শেখ হাসিনা-সোলিহের উপস্থিতিতে নব দিগন্তের উন্মোচন করলেন জেনারেল শফিউদ্দিন-শামাল!

প্রকাশিতঃ 10:06 am | December 24, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

দুবাই এয়ার শো প্রদর্শনীর ফাঁকে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল তাদের। হৃদ্যতাপূর্ণ সেই সাক্ষাৎ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টুইট করেছিলেন মালদ্বীপের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স মেজর জেনারেল আবদুল্লাহ শামাল।

আরও পড়ুন: প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চায় মালদ্বীপ, বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের প্রতি কৃতজ্ঞতায় টুইট জেনারেল শামালের

লিখেছিলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে তিনি সম্মানিত।

গতবারের গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকটি ছিল সাইডলাইনে। মাস ঘুরতেই আবারো একত্রে মিলিত হয়েছেন তাঁরা। তবে এবারের সাক্ষাৎ পেয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে দু’দেশের দু’সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স মেজর জেনারেল আবদুল্লাহ শামাল উন্মোচন করলেন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত।

আরও পড়ুন: মালদ্বীপকে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ১৩ টি সামরিক যানের প্রতীকী চাবি তুলে দিলেন মালদ্বীপের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স মেজর জেনারেল আব্দুল্লাহ্ শামালের হাতে। এরই মধ্যে দিয়ে সামরিকভাবে অগ্রসরমান বাংলাদেশ বৈশ্বিক পরিমন্ডলেও নিজেদের স্বপ্নের পালে লাগিয়ে দিয়েছে নতুন হাওয়া। আরও সুদৃঢ় করেছে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ সেনাবাহিনীর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-মালদ্বীপের মধ্যে চার এমওইউ-চুক্তি সই

দু’দেশের দু’সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে আনন্দঘন এই মুহুর্তটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ দু’টির গভীর বন্ধুত্বেরই ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পর্যবেক্ষক মহল বলছে, দীর্ঘদিন যাবত দু’প্রতিবেশী বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক সঙ্কটে মালদ্বীপ পাশে পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশকে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবিসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশকেও মালদ্বীপ সমর্থন দিয়েছে আকুন্ঠচিত্তেই।

আরও পড়ুন: মালদ্বীপে প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিজের টানা প্রধানমন্ত্রীত্বের তিন মেয়াদে এবার দ্বিতীয়বারের মতো মালদ্বীপ সফর করছেন। প্রথমবার সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি মালদ্বীপে গেলেও গত বুধবার (২২ ডিসেম্বর) প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে এই দ্বীপরাষ্ট্রের উদ্দ্যেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন।

আর চলতি বছরের মার্চ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহ।

আরও পড়ুন: মালদ্বীপে শেখ হাসিনাকে লালগালিচা সংবর্ধনা

স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালকে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ‘যুগান্তকারী বছর’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এবারের সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে প্রেসিডেন্ট সলিহর দফতরে পৌঁছলে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।

পরে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন এবং বৈঠক শেষে তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্বৈত কর পরিহার এবং যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত এবং একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম সলিহ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ উন্নয়নের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সলিহের সঙ্গে তার বিশদ আলোচনা হয়েছে। এই বৈঠক অত্যন্ত ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে। সেখানে দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

পক্ষান্তরে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সলিহ বলেন, দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সফর বিনিময়ের মধ্য দিয়ে এ বছর বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

এরপর দু’নেতার উপস্থিতিতে নিজেদের মধ্যকার ‘বন্ধুত্বের প্রতীক’ হিসেবে মালদ্বীপকে ১৩ টি সামরিক যান উপহার দেয় বাংলাদেশ। মালদ্বীপের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স মেজর জেনারেল আব্দুল্লাহ্ শামালের হাতে ১৩টি সামরিক যানের চাবি প্রতীকী হস্তান্তর করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

এর মাধ্যমে দু’দেশ তথা সেনাবাহিনীর সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককেও উন্নীত করেছে নতুন মাত্রায়-মত সামরিক পর্যবেক্ষকদের।

এর আগে গত রোববার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালদ্বীপ সফরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা দপ্তরকে ১৩টি সামরিক যান উপহার দেওয়া হবে।

মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা দপ্তরের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৩টি সামরিক যান বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা দপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

কালের আলো/এমএএএমকে