বিএনপিকে কেন ‘তুলোধুনো’ করলেন প্রধানমন্ত্রী?
প্রকাশিতঃ 11:29 pm | July 03, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :
জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাপনী ভাষণই সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পাশাপাশি কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি’র।
এক কথায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে পুরো দলটির বিতর্কিত ভূমিকার কারণে তীব্র ভাষায় তাদের আক্রমণ করেছেন হ্যাট্টিক সরকারপ্রধান।
শনিবার (৩ জুলাই) বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনি ছিল সেটি যেমন উল্লেখ করেন, জিয়াউর রহমান খালেদা জিয়াকে সংসারে ঘরে নিতে চাননি, সে প্রসঙ্গটিও তুলে এনেছেন। জিয়াউর রহমান একাধারে সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, এটি ছিল সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একমাত্র স্বৈরাচারী আইয়ুব খান এরকম দুই দায়িত্ব নিয়েছিলেন উল্লেখ করে জিয়াউর রহমানের আমলে মুক্তিযোদ্ধা সেনাবাহিনীকে হত্যা করা, হাজার হাজার সৈনিককে হত্যা করার প্রসঙ্গটিও প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে মোটা দাগে উপস্থাপন করেন।
‘কুরআনে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা নেই’ বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদের এমন বক্তব্য ভুল প্রমাণ করে ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য বলেছেন কুরআন শরীফে নাকি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা নেই। আমি বলব অবশ্যই আছে। কুরআন শরীফে আছে, লাকুম দিনুকুম ওয়া লিয়া দ্বীন অর্থাৎ যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে।’
বিএনপির নতুন নামকরণ
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নতুন নামকরণ করে বলেন, ‘বিএনপি মানে হলো বাংলাদেশ না, পাকিস্তান হ্যাঁ পার্টি।’ এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার আমলে ভোট চুরি, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য যেভাবে সংবিধান সংশোধন করে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়ানো হয়েছে।’

যেসব কারণে বিএনপির সমালোচনা
রাজনীতিতে সব কূল হারিয়ে এখন একেবারেই ম্রিয়মাণ বিএনপি। আর ঠিক সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ করেই কঠোর ভাষায় বিএনপির সমালোচনা করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দন্ডিত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়াকে কেন্দ্র করে কোন কোন মহল জলঘোলা করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে দলটি মানবিক বিষয়টি সামনে আনতে চাইছে। এ কারণেই সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী বিএনপির রাজনীতির ছলচাতুরির বিষয়টি আবারও সবার সামনে এনেছেন।
একই বিশ্লেষণ বলছে, রাজপথে এমনকি দল হিসেবেও বিএনপি নিধিরাম সর্দারের ভূমিকায় থাকলেও আদতে তারা ষড়যন্ত্রে পটু। এখনও দলটি লন্ডনী বার্তায় নানামুখী কূটকৌশল এর মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টির অপপ্রয়াস নিয়েছে।
এসব কারণেই জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে নিজের অভিযোগের নিশানা করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
এমনকি হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা সাফ সাফ বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার পর বেগম জিয়াকে ঘরে নিতে চাননি। কারণ তার আরেকটি ঘটনা আছে, সেটি আমি জানি।’

কেউ কেউ মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তীব্র ভাষায় সরকারকে সমালোচনা করছেন। এই প্রেক্ষাপটে হয়তো প্রধানমন্ত্রী বিএনপির এসব সমালোচনার জবাব দিলেন।
নিজের দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন আর সেটি হচ্ছে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। জাতীয় সংসদে তাদের আসন যতই থাকুক না কেন কিংবা ওদের দলে যতই দ্বিধাবিভক্ত থাকুক না কেন এবং দলের নেতৃত্বে যতই শূন্যতা থাকুক না কেন বিএনপির একটি সমর্থক গোষ্ঠী আছে যারা আওয়ামী বিরোধী এবং বাংলাদেশ বিরোধী তারাই যে বিএনপির ভোট ব্যাংক এটি প্রধানমন্ত্রীর মাথায় ঠিকই আছে।
এসব কারণেই বিএনপির সম্পর্কে যে তথ্যগুলো আবার জাতীয় সংসদের রেকর্ডে তুলে প্রধানমন্ত্রী একটি বিষয়ে সুস্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতির মূল বিভাজনটা মুক্তিযুদ্ধ এবং ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের। সেই বিভাজনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ, আওয়ামী বিরোধী শক্তি এবং আওয়ামী বিরোধী শক্তির নেতৃত্বে বিএনপি।
কালের আলো/পিএম/এমএম