সিনহার বই প্রকাশের পেছনে কারা উন্মোচন করুন : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 9:07 am | September 29, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার আত্মজীবনী প্রকাশের পেছনে কারা রয়েছে তা খুঁজে বের করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই বই প্রকাশনায় কারা অর্থ দিয়েছে এবং আপনাদের মতো কোনো সংবাদপত্রের সাংবাদিক এর সঙ্গে জড়িত কিনা এবং কি পরিমাণ অর্থ দিয়েছে তা অনুগ্রহ করে উন্মোচন করুন।’
তবে তিনি এ ব্যপারে জানান বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে জানি, কিন্তু আমি আপনাদের বলবো না। বরং আমি আপনাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে জানতে চাই এবং আমি চাই এই বই প্রকাশের পেছনে কারা রয়েছে তা আপনারা খুঁজে বের করবেন।’
নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে তাঁর অংশগ্রহণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিচারপতি সিনহার একটি আত্মজীবনী সম্প্রতি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এতে সাবেক প্রধান বিচারপতি তাঁর পদত্যাগের বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেছেন।‘এ ব্রোকেন ড্রিম : রুল অব ল’, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক এই বইয়ের কপিরাইট হচ্ছে ললিতমোহন- ধনাবাতি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের নামে।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে এই বইয়ের প্রকাশনা উৎসবের কথা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি কতবার বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে আনা হয় তা সাংবাদিকদের খুঁজে বের করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো বড় আইনজীবী এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি সংশোধন করে দিয়েছেন কিনা অথবা কোনো সংবাদপত্র অথবা এর মালিক এর পৃষ্ঠপোষক কিনা তা আপনারা খুঁজে বের করুন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ সময় মঞ্চে ছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ-বিন-মোমেন সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সিনহার ভাইয়ের নামে একটি বাড়ি ক্রয়-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে বাড়ি কেনা কঠিন কিছু নয়। তিনি বলেন, বিপুল দামের কারণে বাংলাদেশে কেনা কঠিন। অর্থ জমা করলে যুক্তরাষ্ট্রে যে কোনো ব্যক্তি বাড়ি কিনতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কে এবং কীভাবে এই বাড়ি ক্রয় করেছে সে ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আপনারা খুঁজে বের করুন এবং তথ্য দিন। যদি কোনো ব্যক্তি এ ব্যাপারে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘
নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী সাধারণ নির্বাচনের সময় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা হতে পারে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিরোধী দলীয় নেত্রীর (রওশন এরশাদ) সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। তারা যদি চান আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল রাজনৈতিক দল যদি চায় তাহলে আমরা তাদের প্রতিনিধি নিয়ে সরকার গঠন করতে পারি। তারা ক্ষমতাসীন অথবা বিরোধী দল কিনা সেটা কোনো বিষয় না। তবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে এখানে কোনো সংজ্ঞা নেই।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধ এখন একটি আলোচ্য বিষয়। সকল দেশ এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে এই আইন প্রণয়ন করেছি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পর সাইবার অপরাধ এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
সাংবাদিকদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা সবসময় আইনের শুধু একদিক দেখেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদেও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবাই এ ব্যাপারে সংকিত। কারণ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমকে সাইবারের মাধ্যমে উসকে দেওয়া হয়।’ শিশু থেকে তরুণ পর্যন্ত সবাই যখন ভুল পথে চলে যাচ্ছে অথবা মানসিক ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলছে, তখন বিভিন্ন সামাজিক ও ডিজিটাল মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য কিনা প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, যদি কোনো সাংবাদিক সুষ্ঠু সাংবাদিকতার চর্চা করেন তাহলে তিনি কেন শংকিত হবেন?
কালের আলো/এমএইচ