বাংলাদেশি সেনাদের প্রশিক্ষণে স্বাবলম্বী দক্ষিণ সুদানের নারীরা
প্রকাশিতঃ 1:46 pm | July 04, 2021

কালের আলো ডেস্ক :
দক্ষিণ সুদান, গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত কাটিয়ে ওঠা একটি দেশ। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট্ট শহর ওয়াউ। সেখানে নিয়োজিত রয়েছেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা।
দায়িত্ব পালনকালে সেখানকার মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের আত্মোন্নতিতেও কাজ করছেন তারা।
এরই আলোকে ওয়াউ শহরের ১৩ নারীকে সেলাইয়ের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কীভাবে কাপড় কাটতে হয়, ডিজাইন করতে হয় কিংবা সেলাই করতে হয়— মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তা শিখেছেন দারিদ্র্যপীড়িত এসব নারী।
গৃহযুদ্ধ ও সংঘাতকবলিত মধ্য আফ্রিকার দেশটির দারিদ্র্যপীড়িত এসব নারীকে কর্মমুখী শিক্ষা দিতে এ উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসংঘ মিশন।
আর প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটি করছেন দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত বাংলাদেশের নারী সেনা সদস্যরা। আন্তরিকতা দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে বেশ প্রশংসাও কুড়িচ্ছেন তারা।
জানা যায়, প্রশিক্ষণার্থী এসব নারী ওয়েস্টার্ন বাহর আল গজল প্রদেশের বাসিন্দা। সরকারের লিঙ্গ, শিশু ও সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব নারীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এসব নারীকে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়টি। একই সঙ্গে যাদের বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম আয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই তারাই অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন।
জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের একজন ৩০ বছর বয়সী জাস্টিনা নাসের। দুই সন্তানের এই জননী বলেন, আমি চা বিক্রি করতাম। তাতে সংসার চলতো না। তারপর জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে কাপড় সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছি।
‘কাপড় কাটা, সেলাই ও ডিজাইনের প্রশিক্ষণ পাওয়ায় আমার আয় কিছুটা হলেও বাড়বে। আর এটা করে আমি আমার বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারবো। এখন আমি আর আমার স্বামী যা করতে হিমশিম খাচ্ছি।’
ওয়াউয়ের নারী সংগঠনের সদস্য অ্যাঞ্জেলিনা পলও প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। কাপড় সেলাইয়ের কাজ শিখেছেন তিনিও। এখন তিনি আশাবাদী, তার মাধ্যমে সংগঠনের অন্য সদস্যরাও এসব দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
নারী নেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা পল বলেন, ‘সংগঠনের পক্ষ থেকেই আমাকে ওই প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হয়েছিল, যাতে আমি শেখার পর অন্য সদস্যদের তা শেখাতে পারি। এর ফলে আমাদের সব সদস্যের কর্মসংস্থান হবে। এতে আমরা সবাই উপকৃত হবো।’
প্রদেশটির লিঙ্গ, শিশু ও সমাজসেবা বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টিনা আলি বলেন, দেশের মানুষ বিশেষ করে নারীদের কর্মমুখী শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে লিঙ্গসমতাভিত্তিক একটি কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এতে উজ্জ্বল হবে দেশের ভবিষ্যৎ।
প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আগে নারী টেইলর পাওয়া ছিল বিরল। কিন্তু সময় এখন বদলেছে। আমি আপনাদের এটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এতে আপনাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।’
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রশিক্ষক বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী খাশিয়া মারমার বলেন, শান্তিরক্ষী হিসেবে যখন আমাকে এই অঞ্চলে পাঠানো হয় তখনই আমি দেখি এখানকার অনেক একাকী মা গৃহযুদ্ধে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তারা এখন প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করতে চান।
‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এসব নারীর দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কাজের সুযোগ করে দেওয়াই হবে আমাদের প্রথম দায়িত্ব। তাহলে তারা প্রত্যেকদিনের জীবিকা অর্জন করে দিনযাপন করতে পারবেন এবং তাদের একটা সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ তৈরি হবে’, যোগ করেন তিনি।
কালের আলো/ডিএসবি/এমএম