উন্নয়ন-সম্পর্কের স্মারক প্রধানমন্ত্রীর ‘আম-দূতালি’!

প্রকাশিতঃ 8:58 pm | July 06, 2021

উন্নয়ন-সম্পর্কের স্মারক প্রধানমন্ত্রীর ‘আম-দূতালি’!

জ্যেষ্ঠ সংবাদদাতা, কালের আলো :

বর্তমান সময় কিংবা রাজা-বাদশাদের আমল—গ্রীস্মের রসালো ফল আমকে ঘিরে ‘কূটনীতি’ নতুন নয়। সেই কূটনীতি অনুসরণ করেই যেন বন্ধু রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকারপ্রধানদের আম উপহার পাঠালো বাংলাদেশ।

এরই মধ্যে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে রসালো এ ফল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ উপহার পাঠানো হয়েছে প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ উপহারে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়ন ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

জানা যায়, প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমের মৌসুমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের আম উপহার দেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে আম উপহার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভারতের শীর্ষ নেতাদের জন্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ২ হাজার ৬শ কেজি আম পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আম ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আম পেয়েছেন প্রতিবেশী দেশের শীর্ষ নেতারাও।

ভুটানের রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক, প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আম উপহার পাঠানো হয়েছে।

রাষ্ট্রপ্রতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদার বাইরেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে আম উপহার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ও পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাকেও আম পাঠানো হয়েছে।

কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঐতিহাসিক। প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার এ সম্পর্কেরই স্মারক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবেশী দেশ ছাড়াও সুদূর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের জন্যও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আম উপহার পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, বাহারাইন, জর্ডান, কুয়েত।

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের আমের মধ্যে রয়েছে প্রধানত হাড়িভাঙা আম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি রংপুর এর বিখ্যাত আম হাড়িভাঙা, যা অত্যন্ত সুস্বাদু।

নাম প্রকাশে সরকারের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, হাড়িভাঙা আমই বেশির ভাগ শীর্ষ নেতাদের পাঠানো হচ্ছে। তবে এর বাইরে হিমসাগর, ফজলি ও ল্যাংড়া আমও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের তালিকায় রয়েছে।

সেই মুঘল আমলে বাবর থেকে শাহাজাহান-প্রায় সব মুঘল শাসকেরা ছিলেন আম-রসিক। সম্রাট বাবর নিজে আম খেতে পছন্দ করতেন। যার কদর কমেনি হাল-আমলেও।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রতি মৌসুমে রাজসভায় আগত বিদেশি অতিথি ও অন্যান্য বাদশাদেরও নিয়ম করে আম উপহার পাঠানো হতো। আর সম্রাট বাবর-এর থেকে যেন একধাপ এগিয়ে আকবর; তিনি বিহারের দ্বারভাঙ্গার কাছে লাখিবাগে প্রায় লক্ষাধিক আম গাছের চারা পুঁতে দিয়েছিলেন।

যদিও বাদশাহদের জন্য নির্দিষ্ট থাকা সংরক্ষিত সেই সব আম বাগানের আম চেখে দেখার অনুমতি ছিল না আম-জনতার। আইন-ই-আকবরি’র বিস্তারিত বর্ণনায় রয়েছে, এ দেশের বিভিন্ন প্রজাতির আমের স্বাদ ও কোন মাটিতে কোন আম ভালো হয় তা নিয়েও। শাহজাহান এতটাই আম ভক্ত ছিলেন যে, তাঁর সামনে আম গাছ পুঁততে হত মালীদের।

ইতিহাস পাঠে জানা যায়, দাক্ষিণ্যাতের একটি বিশেষ প্রজাতির আম শাহজাহান এতটাই পছন্দ করতেন, দাক্ষিণাত্যের দায়িত্বে থাকা তাঁর এক পুত্র সেই আম দিল্লিতে না পাঠিয়ে নিজে খেয়ে নেওয়ায় তার উপর প্রচণ্ড রেগে যান তিনি।

জানা যায়, বিশ্বে আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ ১০-এ। আর জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এছাড়াও রাজশাহীতে বিপুল আমের চাষ হয়। এসব জেলায় উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির আমের রয়েছে জগৎ জোড়া নাম।

যোগাযোগ করা হলে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের আম উপহার পাঠানোর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বালাদেশ খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু আম উৎপাদিত হয়। এসব সুস্বাদু আম আমাদের প্রতিবেশী ও বন্ধু দেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশ্বনেতাদের এই আম উপহার পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম