আইন নীতিমালা থাকলেও উপেক্ষিত দেশের বর্ষীয়ান নাগরিকগণ
প্রকাশিতঃ 3:43 pm | October 01, 2018
অ্যাড. মতিউর রহমান ফয়সাল:
আজ বিশ্ব প্রবীণ দিবস। এ দেশে শিশু আর প্রবীণরা সবচেয়ে অবহেলিত ফেলনা। সংসারের মূল ব্যাক্তিই একসময় পরিণত হয় সংসারের আসবাবে।
২০১৩ সালে প্রণীত জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা যা ২০১৪ সালে পাস হয়ে গৃহীত হয়। যেখানে প্রবীণদের দেশের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে উল্লেখ্য করে জৈষ্ঠ্য নাগরিকের সম্মান দেয়া হয়েছে। এ নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। যদিও বাস্তবে কিছুই করা হয় নি। জৈষ্ঠ্য নাগরিকদের জন্য কি সুবিধা নিরাপত্তা স্বাধীনতা তা সম্পর্কে কিছুই করা হয়নি।
পরিবারের প্রবীণ নাগরিক তথা পিতা-মাতার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে আইন। যা পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন। পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন একটি জনকল্যাণকর আইন। বাংলায় প্রণীত এ আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, যেহেতু সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয় সেহেতু আইনটি প্রণয়ন করা হলো। অর্থাৎ কোনো সন্তান যদি কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে পিতা-মাতার ভরণপোষণ না করে তাহলে তারা ভরণপোষণের জন্য এ আইনের অধীনে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে তাদের অধিকার আদায় করতে পারবেন।
কে কাকে ভরণপোষণ করবে? আইনে ভরণপোষণ প্রদানে সন্তান বলতে শুধু পুত্রকেই বোঝায়নি বরং কন্যাকেও বুঝিয়েছে। অর্থাৎ পিতা- মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব শুধু ছেলের একার নয় বরং মেয়েকেও নিতে হবে। এর মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা আনা হয়েছে। আর ভরণপোষণ শুধু কোনো বিশেষ সন্তান নেবে তা নয় বরং সবাইকে নিতে হবে। তবে একাধিক সন্তান থাকলে তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ- আলোচনা করে তাদের পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে। কোনো সন্তান পিতা-মাতাকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধাশ্রম বা অন্য কোথাও একত্রে বা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। প্রত্যেক সন্তানকেই তাদের পিতা- মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে এবং চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হবে। পিতা-মাতা একত্রে বা আলাদা বসবাস করলে প্রত্যেক সন্তানকে সাধ্যমতো তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে।
কী পরিমাণ ভরণপোষণ দিতে হবে?
পিতা-মাতা যদি সন্তানের সঙ্গে বসবাস না করেন তবে তাদের প্রত্যেক সন্তান নিজ নিজ উপার্জন থেকে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে। পিতা-মাতা ছাড়া আর কাকে ভরণপোষণ দিতে হবে? আইনটি শুধু পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি। পিতা- মাতার অবর্তমানে দাদা-দাদি ও নানা-নানির ভরণপোষণ বিষয়েও জোর দিয়েছে। পিতার অবর্তমানে দাদা-দাদিকে এবং মাতার অবর্তমানে নানা-নানিকে পিতা- মাতার মতো ভরণপোষণ দিতে হবে।
অপরাধের শাস্তি কী?
আইনটি সন্তানদের বিভিন্ন দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি অপরাধ, দ- ও বিচারব্যবস্থা কেমন হবে সে বিষয়েও বিধান দিয়েছে। যেমন_ কেউ যদি এই বিধানাবলি লঙ্ঘন করে তবে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদ- হতে পারে। অনাদায়ে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদ- প্রদান করতে পারে আদালত।
লেখক: আইনজীবি, সংগঠক ও কলামিস্ট