‘সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু হবে না, এটা পদ্মা সেতুই হবে’

প্রকাশিতঃ 11:59 am | October 02, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু হবেনা, পদ্মা সেতুই হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পদ্মা সেতু বঙ্গবন্ধুকন্যা ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ নামে হবে জানান।

তবে সোমবার দলীয় বৈঠকে শেখ হাসিনা সাফ জানিয়েছেন, এটির নাম পদ্মা সেতুই থাকবে। তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেন, নাম কামানোর জন্য নয়।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে সোমবার সকালে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর গণভবনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে পদ্মা সেতুর নামকরণের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ সময় শেখ হাসিনা নিজের এই মনোভাবের কথা জানান।

ওই বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আনঅফিসিয়ালি তার মনোভাব জানিয়েছেন। আমাদের এক নেতা সকালে পদ্মা সেতু আপার নামে করার কথা বলেন।’

তিনি বলেন, এ সময় নেত্রী আমাদের বলেন— ‘আমি নাম চাই না। মানুষের কল্যাণে এই সেতু করছি। বিশ্বব্যাংক অর্থ বরাদ্দ বাতিল করেছে। তারপরেও আমি এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এই সেতুর নাম কোনোভাবেই আমার নামে হবে না’।

এ সময় সেখানে থাকা আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, পদ্মা সেতু করব বলছি, পদ্মা সেতুই হবে। কিন্তু, সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু হবে না। এটা পদ্মা সেতুই হবে।’

এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের সেতু প্রকল্প এলাকায় গিয়ে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর নামকরণ ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ নামকরণের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে লেখা হয়েছে এবং সেজন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে সামারি পাঠানো হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৫৯ শতাংশ ও মূল সেতুর অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। আগামী ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প এলাকায় এসে ৬০ শতাংশ কাজের উদ্বোধন করবেন।

উল্লেখ্য, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। এর আগে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে ২০০৭ সালে একনেকে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফা ব্যয় বাড়িয়ে সংশোধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

২০১২ সালের জুনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। যদিও দুদকের তদন্তে বাংলাদেশে বিরুদ্ধে এ অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

এরপর ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।

‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প’র মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। সংযোগ সেতু (ভায়াডাক্ট) ৩.১৮ কিলোমিটর। সেতুর প্রস্থ হবে ৭২ ফুট, এতে থাকবে চার লেনের সড়ক। সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার।

পদ্মা সেতুর মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং হবে ৬টি। মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৬৪টি। দ্বিতলবিশিষ্ট এই সেতুটি কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে। এর ডিজাইন করেছে নিউজল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি এইকম। ২০১৪ সালের ১৮ জুনে প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড। নদী শাসনের কাজ করছে চায়নিজ সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। সংযোগ সড়কসহ বাকি কাজ করছে দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানি।

পুরো প্রকল্পে প্রায় ৪ হাজার জনবল কাজ করছে। এর মধ্যে দেশীয় ৩ হাজার ও চীনের ৯০০। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে।

কালের আলো/এমএইচ