লেখ করে তাঁদের মধ্যে কেউ গুরুতর অপরাধ না করে থাকলে তাঁকে ক্ষমা করার জন্য গভর্নরকে অনুরোধ করেন।

এছাড়া সৌদির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দাম্মামে অবস্থিত বাংলাদেশ কমিউনিটির স্কুলের স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য জমি কেনার ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত গভর্নরের সহায়তা কামনা করেন। বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখবেন বলে রাষ্ট্রদূতকে আশ্বাস দেন তিনি। রাষ্ট্রদূত সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে পর্যটন বাড়ানোর আহ্বান জানান।

একই সঙ্গে রাষ্ট্রদূত গত মঙ্গলবার সকালে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের পুলিশ প্রধান মেজর জেনারেল আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ আলকুরাইশের সঙ্গে বৈঠক করেন।

রাষ্ট্রদূত এ সময় এ অঞ্চলে বসবাসরত বাংলাদেশি গৃহকর্মীদের যেকোনো বিপদে সহায়তা করার অনুরোধ জানান। পুলিশপ্রধান বাংলাদেশি গৃহকর্মীদের সহায়তার আশ্বাস দেন ও বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রশংসা করেন।

রাষ্ট্রদূত এ প্রদেশের দাহরানে অবস্থিত কিং ফাহাদ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মাদ আল সাজ্ঞাফের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা বৃদ্ধি ও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন।

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দাম্মামে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি তাঁদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন ও দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন।

ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এ প্রদেশের দাহরানে অবস্থিত কিং ফাহাদ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মাদ আল সাজ্ঞাফের সাথে বৈঠক করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা বৃদ্ধি ও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন।

সৌদির ভিশন ২০৩০ ও বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে একটি আধুনিক শিক্ষিত জাতি গঠনে যৌথ গবেষণার প্রস্তাব দেন তিনি।

এর আগে গত দু’দিনে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দাম্মামে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সাথে মতবিনিময় করেন।

এ সময় তিনি তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন ও দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। মতবিনিময় সভায় দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সেলর মুর্তজা জুলকার নাঈন নোমান ও কাউন্সেলর হুমায়ূন কবীর উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএইচএ/এমকে